মানুষের রক্তে পাওয়া গেল মাইক্রোপ্লাস্টিক : বিপদ দেখছেন বিজ্ঞানীরা
বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা অনেক আগেই করেছিলেন। এবার তা সত্যি প্রমাণিত হল। মানুষের রক্তে পাওয়া গেল মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। নেদারল্যান্ডসের ভ্রিজ ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের ইকোটক্সিকোলজিস্ট অধ্যাপক ডিক ভেথাকের নেতৃত্বাধীন এই গবেষণাটি এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সারা পৃথিবী জুড়ে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার দূষণ আজ ভয়াবহ মাত্রা ধারণ করেছে। মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে মহাসাগরের গভীর তলদেশ - সর্বত্রই পৌঁছে গেছে এই প্লাস্টিক। মোটামুটি ১৯৫০ সাল থেকে আজ অবধি প্রায় ৭০ মিলিয়ন টন মাইক্রোপ্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলা হয়েছে। খাবার, জল ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে অহরহ এই বিষাক্ত কণা গ্রহণ করছে মানুষ। এর আগেই ২০২১ সালে মানুষের মলে এই কণার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গিয়েছিল শিশুদের মলে। দেখা গেছিল, যেসব শিশুদের প্লাস্টিকের বোতলে খাওয়ানো হয় তাদের দেহে প্রতিদিনই কয়েক লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রবেশ করছে। গর্ভবতী নারীর প্ল্যাসেন্টাতেও এই কণা পাওয়া গেছিল। এবার মানুষের রক্তেও পাওয়া গেল মাইক্রোপ্লাস্টিক। বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলে মারাত্মক বিপদসংকেত দেখছেন।
আরও পড়ুন : মাস্ক বিভ্রাট : অতিমারি-ঘটিত বিপুল বর্জ্য বাড়াচ্ছে বিপদ
২২ জন অজ্ঞাত রক্তদাতার নমুনা পর্যালোচনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্বাস্থ্যের অধিকার। এদের মধ্যে ১৭ জনের দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এগুলো শরীরে দ্রবীভূত হয় না, ঘুরে বেড়ায় পুরো দেহে। কোনও এক পর্যায়ে গিয়ে জমা হতে পারে কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। এর মধ্যে থাকা কোন কোন রাসায়নিক মানবশরীরে আমৃত্যু থেকে যেতে পারে বলে শরীরে ডেকে আনতে পারে নানা জটিল দুরারোগ্য ব্যাধি। প্রায় এক বছর আগে, ভ্লাদিমির বাউলিন এবং জঁ ব্যাপটিস্ট ফ্লিউরি-র মিলিতি গবেষণায় দেখা গেছিল যে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের লোহিত রক্তকণিকার কোশপর্দাকে অকেজো করে দিতে সক্ষম। এর ফলে ব্যহত হতে পারে তাদের অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা। বিশেষজ্ঞদের সংগ্রহ করা অর্ধেক নমুনায় পি.ই.টি প্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যা সাধারণত পানীয়ের বোতলগুলোতে ব্যবহৃত হয়। এক-তৃতীয়াংশের নমুনায় পলিস্টাইরিন পাওয়া গেছে, যা খাবার ও অন্যান্য পণ্য প্যাকেজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এক চতুর্থাংশ রক্তের নমুনায় পলিথিন টেরেফথালেট শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও পাওয়া গেছে পলিমিথাইল মেথাক্রাইলেট ও পলিথাইলিন। এই নতুন তথ্য প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ টানতে মানুষকে সচেতন করতে পারবে কি?
তথ্যসূত্র :
১) Microplastics destabilize lipid membranes by mechanical stretching, 2021, PNAS
২) Discovery and quantification of plastic particle pollution in human blood, 2022, Environmental International
#সিলি পয়েন্ট #বিজ্ঞান #মাইক্রোপ্লাস্টিক #বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি #microplastic #plastic pollution #pollution #silly point #science #environment