সুন্দরকে লেখা চিঠি
............................
সমুদ্রের পাড়ে বসে দূরাগত ঢেউয়ের ধ্বনি কান পেতে শুনি, ওদের বুকে কত কান্না জমে আছে... কী বিপুল বিক্ষোভে একের পর এক ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে কিনারে, অথচ কেউ বাঙ্ময় হয়ে প্রকাশ করতে পারছে না নিজেকে। এই পূর্ণিমার আলোয় সমুদ্র আজ উথালপাথাল সুন্দর, ভরা জোয়ার এসেছে আজ। ঈশান কোণে জমে উঠেছে পুঞ্জ পুঞ্জ কালো মেঘ। ফটিক জলের মতো স্বচ্ছ মেঘেরা চাঁদের গা বেয়ে ভেসে ভেসে উড়ে যাচ্ছে আকাশের বুক চিরে... আর এক অর্ধোন্মাদ কবি তার পরম প্রেয়কে চিঠি লিখে চলেছে, চাঁদের ছায়ায় বসে আপনমনে। সমুদ্র থেকে তোমার জন্য ঝিনুক কুড়িয়ে আমি নিয়ে যাব না, বরং এই রাতের জ্যোৎস্না কতখানি জমা হলে তোমার মুখ ধোবার মতো একটি কলস পূর্ণ হতে পারে বলতে পারো? কিংবা সাগরপাড়ের আকাশের তারাদের মালা গেঁথে যদি তোমায় উপহার দিতে চাই? এই অশান্ত ঢেউয়ের গর্জন আমার সব হিসেব গুলিয়ে দিচ্ছে বারবার। প্রক্ষিপ্ত বেদনার আহত কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি প্রতিনিয়ত, প্রতিনিয়ত অনুরণিত হচ্ছে আমার কানের কাছে। ঢেউ ভেঙে ভেঙে যে সাদা ফেনা তৈরি হয়, সে শুভ্রতায় তোমার পা ধুইয়ে দেবো সুন্দর, এক সমুদ্র বেদনার কাছে এসে আমাদের সমস্ত গ্লানি মুছে যাবে। আমাদের অজস্র অহেতুক বাড়তি কথা, আমাদের অজস্র না বলতে পারা কথারা এই সাগরতীরে এসে প্রাণ পাক, এই নোনা হাওয়ায়, জলের গন্ধে ফুটে উঠুক কবিতারা... আমার চির অচেনা সুন্দর, তুমি এই সমুদ্রের মতো যেটুকু উপল তুলে দিয়েছ আমার হাতে, যেটুকু শামুক ঝিনুক, সেটুকুকে হাতে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট থাকতে পারিনি কোনোকালে। মাথা ঝুঁকিয়ে ঝিনুক কুড়োনোর থেকে আমার যে আকাশের তারাদের গেঁথে মালা বানানোর শৌখিনতা ভীষণ প্রবল। মেঘ জমিয়ে ঘর বানাবো আমি, জ্যোৎস্না জমিয়ে পুকুর, তারাদের মালা ঝুলবে আমাদের ঘর দালানে... আর সেই মায়ার সংসারে তুমি রাজা আমি রানী, সেই আমাদের রাজ্যপাট। কালপুরুষ আমাদের প্রহরী হবে বেশ... আহা... বড় অলীক কল্পনা হয়ে যাচ্ছে বুঝি? আচ্ছা তবে থাক, এই সমুদ্রে একদিন তোমায় সঙ্গে নিয়ে আসব সুন্দর, সেইদিন দেখাবো তোমায়, এ কেবল আমার কল্পনা নয়, ভালোবাসলে সমস্ত জগতকে নিজের সংসার বলে মনে হয় আর প্রিয়তমকে তার অধীশ্বর।
................................................
[চিত্র ঋণ : David Cox]
#গদ্য #মুক্তগদ্য #বাংলা গদ্য #বিপাশা ভট্টাচার্য #David Cox #সিলি পয়েন্ট