উপন্যাস

টেরাকোটা টালমাটাল (তৃতীয় পর্ব)

প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় May 15, 2022 at 3:15 am উপন্যাস

তৃতীয় পর্ব

....................................

মন্দিরের সামনে যে চমকটা অপেক্ষা করছিল তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। এমনকি ফেলুদাও নয়। মন্দিরের সামনের ঘাসজমিতে অস্থিরভাবে পায়চারি করছিলেন হিতেন সান্যাল। আমাদের দেখে ভদ্রলোক হাঁ হয়ে গেলেন।

‘কী ব্যাপার মিস্টার মিটার! আপনারা এখানে? আপনারা এ মন্দির চেনেন?’

ফেলুদা হিতেনবাবুর প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গিয়ে উলটে ওঁকেই জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি মিস্টার ম্যাককালামকে এদিকে আসতে দেখেছেন?’

হিতেনবাবু সন্দিগ্ধ স্বরে বললেন, ‘কী ব্যাপার বলুন তো? আপনাদেরও উনি ডেকেছেন নাকি? কাল বেশ রাতের দিকে আমার বাড়িতে উনি ফোন করেছিলেন। বললেন আজ সকাল আটটার সময় মন্দিরের সামনে দাঁড়াতে, ভীষণ জরুরি দরকার। বুঝতেই পারছেন আমি কতটা অবাক হয়েছি, গতকালই মাত্র আলাপ হয়েছে। ফোন নম্বর-ও যে কোথা থেকে পেয়েছেন বললেন না।’ 

আমি জানি ডেভিড কোথা থেকে হিতেনবাবুর ফোন নম্বর পেয়েছেন। ফেলুদাই দিয়েছে। কিন্তু কেন?

‘হ্যাঁ, ওঁর সঙ্গে আমারও দেখা হওয়ার কথা ছিল উশ্রীর ধারে। কিন্তু একঘণ্টারও বেশি লেট, অথচ ওঁর দেখা নেই। ‘

‘কী জানি মশাই। কী কারণে আপনাকে ডেকেছেন কিছু জানেন?’

ফেলুদার দিক থেকে কোনও উত্তর না আসাতে ঘুরে দেখি ফেলুদা ভীষণভাবে ভুরু কুঁচকে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। এবার মুখ তুলে হিতেনবাবুকে বলল, ‘আপনি কটা থেকে এখানে অপেক্ষা করছেন?’

হিতেনবাবু একটু হকচকিয়ে গিয়ে বললেন, ‘আমি তো আটটা বাজার আগেই চলে এসেছি, ধরে নিন আটটা বাজতে দশ হবে।’

‘ডেভিডকে ছাড়া আর কাউকে আসতে বা যেতে দেখেছেন এদিক দিয়ে?’

‘কই না তো!’

হিতেনবাবুর উত্তর ভালো করে না শুনেই ফেলুদা তিরবেগে দৌড়োতে শুরু করেছে মন্দিরের দিকে। হিতেনবাবু ফ্যালফ্যাল করে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে। 

আমি দেখতে পেয়েছি কী হয়েছে। ভিজে মাটিতে ফুটে উঠেছে একজোড়া পায়ের ছাপ, আর সে ছাপ আমাদের কারও নয়। কারণ এই দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছি সে ছাপ পৌঁছেছে মন্দিরের দরজার সামনে অবধি।

ফেলুদার পেছনে পেছনে লালমোহনবাবুও দৌড়েছেন, তার পেছনে আমি।

ফেলুদা মন্দিরের দরজা খুলে ঢুকেই স্ট্যাচুর মতন দাঁড়িয়ে পড়েছে। ফেলুদার সামনেই ভেতরের দেওয়ালের দিকে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন ডেভিড ম্যাককালাম। 

‘খ-খুন!’ শিউরে ওঠা গলায় বললেন লালমোহনবাবু। খুন যে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই, কারণ মন্দিরের ভেতর আলো ভালো করে না ঢুকলেও বেশ দেখতে পাচ্ছি ডেভিডের ব্রহ্মতালু থেকে রক্তের ধারা বেরিয়ে এসে মন্দিরের মাটি ভিজিয়ে তুলেছে। 

‘কী সর্বনাশ!’ হিতেনবাবুর এতক্ষণে এসে ঢুকেছেন। এবং সব রক্ত সরে গিয়ে তাঁর মুখটা রীতিমতন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। 

লালমোহনবাবু সংবিৎ ফিরে পেয়ে বললেন, ‘হিতেনবাবু আসার আগেই কি ইনি খুন হয়েছেন?’

ফেলুদা একদৃষ্টিতে মন্দিরের ভেতরের দিকে তাকিয়ে, ‘খুব সম্ভবত তাই লালমোহনবাবু, এবং খুনি মন্দির থেকে বেরোয়নি।’

‘বলেন কী! খুনি এখনও মন্দিরের মধ্যেই লুকিয়ে?’ লালমোহনবাবুর গলা কাঁপছে।

ফেলুদা এবার হিতেনবাবুর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ‘মন্দিরের অন্য দরজাটা কোনদিকে হিতেনবাবু?’

হিতেনবাবু যেন আকাশ থেকে পড়লেন, ‘অন্য দরজা! কী বলছেন মিস্টার মিটার! আমি তো কিছুই বুঝছি না।’ 

ফেলুদার গলার স্বর ক্রমেই ধারালো হয়ে উঠছে, ‘অভিনয় রাখুন মিস্টার সান্যাল। যিনি এই পোড়ো, ধ্বসে যাওয়া মন্দিরকে জোড়বাংলা মন্দির বলে জানেন, তিনি নিশ্চয় এটাও জানেন যে জোড়বাংলা আসলে একটা মন্দির নয়, দুখানা লাগোয়া মন্দির। এবং সেই দুই মন্দিরের মধ্যে যাতায়াত করার জন্য আলাদা দরজাও থাকে। মনে রাখবেন এখন যা পরিস্থিতি তাতে পুলিশের সন্দেহ সবার আগে আপনার ওপরে গিয়েই পড়বে।’ 

জোঁকের মুখে যেন নুন পড়ল, হিতেন সান্যাল আর্তনাদ করে উঠলেন, ‘আমি নিরপরাধ প্রদোষবাবু। এ খুন আমি করিনি।’ 

‘আপনি নিরপরাধ কি না সে বিচার পরে হবে। আগে বলুন দুই মন্দিরের ভেতরের দরজাটা কোথায়? ওই কালো দেওয়াল ঘেঁষে বোধহয় আরও অনেকটা দূরেই যাওয়া যায়, নয় কি?’

বাধ্য ছেলের মতন ঘাড় নাড়লেন হিতেন সান্যাল, ‘হ্যাঁ যায়। পাশের মন্দিরটা পুরোপুরি ধ্বসে গিয়ে একটা সুড়ঙ্গ তৈরি হয়ে গেছে। এই মন্দিরের দেওয়াল ধরে এগিয়ে গেলে আপনি সেই সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকতে পারবেন।’

‘আর সেই সুড়ঙ্গ গিয়ে শেষ হয়েছে পেছনের ঢিবিতে?’

সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন হিতেন সান্যাল।

‘নিজের অবস্থাটা কী বুঝতে পারছেন মিস্টার সান্যাল? যে লুকোনো পথ আপনি হাতের তালুর মতন চেনেন, সেই একই পথ ধরে খুনি এসেছে।’

হিতেনবাবু এবার একেবারে হাউমাউ করে উঠলেন, ‘আমি আবারও বলছি এ খুন আমি করিনি প্রদোষবাবু। আপনি বিশ্বাস করুন।’ 

‘আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারি হিতেনবাবু, কিন্তু তার জন্য এই মুহূর্ত থেকে আপনাকে শুধুমাত্র সত্যি কথা বলতে হবে। মনে রাখবেন গিরিডির পুলিশ ছাড়াও আপনার ওপর আরও অনেকের নজর আছে।’ 

হিতেন সান্যাল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে, ‘আপনি কী বলছেন প্রদোষবাবু, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’

‘বুঝতে পারবেন মিস্টার সান্যাল। আপাতত শুধু এটুকু জেনে রাখুন ডেভিড ম্যাককালাম কিন্তু গিরিডি এসেছিলেন আপনাকেই খুঁজতে।’

হিতেন সান্যালে এবার দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লেন।


পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হতে হতেই দুপুর গড়িয়ে গেল। খুনটা উশ্রীর ওপারে হওয়ায় কোন থানা ইনভেস্টিগেশন চালাবে সেই নিয়েও কিছুটা টালবাহানা চলছিল। আমাদের জবানবন্দি অবশ্য বারগণ্ডা থানার দারোগা চুনিলাল তিওয়ারি নিলেন। তিওয়ারি পদবি হলেও ভদ্রলোক ঝরঝরে বাংলা বলেন, এবং ফেলুদার কীর্তিকলাপের সঙ্গেও সবিশেষ পরিচিত। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘বুঝতেই পারছেন, একজন সাহেব খুন হয়েছেন। আমাদের এখন অনেক ঝক্কি পোহাতে হবে। কিছু জানতে পারলে অবশ্যই খবর দেবেন মিস্টার মিটার। এ কেস তাড়াতাড়ি সলভ না হলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে।’ 

 সুধাংশুবাবু খবরটা শোনা ইস্তক পাথরের মতন বসেছিলেন। পুলিশ যাওয়ার পর বললেন, ‘এই তো সদ্য আলাপ হল ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনিই খুন হয়ে গেলেন, এ কি ভাবা যায়! অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আপনি কিছু বুঝতে পারছেন প্রদোষবাবু?’ 

 ‘নাহ! আমারও আপনার মতনই অবস্থা। এখানকার মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে কিছু আলোচনা করছিলাম গতকাল। আজ কথা ছিল উনি নিজেই ঘুরিয়ে দেখাবেন মন্দিরটা। কী থেকে কী হয়ে গেল!’

সুধাংশুবাবুকে আজকের ঘটনাটা যে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ফেলুদার কথা শেষ হতে না হতেই উঠে দাঁড়ালেন, ‘আমাকে মাফ করবেন আপনারা। কাল থেকেই শরীরটা জুতের যাচ্ছে না। তার মধ্যে এই খুনখারাপি! বারগণ্ডাতে এর আগে কোনও খুন হয়েছে কি না মনেই করতে পারছি না। আমি একটু বিশ্রাম নিতে যাই। আপনাদের ওপর দিয়েও সারাদিন যা ধকল গেছে, আপনারাও আপাতত রেস্ট নিন। ‘

সুধাংশুবাবু বেরিয়ে যেতেই লালমোহনবাবু চুপিচুপি বললেন, ‘হিতেন সান্যালের কী হল মশাই?’

‘যা যা ঘটেছে তাই যদি বলে থাকেন পুলিশকে, তাহলে এখনই কিছু হওয়ার নেই লালমোহনবাবু। তবে এ জট অনেক গভীর, পুলিশ এখনই তার নাগাল পাবে বলে মনে হয় না।’

‘পুলিশ না পেলেই বা কী, আপনি পেলেই হল।’

ফেলুদা ঘড়ি দেখল, ‘কিন্তু তার জন্য হিতেন সান্যালের সঙ্গে আর-একবার বসা দরকার।’

হিতেনবাবু সুধাংশুবাবুর অফিসে বসে কাজ করছিলেন। ফেলুদাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন, ‘আ-আপনারা?’ ওঁর হকচকানি ভাবটা এখনও যায়নি। 

‘সকালের কথা যে শেষ হয়নি হিতেনবাবু।’

হিতেন সান্যাল তড়িঘড়ি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, সুধাংশুবাবু ধারেকাছে আছেন কি না বোঝার চেষ্টা করছেন বোধহয়, ‘এ-এখানেই কথা বলতে চান?’

‘আপনি চাইলে আমাদের ঘরেও আসতে পারেন।’

হিতেন সান্যালকে দেখে মনে হল ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলেন।

অবশ্য ঘরে এসেও একটু ইতস্তত করছিলেন, সেটা লক্ষ করে ফেলুদা বলল, ‘আমার ভাই আর লালমোহনবাবু প্রায় প্রতিটি কেসেই আমার সঙ্গে থাকেন। আপনি নিশ্চিন্তে শুরু করতে পারেন।’

ভদ্রলোক কতটা নিশ্চিন্ত হলেন বোঝা গেল না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘আপনি সকালে বলছিলেন মিস্টার ম্যাককালাম আমাকে খুঁজতে গিরিডিতে এসেছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি ওনাকে এর আগে কোনোদিন দেখিওনি, ওঁর ব্যাপারে কিছু জানতামও না। আমাকে খুঁজতে আসার হেতুটা কী?’

ফেলুদার দু-আঙুলের ফাঁকে চারমিনার জ্বলছে। ফেলুদা সামনের অ্যাশট্রেতে ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, ‘সে কথায় আসছি। কিন্তু সকালে আমার কথায় আপনার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছিল মিস্টার ম্যাককালাম না এলেও অন্য কেউ আপনাকে খুঁজতে আসতে পারে এরকম একটা দুশ্চিন্তা আপনার ছিল। ঠিক ভাবছি?’

‘আমার মতন সাধারণ মানুষকে খুঁজতে কে আসবে মিস্টার মিটার?’ হিতেন সান্যালের গলাটা কি একটু কেঁপে গেল?

ফেলুদা একদৃষ্টিতে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে, ‘যদি বলি অন্য আর-এক হিতেন সান্যাল?’

ভদ্রলোকের দৃষ্টি মেঝের দিকে, রগ ধরে বসে রয়েছেন।

‘কী মিস্টার সান্যাল, ভুল বলছি?’ 

ভদ্রলোক ধীরে ধীরে ঘাড় নাড়লেন দুদিকে।

‘আপনার বোধহয় জানা নেই যে ডেভিড ম্যাককালাম এবং অন্য হিতেন্দ্রনাথ সান্যাল বাংলার মন্দির নিয়ে বহুদিন ধরেই একসঙ্গে গবেষণা করে চলেছেন। ইন ফ্যাক্ট, হিতেন্দ্রনাথের যে সমস্ত লেখা পড়ে আপনি নিজের পরিচয় ভাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার কয়েকটায় খুঁজলে দেখতে পাবেন হিতেন্দ্রনাথ ডেভিডের প্রতি সহ-গবেষক হিসাবে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।’

‘কিন্তু পরিচয় তো আমি…’

ফেলুদা ভদ্রলোকের কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিল, ‘না, কাকতালীয়ভাবে আপনার নামটিও হিতেন্দ্রনাথ সান্যাল। তাই আক্ষরিক অর্থেই হয়তো পরিচয় ভাঁড়াননি। কিন্তু প্রকৃত মন্দিরবিশারদ তো আপনি নন মিস্টার সান্যাল। যিনি প্রকৃত মন্দিরবিশারদ, সেই হিতেন্দ্রনাথ সান্যাল তো কলকাতায় বসে।’

হিতেন সান্যাল মলিন হাসি হাসলেন, ‘বিশারদ হওয়ার জন্য কি কলকাতায় থাকাটা আবশ্যক মিস্টার মিটার? আমিও মন্দির নিয়ে নেহাত কম জানি না। তবে হ্যাঁ, কলকাতাবাসী না হওয়াটা যদি দোষ হয় তাহলে সে দোষে আমি দোষী।’

ফেলুদা ওর পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে এনেছে, ‘পড়ে দেখুন।’

‘কী এটা?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি হিতেন সান্যালের চোখে।

‘আপনার লেখার তালিকা। যার অধিকাংশই বেরিয়েছে গিরিডি-দেওঘর-মধুপুরের বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রপত্রিকায়, হিন্দি এবং ইংরেজিতে। আর এই প্রতিটি লেখাই যেখান থেকে টোকা, তার তালিকাটাও পাশেই দেওয়া আছে মিস্টার সান্যাল। আর সেগুলি সবই বেরিয়েছে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক জার্নালে, সাধারণ মানুষ ছুঁয়ে দেখা দূর অস্ত, যার নামই জানেন না। কলকাতায় না থাকাটা দোষ নয় মিস্টার সান্যাল, সে আমিও জানি আর আপনিও জানেন। কিন্তু প্লেজিয়ারিজম অর্থাৎ অন্যের লেখাকে নিজের বলে চালানো যে একটা বিশাল বড়ো অপরাধ, সে কথাটাও আমরা দুজনেই জানি।’

হিতেন সান্যালের মুখ লাল হয়ে উঠেছে, কাগজটা ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলেন। ফেলুদা কাগজটা মুড়ে ফের পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, ‘আপনাকে জানিয়ে রাখি মিস্টার সান্যাল, এই লিস্টি কিন্তু আমি করিনি। গতকাল সন্ধ্যাবেলায় এ কাগজ আমাকে দিয়েছিলেন স্বয়ং ডেভিড ম্যাককালাম। খানিক কাজের সূত্রে, আর খানিক ঘোরার বাসনায় ডেভিড পশ্চিমে প্রায়ই চলে আসতেন। কোনওভাবে বছর দেড়েক আগে আপনার একটা লেখা ওঁর চোখে পড়ে যায়। আর ডেভিডের চোখে না পড়লে আসল হিতেন্দ্রনাথ সান্যাল কোনোদিন জানতেও পারতেন না আপনার কীর্তিকলাপ। গত এক বছর ধরে ডেভিড এবং হিতেন্দ্রনাথ আপনার সমস্ত লেখালেখির হদিশ রাখছিলেন। সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ জড়ো করে ডেভিড এবার এসেছিলেন আপনাকে সতর্ক করে দিতে। মনে আছে, প্রথম দিন উনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন দেশের লেখাটা আপনার কি না? সেটাও একটা পরীক্ষা ছিল আপনার জন্য। সেবার উতরে গেলেও জোড়বাংলা শব্দটা আপনাকে ডুবিয়ে দিয়ে গেল।’  

‘আমাকে মাফ করুন মিস্টার মিটার’, হিতেন সান্যাল প্রায় টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়েছেন। 

ফেলুদার হাত দুটো বুকের ওপর জড়ো করা, কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘ঠিক আছে। আজ আপনি আসুন মিস্টার সান্যাল। কিন্তু আমাদের কথা এখনও শেষ হয়নি।’ 

হিতেন সান্যাল ঘর থেকে বেরোতে যাবেন, ফেলুদা হঠাৎ বলে উঠল, ‘আজকের মতন একটা শেষ প্রশ্ন মিস্টার সান্যাল। শ্রীরামপুরের রাজাদের সঙ্গে গিরিডির কোনও সম্পর্ক আছে?’

ভদ্রলোক ঘুরে দাঁড়ালেন, মনে হচ্ছে বেশ অবাক হয়েছেন, ‘অবশ্যই। এখনকার গিরিডির অনেকটা জমিই ছিল শ্রীরামপুরের রাজাদের।’ 

‘আর মন্দিরটা?’

‘হ্যাঁ। ওনাদেরই বানানো। না হলে এই চত্বরে ওরকম টেরাকোটার কাজ আসবে কী করে!’

‘ধন্যবাদ, মিস্টার সান্যাল।’


[ক্রমশ]

পড়ুন, টেরাকোটা টালমাটাল (দ্বিতীয় পর্ব) / প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

.................................................

অলংকরণ: অভীক কুমার মৈত্র


#ফেলুদা # সত্যজিৎ #প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট #বাংলা প্যাস্টিশ #pastiche #Prabirendra Chattopadhyay #Satyajit Ray #Feluda #silly point #web portal

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

18

Unique Visitors

219123