ব্যক্তিত্ব

লস্ট ভয়েস গাই : একজন বোবা স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানের বিশ্বজয়ের গল্প

টিম সিলি পয়েন্ট Feb 23, 2021 at 6:53 am ব্যক্তিত্ব

প্রেক্ষাগৃহ ঠাসা দর্শক। মঞ্চে কৌতুকাভিনয় চলছে, অনুষ্ঠান শেষে প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ল হাততালিতে - এই পর্যন্ত দৃশ্যটা খুব পরিচিত। কিন্তু যিনি কৌতুকাভিনেতা, তিনি কথাই বলতে পারেন না। অর্থাৎ, একজন মূক শিল্পী তাঁর কৌতুকাভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করছেন। এই দৃশ্যটার কল্পনা কষ্টসাপেক্ষ হলেও ঘটনাটা নির্জলা বাস্তব। এমন ঘটনাই ঘটিয়েছেন লী রাইডলি, স্ট্যান্ড-আপ কমেডির জগতে যিনি 'লস্ট ভয়েস গাই' নামে পরিচিত।

গ্রেট ব্রিটেনের বাসিন্দা লী রাইডলি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্মালেও মাত্র ছয় মাস বয়সে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হন। এই অসুখে তাঁর জীবনসংশয় পর্যন্ত হয়। পরিবারের অক্লান্ত শুশ্রূষায় লী প্রাণে বাঁচলেও সারা জীবনের মতো কথা বলার ক্ষমতা হারান তিনি। এছাড়াও দেহের ডান অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ওপর আবার তিনি কিশোর বয়সে মৃগীরোগে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কের সংক্রমণ নিয়ে দু' সপ্তাহ কোমায় ছিলেন, ডাক্তাররাও জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু এবারেও সকলকে অবাক করে লী সুস্থ হয়ে ওঠেন। এইসব প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই লী-র বড়ো হয়ে ওঠা। 

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা লী শেষ করেছেন প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট স্কুলে। কথা বলতে না পারার জন্য ছোটোবেলায় তাঁর বিশেষ বন্ধু ছিলো না। মাত্র দু'-তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, আর তাদের অনুপ্রেরণাতেই লী কৌতুকাভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তবে লী-র ভাষা তাঁর বন্ধুরা আর পরিবারের লোকজনরা বুঝতে পারলেও অন্য লোকের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে লী-র অস্ত্র হল দুটি অ্যাপ, প্রোলকুয়ো টু গো ( Proloquo2 Go) এবং প্রোলকুয়ো ফোর টেক্সট (Proloquo4 Text)। এই অ্যাপগুলি বিভিন্ন লেখা ও প্রতীককে শব্দে রূপান্তরিত করতে পারে। বাকপ্রতিবন্ধী মানুষদের সাহায্যার্থেই এই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ ছিলো। লী তাঁর হাস্যকৌতুক এই অ্যাপে রেকর্ড করে রাখেন এবং একটি ভয়েস সিন্থেসাইজারের মাধ্যমে সেই রেকর্ড করা কৌতুক জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন। প্রাত্যহিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও তিনি এই অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন।

এতরকম ব্যবস্থা সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষের মন জয় করার পথটা সহজ ছিলো না। বন্ধুদের চেষ্টা আর সহায়তাতেই লী টেলিভিশনের জনপ্রিয় শো 'ব্রিটেন গট ট্যালেন্ট'-এ নিজের নাম নথিভুক্ত করান। পূর্বোক্ত দুটি অ্যাপের মাধ্যমে লী এই প্রতিযোগিতায় এগোতে থাকেন এবং শেষপর্যন্ত জয়ী হন। একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে এই শো জিতে লী ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এরপরেই তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠেন 'দ্য লস্ট ভয়েস গাই' নামে। এইভাবে জনপ্রিয় হওয়ার পর তিনি স্ট্যান্ড-আপ কমেডিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রস্তুতি হিসেবে 'ব্রিটেন গট ট্যালেন্ট'-এর পুরস্কারমূল্য দিয়ে তাঁর ব্যবহারের অ্যাপগুলোর নতুন সংস্ককরণ কেনেন যা ব্যবহার করা সুবিধাজনক এবং যার আওয়াজ একজন কৌতুকাভিনেতার পক্ষে মানানসই।

আরও পড়ুন : রাচেল কারসন : পরিবেশ-আন্দোলনের জননী 

'ব্রিটেন গট ট্যালেন্ট'-এর শিরোপা জয়ের পর বিভিন্ন জায়গায় লী কৌতুকাভিনয় শুরু করেন। বিবিসিতেও তিনি নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন। বিবিসি রেডিও টাইমসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্মানজনক অনুষ্ঠান 'রেডিও ফর কমেডি এবিলিটি'তে তিনি টানা দুই সপ্তাহ শো করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগের অনুষ্ঠানেও লী অংশগ্রহণ করে থাকেন। যে প্রতিবন্ধকতার লী-র জীবনকে থামিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেই প্রতিবন্ধকতাকে হাতিয়ার করেই লী এগিয়ে চলেছেন সাফল্যের পথে। এমন জীবন আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। 

......................................            

[ঋণ : https://lostvoiceguy.com] 

#Lee Ridley #stand-up comedian #Lost Voice Guy #Comedy #ফিচার #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

11

Unique Visitors

216311