অনগ্রসর এলাকার পড়ুয়ারা শিখছে রোবোটিক্সের কৌশল : সৌজন্যে ‘রোবোটেক্স ইন্ডিয়া’
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে কোডিং, প্রোগ্রামিং, এমনকি নানা কাজে ব্যবহারের উপযোগী রোবট তৈরির কৃৎকৌশল - এই সবকিছুই নিখরচায় শিখতে পারছে দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের পড়ুয়ারাও। ‘রোবোটেক্স ইন্ডিয়া’ নামে এক সংস্থা আধুনিকতম প্রযুক্তির পাঠ দিচ্ছে গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়াদের। আর এই উদ্দেশ্যে সংস্থাটি সাহায্য নিচ্ছে সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামোর।
ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম অফ এডুকেশনের সাম্প্রতিক এক তথ্যে নজর দিলে দেখা যাবে, ভারতের প্রায় ২৫ কোটি স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ কোটিই পড়াশোনা করে বেসরকারি স্কুলে। ধরেই নেওয়া যায় তারা প্রিভিলেজড, 'যক্ষুনি যা চাই, তক্ষুনি তাই পাই' -এর দলে। কিন্তু রইল বাকি যে ১৩কোটি, সরকারি স্কুলের চৌহদ্দিই যাদের শেষ ভরসা, তারা কি কেবল 'ভীড়' হয়েই থেকে যাবে? উন্নত প্রযুক্তি শিক্ষার আলো সে দিকেও পড়লে ভীড় সরিয়ে বহু উজ্জ্বল মুখ যে প্রথম সারিতে এগিয়ে আসবে তা বলাই বাহুল্য। এমনই এক দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ নিয়েছে 'রোবোটিক্স ইন্ডিয়া'। আর্থিক ভাবে লাভহীন থেকে ন্যায্য মূল্যে দেশের সরকারি স্কুলগুলি, মূলত গ্রামের পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর বিদ্যালয়ে পৌঁছে, রোবোটিক্স, কোডিং, প্রোগামিং এর মত প্রযুক্তি শিক্ষার এক বিরাট পরিসর গড়ে তুলেছে এই কোম্পানি। এর নেতৃত্বে রয়েছেন পায়েল রাজপাল।
২০১৯ সাল থেকে গুজরাটের কয়েকটি সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে 'রোবোটেক্স ইন্ডিয়া' র এই কর্মসূচির প্রাথমিক পথ চলা শুরু। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই পরিকল্পনা সাফল্যের মুখ দেখে। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্য ছিনিয়ে আনে প্রত্যন্ত গ্রামের সরকারি স্কুল পড়া কয়েকজন পড়ুয়া। তাদের তৈরি রোবট সকলের মন জয় করে নেয়। কৃষক পরিবারের এক পড়ুয়া তার বাবার কাজের সুবিধার্থে এমন একটি রোবট বানায় যার কাজ ছিল গবাদিপশুর সাহায্য ছাড়াই চাষের জমিতে বীজ বপন করা। এই রোবটটি প্রভূত প্রশংসা পায়।
আরও পড়ুন : দু বছরে সাতশো কেজি প্লাস্টিক অপসারণ : নজির কলেজপড়ুয়ার
পড়ুয়াদের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে 'রোবোটেক্স ইন্ডিয়া' আরো দুটি কর্মসূচীতে হাত দেয়। 'রোবোটেক্স রুরাল' নামে কর্মসূচীতে তাদের লক্ষ্য ছিল গ্রামের সমস্ত পিছিয়ে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং সেই সঙ্গে গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে সব মেয়েদের প্রযুক্তিশিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা। পরবর্তীতে এই কোম্পানি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৮০টি রোবটও বানায়, যেগুলি দেশের চিকিৎসা পরিষেবায় বিশেষ উপকারে আসে। এক ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে পথ চলা শুরু করলেও দেশের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিগত এই সাহায্য সত্যিই নজিরবিহীন।
আরও পড়ুন : নতুন গাছের নামে জুড়লেন ডিক্যাপ্রিও : পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে অভিনব কুর্নিশ
এই সংস্থাটি এখনো পর্যন্ত গুজরাট, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকের প্রায় ২৪০০০ ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে প্রযুক্তি শিক্ষার আলো পৌঁছে দিয়েছে। দিন বদলের স্বপ্নকে সত্যি করতে দরকার কেবল সদিচ্ছা আর উপযুক্ত পরিকল্পনা - এ কথা প্রমাণ করে চলেছে 'রোবোটেক্স ইন্ডিয়া '।
...................................