গজ়লের অনন্ত বিষাদজলে
কখনও দুঃখের মধ্যে আরও অতীতের দুঃখগুলো এসে পাশে দাঁড়ায়। এসে বলে, দ্যাখো, তোমাতে আমাদেরও ছায়া লেগে আছে। ডুব দেবে অনন্ত বিষাদজলে? লাগে। আমাদের নিজেদের মতো করে একটা ক্যাথারসিস লাগে। কখনও সেই ক্যাথারসিসের নাম, গজ়ল।
আচ্ছা, ক্যাথারসিস দিয়ে শুরু করলাম কেন বলুন তো? আসলে যাঁর কথা বলছি আজ, তাঁর জীবনটা একটা ট্র্যাজেডি। তাঁর গজ়ল আমাদের ক্যাথারসিস। হয়তো তাঁর নিজেরও।
জগজিৎ সিংহ। তামাম সংগীতের সাম্রাজ্যে তিনি গজ়লের ঈশ্বর। আজ তাঁর মৃত্যুদিন।
আসলে এইসব আপতিক মৃত্যুর কোনও স্থান নেই শিল্পীর কাছে, শিল্পের কাছে। তবুও একবার ক্যামেরাটা প্যান করে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, কোনও এক অনাম্নী বছরে। জগজিৎ হয়তো এরকম ইচ্ছে শুনেই গেয়ে উঠতেন 'জিস জখম় কো ওয়ক্ত ভর চলা হ্যায়, তুম কিঁউ উনহে ছেড় যারহি হো!'
'গ়ম' তো চাপা পড়ছেই মেকি হাসির তলায়। আমার। আপনার। জগজিৎ সিংহেরও। ইন্টারনেট খুললেই পেয়ে যাবেন তাঁর অসংখ্য গানের তালিকা, তাঁর জীবনের ওঠাপড়ার কাহিনি - সব। সব ছোঁয়া যায়। কিন্তু গজ়লের সুর আর কথার পাকশিল্পের মধ্যে দিয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসা দুঃখগুলোকে কেমন করে যেন গিলে নিতেন জগজিৎ সিংহ। আর আমাদের উপহার দিতেন তেমন কত গান।
ধরুন, প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু উল্টো দিকের মানুষটার মনের তল পাচ্ছেন না। হাতড়াচ্ছেন। খানিক ভয়ও হচ্ছে। সংশয় হচ্ছে। এদিকে আপনি নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না। মেসেজটা করেই ফেললেন তাঁকে। কিছুই না। একটা গান। 'ঝুঁকি ঝুঁকি সি নজ়র, বেকরার হ্যায় কে নেহি, দবা দবা সা সহি, দিল মে প্যায়ার হ্যায় কে নেহি'। একটি মধুর, সদ্য ফোটা ফুলের মতো কম্পমান একটি ভীরু প্রেম আর জগজিৎ সিংহের অনবদ্য গায়কি। অথচ দেখবেন সুরের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন বেদনা।
কোন বেদনা আমাদের স্পর্শ করেন বলুন তো?
যে বেদনায় সততা আছে, যে বেদনার বোধ অর্জিত। ব্যক্তিগত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে, একটার পর একটা ট্র্যাজেডিতে বাহ্যত অবিচল জগজিৎ। তাঁর সমস্ত বেদনা তিনি সমর্পণ করেছেন গজ়লের কাছে। আমরা তাঁর সেই গজ়লের বহমান বেদনার শ্রোতা ও সন্তান।
[ কভার ফটো : অন্তর্জাল ]
#সঙ্গীত #জগজিৎ সিং #ব্যক্তিত্ব #গজ়ল #Song #Jagjit Singh #Person #Gazal