মাস্ক বিভ্রাট : অতিমারি-ঘটিত বিপুল বর্জ্য বাড়াচ্ছে বিপদ
কোভিড অতিমারিতে মাস্ক, গ্লাভস, সারজিকাল ক্যাপ, ফেসশিল্ড ইত্যাদি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে। বিশেষত মাস্ক ছাড়া জীবন এখন কার্যত অচল। করোনা ভাইরাস রুখতে পৃথিবীজুড়ে মূলত তিন ধরনের মাস্ক ব্যবহৃত হচ্ছে। সারজিকাল, এন ৯৫ ও কাপড়ের মাস্ক। প্রথম দু ধরনের মাস্কই সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কোভিডের হাত থেকে বাঁচার এই রক্ষাকবচগুলোই ভবিষ্যতের জন্য ডেকে আনছে ভয়াবহ বিপদ। সারজিকাল মাস্ক, এন ৯৫ মাস্ক, সারজিকাল ক্যাপ, সারজিকাল গ্লাভস এই সবকিছুই তৈরি হয় নন-ওভেন পলিপ্রোফেলিন ফাইবার দিয়ে। ফলে এগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। সারজিকাল মাস্ক বা গ্লাভস মাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য। ব্যবহারের পর আমরা এগুলো ঠিকঠাক জায়গায় ফেলছি না। ব্যবহৃত মাস্ক ফেলতে কোনও নিয়মবিধির ধার ধারেন না কেউই। যত্রতত্র যথেচ্ছভাবে মাস্ক ফেলার ফলে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, তার কুফল আমরা টের পেতে শুরু করব শিগগিরি।
ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যদি প্রত্যেকে প্রতিদিন একটি করে একবার-ব্যবহারযোগ্য মাস পরেন তাহলে এক বছরে ১২৪০০০ টন অনবীকরণযোগ্য প্লাস্টিক উৎপন্ন হবে। এছাড়াও উৎপন্ন হবে ৫৭০০০ টন প্লাস্টিক মোড়ক। বিপুল প্লাস্টিক বর্জ্য বা মেডিকেল বর্জ্যের সঠিক বন্দোবস্ত করতে এমনিতেই হিমসিম খেতে হয়। তার ওপর গত প্রায় দু বছর ধরে এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিমারি-ঘটিত বর্জ্য। একটি সাধারণ প্লাস্টিক মোড়ক বা ক্যারিব্যাগ যা যা ক্ষতি করতে পারে এই ধরনের একটি মাস্কও সেই ক্ষতি তো করবেই, উপরন্তু মাস্ক থেকে নানা বিষাক্ত কেমিকাল মাটি বা জলে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে যেখান মাস্ক জমা হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ছাড়াও খুঁজে পেয়েছেন সীসা, ক্যাডমিয়াম, অ্যান্টিমনির মতো পদার্থের চিহ্ন। সারা পৃথিবীর চোখ যখন অতিমারির দিকে, তখন এই অতিমারিঘটিত বর্জ্য প্রায় নিঃশব্দে মাটি, নিকাশী ব্যবস্থা, জলাশয়, নদী, সমুদ্রে ভয়াবহ দূষণ ঘটাচ্ছে। জীবকূলের জন্য ডেকে আনছে বিনাশ।
আরও পড়ুন : প্রয়াত 'একালের ডারউইন' : স্মরণে প্রকৃতিবিদ এডওয়ার্ড উইলসন
কোভিড পরিস্থিতি আরও কত বছর থাকবে সেটা এখনও আমাদের জানা নেই। হয়তো এই ভাইরাসকে 'পাশবালিশ' করেই টিকে থাকতে হবে আমাদের। সেজন্য মাস্ক উৎপাদনে পরিবিরতন আনতেই হবে। এমন প্রযুক্তি ও উপাদান খুঁজে বের করতে হবে যা দিয়ে পরিবেশবান্ধব মাস্ক তৈরি করা যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক তন্তু (যেমন ক্যাকটাস, কলা, অ্যাভোকাডো, পদ্ম, আখ ইত্যাদি উদ্ভিদের উপযুক্ত অংশ) দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মাস্ক তৈরির প্রচেষ্টা করা যেতে পারে। ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া মাস্ককে কীভাবে ঝুঁকিহীনভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করতে হবে। মাস্কে থাকা থার্মোপ্লাস্টিককে অন্যভাবে অন্য বস্তুতে ব্যবহার করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যত্রতত্র মাস্ক ফেলা বিষয়ে সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকেও।
.....................
#Mask Pollution #Covid 19 #Pandemic #Surgical Mask #Non Biodegradable #দূষণ #পরিবেশ #টিম সিলি পয়েন্ট