বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় পৃথিবীর ‘প্রাচীনতম’ ফুলের গাছ টাইটান আরুম
ফুল ভালোবাসেন না, এমন মানুষ বিরল। আর প্রকৃতিও আমাদের জন্য বিচিত্র বর্ণ-গন্ধের ফুলের সম্ভার সাজিয়েই রেখেছে। সারা বছর ধরে সারা বিশ্বে অসংখ্য প্রজাতির ফুল ফোটে। পৃথিবীর প্রাচীনতম ফুলের গাছ কোনটি সে বিষয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তবে অনেকেই যাকে পৃথিবীর আদিমতম ফুলগাছ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তার নাম টাইটান আরুম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে আজ এই গাছ বিপন্ন।
প্রাচীনকালে এই ফুল পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ি জঙ্গলে ফুটত, বর্তমানে প্রাকৃতিক নিয়মে এই ফুল আর ফোটে না। সময়ের পরিবর্তনে বনজঙ্গল এবং উপযুক্ত পরিবেশ হ্রাস পাওয়ায় এখন এই ফুলের ঠিকানা বিভিন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণশালা। বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটা বোটানিক্যাল গার্ডেনে এখন এই ফুল দেখা যায়।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রা দ্বীপ এই ফুলের আদি বাসভূমি বলে উল্লেখ করেছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। সুমাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ ফুট থেকে ১২০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফুল জন্মাতে দেখা যায়। ইতালীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানী ওদোয়ার্দো বেকারি দীর্ঘদিন সুমাত্রা অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানোর পর এই ফুলের সন্ধান পান। রং, গন্ধ, আকৃতি সবদিক থেকেই এই টাইটান আরুম অন্যরকম। যে কোনও ফুল সাধারণত কমবেশি তিন-চার ইঞ্চি মাপের হয়। এই টাইটান আরুম ফুল লম্বায় হয় ৮ ফুট থেকে ১০ ফুট। ওজনের দিক থেকেও নগণ্য নয় এই ফুল, ৫০ কিলোগ্রাম থেকে ৯০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে একেকটি ফুলের ওজন। স্ত্রী-পুরুষ ভেদে আলাদা হয় ফুলের রং। পুরুষ ফুল হালকা ক্রিম রংয়ের হয়, আর স্ত্রী ফুলের রং হয় গোলাপি, কমলা অথবা বেগুনি। ফুলের গন্ধ বেশ তীব্র। তবে এই গন্ধ কিন্তু সুগন্ধ নয়। সম্ভবত এই গন্ধের কারণেই টাইটান আরুমের স্থানীয় নাম 'বুঙ্গা বাংকাই'। স্থানীয় ভাষায় 'বুঙ্গা' শব্দের অর্থ ফুল আর 'বাংকাই' শব্দের অর্থ শবদেহ। ফুলের গন্ধে মাছি মৌমাছিরা ভিড় করলেও মানুষের নাকে এই গন্ধ পচা মাংসের মতো। এতটাই খারাপ গন্ধ যে কেউ বেশিক্ষণ এই ফুলের কাছে থাকতে পারে না। অবশ্য প্রজাতি বিশেষে কোনও কোনও ফুলের গন্ধ পাকা কলার মতো বা কচি গাজরের মতো হয়।
আরও পড়ুন : কৃষিবিদ্যাই তাঁর দর্শনচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু : মাসানুবো ফুকোওকার আশ্চর্য জীবনবীক্ষা
টাইটান আরুম গাছও সাধারণ ফুলগাছের চেয়ে বেশ আলাদা। এই গাছের জীবৎকাল প্রায় ৪৫ বছর। একটি গাছে ফুল আসে মাত্র চার থেকে পাঁচবার। গাছ পরিণত হবার মোটামুটি পাঁচ বছরের মাথায় প্রথম ফুল আসে। কুঁড়ি ধরার পর ফুলটি পুরোবিকশিত হতে কয়েক মাস সময় লাগে। তবে ফুলের আয়ু ক্ষণস্থায়ী। অনেক বছরের অপেক্ষার পর ফুল এসে পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার এক-দু দিনের মধ্যেই ফুল ঝরে যায়।
বিস্ময়কর এই ফুল এখন আর প্রকৃতির নিয়মে ফোটে না। বিশেষত, সুমাত্রা অঞ্চলে যথেচ্ছভাবে অরণ্য ধ্বংসের কারণে এর প্রাকৃতিক উৎস এখন নিশ্চিহ্ন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট এই ফুলকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাই একে টিকিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিমভাবে চাষ করা ছাড়া উপায় নেই। বিশ্বের নানা প্রান্তের কয়েকটি বিখ্যাত উদ্ভিদ-উদ্যানে কৃত্রিম প্রজননের সাহায্যে টাইটান আরুম ফোটানো হয়। জাপানের জিনদাই বোটানিক্যাল গার্ডেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের লুই রিসিয়ার্ডিলোর একটি বাগানে, সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ও আরও কয়েকটি জায়গায় এই ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ফুলটি ফুটেছে ২০১০ সালে রিসিয়ার্ডিলোর বাগানে।
#Titan arum #Flower Plant #Amorphophallus titanum #carrion flower #corpse flower #বিপন্ন প্রজাতি #জলবায়ু পরিবর্তন #Climate Change #Nature #Environment #পরিবেশ #টিম সিলি পয়েন্ট