বাইকেই ক্লাসরুমের সরঞ্জাম : গরীব শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেই পৌঁছে যাচ্ছেন ছত্তিশগড়ের ‘রুদ্র স্যার’
লকডাউন শুরু হবার পর থেকে সারা দেশের সমস্ত স্কুল বন্ধ। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনেক জায়গায় অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও দেশের অর্ধেকেরও বেশি পড়ুয়ার পক্ষে এইভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কার্যত সম্ভব নয়। স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার তো দূরের কথ, সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধাটুকুও পায় না দেশের অধিকাংশ ছাত্র; আর বলাই বাহুল্য, তাদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস করার চিন্তা করাটাও বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা পরিবারের শিশুরা এটুকু সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।
আরও পড়ুন : প্ল্যাটফর্ম স্কুল
এই ধরনের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবেই এগিয়ে এসেছেন ছত্তিশগড়ের রুদ্র রানা - ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় ‘রুদ্র স্যার’। রুদ্রবাবু এখন ছত্তিশগড়ের বেশ কয়েকটা গ্রামের গরিব পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সহায়। পেশায় তিনি শিক্ষক। লকডাউনের সময়ে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যখন এইসব গরিব ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও স্থগিত হয়ে গেছে, তখন রুদ্রবাবু তাঁর বাইকটিকেই করে তুলেছেন ভ্রাম্যমাণ ক্লাসরুম। বাইকে বোর্ড, চক, বইপত্র ইত্যাদি লেখাপড়ার সরঞ্জাম নিয়ে রোজ তিনি পৌঁছে যান আশেপাশের কোনও না কোনও গ্রামে। তারপর সেই গ্রামের বাচ্চাদের জড়ো করে শুরু হয় তাঁর পড়ানো। বাইকেই বোর্ড বেঁধে নিয়ে তাতে লিখে পড়া বোঝান। কোনওদিন অংক, কোনোদিন ভূগোল, কোনোদিন ইতিহাস, আবার কোনোদিন সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি- সবই থাকে তাঁর সিলেবাসে। প্রয়োজনে ছেলেমেয়েদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাগ্রহণের সরঞ্জামও তিনি অল্পবিস্তর সরবরাহ করেছেন। এই অসময়ে দুঃস্থ পরিবারের ছাত্রদের কাছে এভাবেই পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষার আলো। সেই লক্ষ্যে প্রত্যেকদিন ছুটে চলেছেন তিনি, সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম - বইখাতা, বোর্ড, চক নিয়ে প্রতিদিন পৌঁছে যান রুদ্র স্যার। এইভাবে একদিনে প্রায় তিনটে থেকে চারটে ক্লাস নেন তিনি। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব যেন ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়। তিনি নিজেই তাঁর এই ক্লাসের নাম দিয়েছেন 'মহল্লা ক্লাস'। গ্রামের খুদে পড়ুয়ারাও এখন প্রত্যেকদিন অপেক্ষা করে থাকে তাদের রুদ্রস্যারের বাইকের আওয়াজের জন্য।