ফিল্ম/ওয়েব সিরিজ রিভিউ

"অপরাজিত" : একটি টাইমট্রাভেল

সাম্যদীপ সাহা May 25, 2022 at 12:31 pm ফিল্ম/ওয়েব সিরিজ রিভিউ

ছবি: অপরাজিত
পরিচালনা: অনীক দত্ত
প্রযোজনা: ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন
মুক্তি: ২০২২
অভিনয়: জিতু কামাল, সায়নী ঘোষ, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অঞ্জনা বসু, অনুষা বিশ্বনাথন প্রমুখ


                 এইচ জি. ওয়েলসের কল্যাণে আমরা সকলেই টাইম মেশিন সম্পর্ক অবগত। তাতে টাইমট্রাভেল করে ঘটমান বর্তমান থেকে অব্যাহতি নিয়ে টাইম এবং স্পেসে পৌঁছে যাওয়া যায়। এসব জানা কথা। কিন্তু  এক্সপেরিয়েন্স করেছেন কি কেউ? আমার সম্প্রতি তা করার সৌভাগ্য হয়েছে, তাও খোদ উত্তর কলকাতার একটি শতাব্দীপ্রাচীন প্রেক্ষাগৃহে বসে। হলের আলো নেভার অগে পর্যন্তও আমার কাছে টাইমট্রাভেল শুধু কল্পবিজ্ঞানের গল্পকথা ছিল। বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না যে কি হতে চলেছে। হলের আলো নিভতেই নিমেষের মধ্যে সত্তর বছর পিছিয়ে গিয়ে পড়লাম একেবারে পঞ্চাশের দশকের কলকাতায়, একেবারে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির বৈঠকখানার ভেতরে। সেখানে বিজয়া রায়, সুপ্রভা দেবী, শিশু সন্দীপ সকলে বিরাজমান। তারা জ্যান্ত, নড়ছে, চড়ছে, কথা বলছে! আর সামনে চলছে রেডিও। বেতার সম্প্রচার শুনতে ব্যগ্র তারা। আর বেতারের ওপার থেকে ভেসে আসছে সেই বহুপ্রতিক্ষিত কন্ঠস্বর। এবার দেখা গেল তাঁকেও। তিনি যথারীতি তাঁর নিজস্ব পরিচিত ভঙ্গিমায় ভাস্বর, বহুশ্রুত ব্যারিটোনে ব্যাপ্ত। তিনি অপরাজিত রায়। তিনি পরাজিত হতে জানেন না, কারণ সত্যের কাঠিন্য, বাধাকে তিনি জয় করেছেন ততদিনে, সমস্ত প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করে, "পথের পদাবলী (বা পাঁচালী)" নির্মাণ করে।

                জনশ্রুত, বহুল পঠিত ও প্রচলিত ঘটনা, যা এতদিন পর্যন্ত শুধু শোনা ছিল, সেগুলো অবিকল চোখের সামনে ঘটতে দেখলে অবিশ্বাস্য লাগে, তাই না? ডি.জে. কিমারের অফিসে সত্যজিৎ বিজ্ঞাপন আঁক্ছেন, সিগনেট প্রেসের জন্য ‘আম আঁটির ভেঁপু’-র প্রচ্ছদে অপু দূর্গা অঙ্কন করছেন, ঢোলা পাজামা পাঞ্জাবী পরিহিত দীর্ঘকায় চেহারায় আরামকেদারায় বসে গ্রামোফোনে জার্মান সিম্ফনি শুনছেন, লন্ডনের বুকে হলে বসে ভিত্তোরিও ডি সিকার "দ্য বাইসাইকেল থিভস" দেখছেন, "পথের পাঁচালী"র ছক কষছেন, বিজয়া রায়ের সাথে বসে স্ক্র্যাবল খেলছেন, ইউনিট বাছাই করছেন, টাইমমেশিন এই সবটা চোখের সামনে জীবন্ত করে দেখালো। মানুষের মন সব সময়তেই বহুচর্চিত অথচ অদেখা বিষয়ের প্রতি উৎসুক, চির-আগ্রহী।

                আমরা যারা সিনেমা ভালোবাসি, বিহাইন্ড দ্য সিন বা ছবি বানানোর গল্প তাদের কাছে ভীষণ লোভনীয়। কাশবন ও ট্রেনের সেই আইকনিক দৃশ্যের অন্তরালে ঠিক কি ঘটেছিল? ইন্দির ঠাকরুণের মৃত্যুদৃশ্যে সত্যিই অত জোরে মাথা ঠুকে গিয়েছিল? মানুষের মনে জমে থাকা এইসব হাজার কৌতূহলের নিবারণ করে চলে এই টাইমট্রাভেল। সব চোখের সামনে ঘটছে। চিন্তামগ্ন সত্যজিৎ রুমালের কোনা চিবোচ্ছেন, বংশী চন্দ্রগুপ্ত সেট ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করছেন, সুব্রত মিত্র লাইট বাউন্স করে ন্যাচারাল লাইটিং করছেন, রবিশঙ্কর বৃষ্টিদৃশ্যের জন্য দেশ রাগের ঝংকার তুলছেন তরফদার সেতারে, সব কল্পনা আজ সত্যি। আর এসবের মধ্যে দিয়ে দেখছি তিলতিল করে গড়ে ওঠা ‘বিশ্বখ্যাত শিল্পী সত্যজিত’ এর স্বনির্মাণ। রাইজিং অফ আ ফিনিক্স। শেষপর্যন্ত "পথের পাঁচালী"র সর্বাধিক অ্যান্টিসিপেটেড প্রতিক্রিয়া, যা এসেছিল তার বছর দশেক পরে, সুদূর হলিউড থেকে, দূরভাষে। সেই বিখ্যাত প্রায় অশীতিপর চিত্রপরিচালক, যিনি আজও বারংবার তাঁর জীবনে ও কাজে "পথের পাঁচালী"র সুদূরপ্রসারী অবদান স্বীকার করেন। সত্যজিৎ তখন পিয়ানোতে "চারুলতা"র আবহরচনায় নিমগ্ন। এই দৃশ্য দেখতে পাব, স্বপ্নেও ভাবিনি। তাও দেখাল টাইমমেশিন। আলো জ্বলে গেল হলের। টাইমট্রাভেল শেষ, ব্যাক টু ২০২২।

                  ঘোর কাটেনি তখনও। ঘড়িতে দেখলাম ট্রাভেল টাইম ১৩৭ মিনিট। না কি আরও বেশি? কম কম মনে হচ্ছিল কেন জানি! খানিক বাদে ঘোর কাটতে মনে পড়ল যে আমি আসলে ছবি দেখতে এসেছিলাম। মনে পড়ল টাইমমেশিন নন, উনি অনীক দত্ত। মনে পড়ল সত্যজিৎ রায় নন, উনি জিতু কামাল। আপনি এতকাল যে দৃশ্যকল্পগুলো খালি মনে মনে ভেবেছেন, আপনার মতো করে ভেঙেছেন, গড়েছেন, সংলাপ বসিয়েছেন, সেগুলো যদি হঠাৎ জলজ্যান্ত ঘটতে দেখেন? কেমন লাগবে? "অপরাজিত" ছবি তৃষ্ণার্ত বাঙালীর তৃষ্ণাহরণ করে। দর্শক ঠিক যা যা দেখতে চেয়েছিল, অনীকবাবু ঠিক তাই তাই দেখিয়েছেন। বাঙালী দেখতে চেয়েছিল সত্যজিৎ-বিজয়ার কথোপকথন, বাঙালী দেখতে চেয়েছিল সত্যজিতের কন্ঠে "অ্যাকশন" উচ্চারণের পর অপু-দূর্গার কাশবনে দৌড়ে যাওয়া, বাঙালী দেখতে চেযেছিল কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিদেশী দর্শকদের সমবেত স্ট্যান্ডিং ওভেশন। এই সমস্তকিছু অনীকবাবু নিখুঁত নির্মেদভাবে দেখান।

                     সেটাই এই ছবির ইউ এস পি। একেবারেই মেদহীন, অনাবশ্যকীয় ঘটনা পরিবর্জিত। পরিচালক কোনোরকম ভাবেই আনচার্টেড টেরিটোরিতে পদচারণা করেননি। জনমধ্যে প্রকাশিত বা আলোচিত অ্যানেকডোটগুলি জুড়েই এই ছবির বিস্তারণা ঘটেছে। ফলতঃ দর্শক অনেক বেশি কানেক্ট করতে পেরেছে, একাত্মবোধ করেছে অনেক বেশি। "খালি শুনেইছি, দেখিনি কোনোদিন", এই অভাব পরিচালক প্রত্যাশিতভাবেই মিটিয়েছেন যাথার্থ্যতার সাথে। ঠিক। এই ছবি অত্যন্ত যথার্থ, ফ্রেম থেকে ফ্রেমে, ঘটনা থেকে ঘটনায়। প্রায় নিয়ার পারফেক্ট যাকে বলে। সোশ্যাল মিডিয়ার দয়ায় সত্যজিতের ক্লিপ, স্টিলের আধিক্য এই ছবির জন্য একাধারে সহায়ক এবং সংহারক। কেন। কারণ এই অ্যাবান্ডান্ট রেফারেন্স ছবির বিনির্মাণ অনেক সহজ করে দিলেও দর্শকেরা খুঁটিয়ে ভুল ধরার চেষ্টা করবেন। যতই হোক, বিষয় সত্যজিৎ, বাঙালী স্পর্শকাতর ও পিউরিটান! কোনও বিতর্কের জায়গাই দেননি অভিনেতা ও কলাকুশলীরা। সেট ডিজাইন, পোশাক পরিকল্পনা, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, আবহ অত্যন্ত নিপুণ দক্ষতায় করা হয়েছে, তাও নামমাত্র বাজেটে। খুব সৎ, সৃষ্টিশীল টিম না থাকলে এমন পিরিয়ড পিস বানানো যায়না। এখানে পঞ্চাশের দশককে ধরতে চাওয়া হয়েছে। পরিমিত অর্থব্যয়ে এত সুন্দর পিরিয়ড ফিল্ম বানাতে মুনশিয়ানা লাগে। সিনেমাটোগ্রাফার সুপ্রতিম ভোল খুব সঙ্গতভাবেই কোনো ওয়াইড অ্যাঙ্গেল শট, প্যানিং বা ট্রলি রাখেননি। অবশ্য আতিশয্যের এই অনুপস্থিতি সত্যজিতের মধ্যবিত্ততা ও ছবির সারল্য ফুটিয়ে তুলতে দরকার ছিল। সত্যজিৎও তো অশেষ অর্থকষ্ট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কখনই এই ক্লাসিক রচনা করতে পারতেন না, যদি অমন অভূতপূর্ব ইউনিট না পেতেন। এখানেই "পথের পাঁচালী" আর "অপরাজিত"র এক অদ্ভুত সমাপতন ঘটে যায়।

                      জিতু যে সত্যিই কামাল করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনীকবাবুর নির্বাচনও বাহবাযোগ্য। সত্যজিৎ বোধহয় তাঁর নিজের সৃষ্টির চেয়েও বেশি লোকপ্রিয় তাঁর ম্যানারিজম, তাঁর অরা, নজরকাড়া ব্যাক্তিত্ব ও সৌষ্ঠবের জন্য। জিতু কামাল শুধু সত্যজিতের  বাহ্যিক প্রকরণকে আত্মস্থ করেননি, মানুষটাকে অনুধাবন করতে চেয়েছেন নিজের মতো করে। তাঁকে শুধু মিমিক না করে, নিজস্ব ব্যাক্তিবৈশিষ্টও বুনে দিয়েছেন তাঁর মধ্যে। তাই তিনি সত্যজিৎ হয়েও অনীকের  অপরাজিত হতে পেরেছেন। একজন অভিনেতার কাছে তার নিজের কন্ঠ ও বাকবিন্যাস অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে জিতু তার নিজের কন্ঠস্বর ব্যবহার করতে পারবেন না, চন্দ্রাশিষ রায়ের কন্ঠ সেখানে প্রতিস্থাপিত হবে, এটা জেনে এমন অভিনয় অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় আলাদা উল্লেখ দাবী করে। বিমান রায় (বা বিধান রায়)এর চরিত্রে তার সংক্ষিপ্ত পরিসরের উপস্থিতিও মনে রাখার মতো। এই ছবি বাংলা ছবিতে প্রস্থেটিক মেকআপ যথাযথ ব্যবহারের এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সোমনাথ কুন্ডুকে ছাড়া সেটা অসম্ভব ছিল।

                     এবার একটা মজার কথা বলি। ১৯৫৬ সালে সত্যজিতের দ্বিতীয় ছবি মুক্তিলাভ করে, অপুত্রয়ীর দ্বিতীয় পর্ব "অপরাজিত"। অনেকে বলেন এই ছবির আবেদন ও উৎকর্ষ "পথের পাঁচালী"কেও ছাপিয়ে যায়। অন্তত মৃণাল সেন তো তেমনটাই মনে করতেন। IMDB রেটিংএ সেই ছবি 8.3/10 স্কোর প্রাপ্ত। অন্যদিকে অনীক দত্তকৃত "অপরাজিত" 9.5/10 স্কোর করেছে! ভাগ্যের কি পরিহাস! অর্থাৎ শ্রেষ্ঠত্বে এই ছবি ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন মন্দার বাজারে বাংলা ছবির জন্য এমন হাইপ, জনপ্রিয়তা, হাউজফুল শো দরকার ছিল। হুজুগে বাঙালীই ইতিহাস গড়ে, ইতিহাস ভাঙে। এখানেই প্রশ্ন জাগে যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চলচ্চিত্র হিসেবে এই ছবির শৈল্পিক আবেদন কতখানি?  সত্যজিতের ক্যারিশমা, বাঙালীর বাঁধভাঙা ইমোশন ও নস্টাল্জিয়া ব্যাতিরেকে এই ছবি কতটা মৌলিক তা ভাবা প্রয়োজন। ছবিতে কিছুটা ডার্ক শেডের সাদাকালোর প্রয়োগ নিঃসন্দেহে ছবিটিকে অন্য মাত্রা দেয়, ছোটোখাটো খুঁত অবলীলায় ঢাকা পড়ে যায় এই রেট্রো ট্রিটমেন্টে। আলোকচিত্র বা কালার টোন যতই উন্নত হয়ে উঠুক, সাদাকালোর সুগভীর অভিঘাত আজও অমলিন। এখানে আমি অবতারণা করব স্বপ্নদৃশ্যটির, যেখানে পরিচালকের নিজস্ব অনুভব, সত্যজিৎ-অনুসন্ধিৎসা প্রস্ফুটিত হওয়ার একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই দৃশ্যই এই ছবির সবচেয়ে দূর্বল এবং অপ্রোয়জনীয় দৃশ্য মনে হয়। অনেকখানি "নায়ক"এর ড্রিম সিকোয়েন্স থেকে অনুপ্রাণিত এই দৃশ্যে অনীকবাবু ভয়াবহ এক ভুলও করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্টিল খুব দেখা যায়, যে রবীন্দ্রনাথ কিছু লিখছেন, পাশে দাঁড়িয়ে একটি বালক সেই লেখা দেখছে। সাথে বলা হয় রবীন্দ্রনাথ সত্যজিতের নোটবইতে "বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে" লিখছেন, আর ওটি বালক সত্যজিৎ, সেই মুহূর্তের ছবি। এই তথ্যটি সর্বৈব ভুল। শিশুটি ঠাকুরের প্রিয় পাত্রী রানী চন্দের পুত্র। পরিচালক সেটি রিক্রিয়েট করেন ওই স্বপ্নদৃশ্যে। তথ্যের যাচাই না করে এমন খেলো ভুল অবাক করে, অস্বস্তি লাগে। দূর্গার শাড়ি কামড়ে সর্বজয়ার কান্না ও তারসানাইয়ের দৃশ্যে অঞ্জনা বসু যখন বারবার বলেন "আমার কান্নাটা ঠিক আসে না" এবং শ্যুটিংয়ের ফাঁকে স্তানিস্লাভস্কি হাতে নিয়ে বসেন, সেই দৃশ্য বড্ড একঘেয়ে ও আরোপিত লাগে।

                        এখানেই বলতে হয় ছবিটি যথার্থ, অত্যন্ত যত্নসহকারে ত্রটিহীন বানানোর চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু শৈল্পিক হয়নি। অত্যন্ত সুন্দর গ্রন্থনা, পরিপাটি, কিন্তু ইন্ট্রোস্পেকটিভ হয়নি। এই ছবির বেশিরভাগটা সত্যজিতের আলোতেই আলোকিত, সত্যজিতের ভাষায়ই বাঙ্ময়। এই ছবি অসাধারণ ‘রিক্রিয়েশন’ মাত্র। "ভূতের ভবিষ্যৎ", "আশ্চর্য প্রদীপ", "মেঘনাদবধ রহস্য" বা "বরুণবাবুর বন্ধু"খ্যাত অনীক দত্ত যে ঝরঝরে স্মার্ট ছবি করতে পারদর্শী তা অজানা নয়। কিন্তু যেহেতু এটি তাঁর নিজের আইডলের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সেখানে তাঁর আত্মোপলব্ধি প্রত্যাশিত ছিল। তবে "পথের পাঁচালী"র ক্রিউদের এখানে যে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, তা খুব মন ছুঁয়ে যায়। ছবিতে অপুর বদলে মানিক, উমার বদলে দেবী, বিজয়ার বদলে বিমলা, সত্যজিতের বাড়ির কাজের লোকটির প্রহ্লাদ, এই নামকরনগুলিও সত্যজিতের সৃষ্টির ঝলকসদৃশ, ভালো লাগে। বিমলা রায় জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে গাইছেন রবীন্দ্রসংগীত “গোধূলি গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা” দৃশ্যটি অনবদ্য লাগে। বিজয়া রায় অত্যন্ত সুগায়িকা ছিলেন, তিনি একাধিক রেকর্ড করেছেন, হিন্দি ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। এই অজানা তথ্যে আলোকপাতের জন্য পরিচালককে অশেষ ধন্যবাদ।

                       টাইমট্রাভেলে মাঝে মাঝে সম্বিৎ ফিরছিল সকলের করতালির আওয়াজে। সমবেত তারিফ আর সিটিতে হল বারংবার যখন ফেটে পড়ছে, মনে হচ্ছিল নেতা বা অভিনেতার বাইরেও একজন বাঙালী এমন সমাদর পেতে পারেন। যে প্রতিক্রিয়া এতদিন শাহরুখ, সলমন, রজনীকান্ত, পুষ্পা বা কেজিএফের একচেটিয়া ছিল,তা আজ পাচ্ছে এক বাংলা ছবির বাঙালী চরিত্র। হতে পারে মারকাটারি সংলাপ নেই, হতে পারে ভিলেনদের শায়েস্তা করা নেই। কিন্তু সিগারেট মুখে ক্যামেরায় লুক থ্রুয়ের যে সোয়্যাগ, যে কোনও সমস্যা সমাধানের যে বুদ্ধিমত্তা, সব বাধা লড়াই করে পেরিয়ে যাওয়া, এহেন সত্যজিৎ কোন নায়কের চেয়ে কম? তাঁর সত্যজিৎ রায় হয়ে ওঠার শুরুর দিনের কাহিনী দেখে দর্শকের এই প্রতিক্রিয়া জানান দেয়, যেকোন ভারতীয় সুপারস্টারের চেয়ে তিনি কোনো অংশে কম নন। তারা যেমন কোন বিপদে ভয় পায় না, কোনদিন হারে না, শত মারেও মরে না, সত্যজিৎ রায় আজ শতবর্ষ পার করেও একই রকম ড্যাশিং আইকন, অপরাজিত, The Undefeated.





আরও পড়ুন: চমরী গাই আর পাঠশালার গল্প/বিপ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য্য


#অপরাজিত #অনীক দত্ত #জিতু কামাল # সায়নী ঘোষ # পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় # অঞ্জনা বসু #সত্যজিৎ রায় #বিজয়া রায় #পথের পাঁচালি

  • chandranath seth 16.6.1955.
    May 26, 2022 at 4:32 pm

    ভালো লাগল। দেখতেই হবে। কোলকাতা ছাড়া আর কোথায় দেখা যায়? চন্দননগর, শ্রীরামপুর , ডানকুনি??

  • Manoswita Das
    May 26, 2022 at 3:02 pm

    এক কথায় মেদহীন, ঝরঝরে রিভিউ। জিতু কমল বেশ ভাল কাজ করেছেন। কিছু সিনে মনে হচ্ছিল যেন সত্যিই চোখের সামনে সত্যজিৎ রায়কেই দেখছি। সেই হিসেবে বলা যায় জিতু তাঁর শিল্পে সফল হয়েছেন। সাদা-কালো পর্দায় সেই সময়টাকেও ভালই তুলে ধরা হয়েছে। তবে স্বপ্নদৃশ্য আর 'পথের পদাবলী' নিয়ে অভিজাত-মধ্যবিত্ত স্বামি-স্ত্রীর কথপোকথন অতিরিক্ত মনে হয়েছে। আর 'পথের পদাবলী'-র একটি দৃশ্যে অভিনয়ের আগে সর্বমঙ্গলার চরিত্রে যিনি অভিনয় করবেন তাঁর সংলাপে বারবার "কান্নাটা আমার ঠিক আসে না" কথাটি একটু যেন কানে লাগে। "পথের পদাবলী"-র ভাই-বোনের প্রথমবার রেলগাড়ি দেখা এবং বৃষ্টি ভেজার দৃশ্য অনেকদিন মনে থাকবে। এইদুটি দৃশ্য যেন প্রথমবার উপন্যাসটি পড়ার আনন্দ নিয়ে আসে নতুন করে। সব মিলিয়ে 'অপরাজিত' এক দারুন নস্টালজিয়া আর টাইমট্রাভেলের অনুভূতি তৈরি করতে সক্ষম তা বলা যেতেই পারে। সম্পূর্ণ‌ ত্রুটিমুক্ত না হলেও সুনাম হওয়ার আগে রায়সাহেবের পরিশ্রম এবং সিনেমা তৈরির নেপথ্য কাহিনী সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা সৎ প্রচেস্টা চাক্ষুশ করতে পারবেন দর্শকরা।

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

122

Unique Visitors

227628