বাকি কথা
আশির দশকের শেষ বা নব্বইয়ের গোড়ার দিকে কলেজে অনেকেরই বন্ধুদের দেওয়া একটা করে ডাকনাম হত। পরবর্তীকালে তাদের সেই নামটাই সবার মনে থেকে যেত। এদের আসল নাম কী, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অজানা রয়ে যেত।
পরে, সোশাল মিডিয়ার যুগে আবার অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হয়েছিল, কিন্তু বিনয় সে ধাতুর তৈরি জিনিসই নয়।
অসম্ভব চাপা, প্রচারবিমুখ। চোখে সবসময় প্রশান্ত একটা হাসি। খানিকটা তাই থেকেই বোধহয় ওর নাম হয়েছিল বিনয়। আসল নামটা বিভাংশু না বিভাবসু... ঠিক মনে নেই।
চাপা হলেও, বিনয়কে কখনই অন্তর্মুখি বলা চলে না। আমাদের একটা ছোট দল ছিল, যার বিশিষ্ট একটি অংশ ছিল বিনয়। ওর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের। প্রায় যে কোনও মানুষের গলা অবিকল নকল করতে পারত। ক্লাসে নিয়মিত প্রক্সি তো দিতই, একবার এক রোমহর্ষক ঘটনায় গোটা ক্লাস সাসপেন্ড হওয়া থেকে বাঁচিয়েছিল। তখন কালীপুজোর কয়েকদিন বাকি। অতি উৎসাহে তিন তলার ক্লাসরুমে চকোলেট বোমা ফেটেছে।
খবর পেয়ে অধ্যক্ষ নীচ থেকে আসছেন, আমরা ভয়ে কাঁপছি, এ অবস্থায় হুবহু পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকের গলায় ‘নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ’ সম্বন্ধে বক্তৃতা শুরু করায় অধ্যক্ষ বিভ্রান্ত হয়ে সিঁড়ির মুখ থেকে ফিরে যান।
জীবনের শ্রেষ্ঠ চারটে বছর আমরা কাটিয়েছি একসঙ্গে। কাঁধে কাঁধ রেখে।
৮বি বাসের জানালা দিয়ে ক্ষণিকের দৃষ্টিতে লম্বা গাছ, সবুজ পুকুর, ছোট্ট ফুটব্রিজ এবং ছাত্রছাত্রীদের নিরন্তর অকারণ হাসি ঠাট্টার মাঝে মাঝে ওর ওই নির্বাক হাসিটা যেন চোখ বুজলেই দেখতে পাই।
আমার আর অরিজিতের সঙ্গে তাও একটু যোগাযোগ ছিল । কলেজে আমরা দুজনেই ছিলাম বাঁ-দিক ঘেঁষা, বিনয় আমাদের অনেক আড্ডাতেই যোগ দিত। যদিও বেশীরভাগ সময়েই কোন কথা বলত না। রাত জেগে পোস্টার লেখা, অগুনতি চা-সিগারেট, মিছিলে হাঁটা ... সবেতেই থাকত… কিন্তু একটু যেন অবজ্ঞায়।
“উই ডিবেট। উই ডিসেন্ট। উই ইউনাইট এগেন্সট অপ্রেশান।”
এই ছিল আমাদের মোটো।
কলেজের পর সবাই নিজেদের জীবনচরিত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
চাকরির শুরুতেই আমি ব্যাঙ্গালোর চলে গেলাম তিন বছরের জন্য। নতুন শহর, নতুন বন্ধু, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা... এসবের মধ্যে বিনয়ের কথা যেন ভুলেই গেছিলাম।
ছুটিতে একবার কলকাতা এসে কলেজে গেছি, হঠাৎ ক্যান্টিনে দেখা! চিরপরিচিত সেই হাসিটা নিয়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরল।
এ কথা সে কথার পর উশখুশ করছি দেখে নিজেই বলল, “শোন, ওসব চাকরিবাকরি সবার কম্মো নয়।”
বলেই চওড়া হাসি।
বলল, স্বর পরিবর্তনের যে ক্ষমতাটা ওর ছিল, তার মূলে ছিল শব্দ নিয়ে এক অসীম কৌতূহল । কলেজে থাকতেই নাকি ও জন্তু-জানোয়ারের ডাক, বিশেষত পাখির ডাক বিশ্লেষণ ও উপলব্ধি করা শুরু করে ।
মানুষ শব্দ শুনতে পায় কুড়ি থেকে কুড়ি হাজার হার্টজ কম্পাঙ্কের মধ্যে। বয়সের সাথে সাথে শোনার ক্ষমতা কমে যায়। অর্থাৎ ক্রমে আমরা পনেরো, দশ হয়ে আস্তে আস্তে বড়জোর চার-পাঁচ হাজার হার্টজ অবধি শুনতে পাই।
শোনার আর বোঝার মধ্যে আবার তফাৎ রয়েছে। মানুষের বোধগম্য শব্দের পরিসর আরো অনেক কম। মানুষের কণ্ঠস্বরের কম্পাঙ্ক মোটামুটি সত্তর-আশি থেকে আড়াইশো হার্টজের মধ্যে। তাই বোঝার ক্ষমতাও ওর আশেপাশেই ।
পাখি ডাকে এক হাজার থেকে আট হাজার কম্পাঙ্কের মধ্যে। কিছু কিছু পাখি আরো উঁচুতে।
এই কম্পাঙ্ক পরিসরের শব্দ মানুষের শ্রবণযোগ্য হলেও বোধগম্য হওয়ার কথা নয়।
বিনয় কিন্তু থেমে থাকেনি।
কলেজ ছাড়ার পর অনবরত অভ্যাস আর অধ্যবসায়ের জোরে নিজের শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে শিক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছে। শোনার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়ত আর নিবিষ্ট করে আস্তে আস্তে সে পাখিদের ভাষা বুঝতে শুরু করেছে। অল্প অল্প আদান-প্রদানও শিখেছে, তবে খুব ভাল নয়।
আমি ওকে বললাম এ জিনিসের তো বিরাট সম্ভাবনা। কেন ও বিদেশে গিয়ে এই নিয়ে গবেষণা করার কথা ভাবছে না? আমার এক বন্ধু আমেরিকার ডিউক ইউনিভারসিটিতে ‘সং-বার্ড’ নিয়ে রিসার্চ করছে। তার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি ...
আমার কথাটা শেষ হয়েছে কী হয়নি, তার মধ্যেই ও সেটা খারিজ করে দিল।
সত্যেনদার বানানো আদা-চায়ে চুমুক দিয়ে একটা চারমিনার ধরিয়ে বলল, প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের চেয়ে মেঠো কৌতূহল আর অন্বেষণের আনন্দই নাকি ওর কাছে শ্রেয়।
বলেই সেই মার্কামারা হাসি।
হবু স্ত্রীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার তাড়া থাকায় সেদিন উঠতে হয়েছিল, কিন্তু বিনয়ের কথাটা আমি মন থেকে মুছতে পারিনি।
এরপর আমেরিকা যাত্রা, মাঝে একবার দেশে ফিরে বিয়ে, তারপর দীর্ঘকাল প্রবাসী জীবনযাপন। এর মধ্যে আমার মেয়ের জন্ম, এবং আস্তে আস্তে তার বড় হয়ে ওঠা। অরিজিতের কাছে একবার শুনেছিলাম বিনয় নাকি ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে গিয়ে ভিড়েছে। ওখানে পাখিদের মাধ্যমে একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কমরেডদের খবর পাঠানোর কাজ করছে, রাষ্ট্রশক্তির সম্ভাব্য আক্রমণের আগাম বার্তা।
শুনে কী বলব বুঝতে পারিনি।
মনে হয়েছিল, চারটে বছরে ছেলেটাকে কিছুই চিনে উঠতে পারিনি।
আফসোস হয়েছিল খুব।
ততদিনে মোবাইল ফোন বাজারে এসে গেছে, বিদেশ থেকে দেশে ফোনও করা হয় মাঝে মধ্যে, কিন্তু ওই যে বলেছি, এইসবের ধার কোনদিনই ধারেনি বিনয়।
কালের নিয়মে পদোন্নতি, গাড়ি কেনা, ছেলের জন্ম আর পরিশেষে বাড়ি কেনা নিয়ে কেটে গেল আরো বছর সাতেক। লোনের বোঝা টেনে চলেছি পার্টিসাজের ফাঁকে।
পুরনো দিনের কথা, পুরনো বন্ধুদের কথা, কলকাতা শহর আর তাকে ঘিরে স্মৃতিবেদনায় ভরে ছিল মনটা।
কলেজ ছাড়ার প্রায় সতের বছর পর একবার শীতে কলকাতা এলাম এক মাসের ছুটিতে। ছোট শালার বিয়ে, বউয়ের পঞ্চাশ রকমের প্ল্যান।
প্রথম দিকে কিছুদিন আত্মীয়স্বজন, শ্বশুরবাড়ি করে ক্লান্ত হয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করলাম বন্ধুবান্ধবের। চেনা কেউই প্রায় নেই কলকাতায়। যারা আছে, তাদের সঙ্গে উদ্যোগ নিয়ে দেখা করার তাগিদ অনুভব করলাম না। এতদিন হয়ে গেছে যোগাযোগ নেই, কথাবার্তা নেই… কী বলে শুরু করব সেটাই ভেবে উঠতে পারলাম না।
অরিজিতও তখন অ্যামস্টারডামে। ওটা নাকি ওর সেকেন্ড হোম।
মনে হতে একবার পুরনো একটা ইচ্ছা জেগে উঠল । একদিন ভোর সাড়ে ছ’টায় গিয়ে হাজির হলাম কলেজ স্ট্রীটে। পুঁটিরামের দোকানে গরম কচুরি ভেজে ভেজে রাখছে। গোটা ছয়েক খাবার পর মনে হল গলাটা শুকনো লাগছে, প্যারামাউন্টে একবার ঢুঁ না মারলেই নয়।
কিন্তু দেশে না থেকে থেকে অনেক কিছুর মতই এটাও ভুলে গেছি যে প্যারামাউন্ট খুলতে খুলতে বেলা এগারোটা। কী করব, কী করব ভাবছি... বইয়ের দোকানগুলোও খুলতে দেরী আছে… কি মনে হল, কলেজ স্কোয়ারে ঢুকে গেলাম। চারদিকটা হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখছি, হঠাৎ দেখি বিনয় বসে আছে।
প্রথমে চিনতেই পারিনি । মাথার সেই ঢেউ খেলানো চুল নেই, গালের টোলটা ঢেকে গেছে কাঁচাপাকা দাড়িতে। আর যেটা কোনদিনও দেখিনি, সেটা হল মুখের ভাব। একটা সংশয় আর দ্বিধা মেশানো খুব অচেনা বিনয় যেন বসে আছে আমার থেকে দশ হাত দূরে।
আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমাকে খেয়াল করল না। দেখি গভীর এক চিন্তার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে।
কাঁধে হাত দিতেই চমকে তাকাল। কয়েক সেকেন্ডের অপলক দৃষ্টি, তারপরেই সেই চেনা হাসি।
পাখিদের সঙ্গ ও ত্যাগ করেছে।
তারা নাকি নির্ভরযোগ্য নয়। হয় খুব অজ্ঞ, নয়ত সত্যি সত্যিই অনুভূতিহীন।
শব্দের কম্পাঙ্ক পরিসরের ওপরের দিকটায় ওর আর কোন কৌতূহল নেই। শেষ কয়েক বছর ও নাকি নীচের অংশটায় মনোনিবেশ করেছে।
ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না।
ও-ও আর খুলে বলছে না দেখে বিশেষ খোঁচালাম না।
চুপচাপ দুজনে বসে বাচ্চাদের সাঁতার কাটা দেখছি, হঠাৎ দেখি বিনয় ঘড়ি দেখছে। এত সকালে কিসের তাড়া থাকতে পারে মনে মনে ভাবছি, দেখি যাওয়ার জন্য উদ্যত। মিলিটারি কায়দায় একটা সেলুট ঠুকে হাঁটা লাগিয়ে, কয়েক পা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়্ল।
কী একটা ভেবে আবার সামনে এসে দাঁড়াল।
আস্তে আস্তে বেঞ্চিটায় বসে পড়ল। আমি তখনও সামনের দিকে তাকিয়ে সাঁতার কাটাই দেখছি।
বলে, আমার মনে আছে কিনা মানুষের শব্দ শুনতে পাওয়ার কম্পাঙ্ক পরিসরের কথা।
বললাম আছে।
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ও এখন কুড়ির নীচের শব্দ ধরার চেষ্টা করছে। কুড়ির নীচের কম্পাঙ্কে প্রেতাত্মাদের কথা শোনা যায়।
পৃথিবীর অন্য যে কোনও মানুষ এই কথা বললে আমি মুচকি হেসে উঠে পড়তাম, কিন্তু লোকটা যেহেতু বিনয়, ঘুরে তাকালাম ওর দিকে।
খুব নিরাসক্ত গলায় বলে চলল আত্মারা সর্বদাই আমাদের চারপাশে আছে। কার্যত, কলকাতা শহরেই অনেক প্রেতাত্মা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে। তারা মানুষের থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান এবং এক একজন প্রেত বিরাট দার্শনিক।
শুধু, তারা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে একেবারেই ইচ্ছুক নয়।
জিজ্ঞেস করলাম ওর কারুর সঙ্গে যোগস্থাপন হয়েছে কিনা।
এ কথায় আবার ভয়ানক ব্যস্ত হয়ে পড়ল, এবং এবার সত্যি সত্যিই বিদায় জানিয়ে চলে গেল ওখান থেকে।
বরাবরের মতই ঠিকানা, ফোন নম্বর জাতীয় জাগতিক ব্যাপারগুলোয় ঢোকার কোন সুযোগই দিল না।
এই ঘটনার বছরখানেক পর, এক শনিবারের দুপুর।
আমার নর্থ ক্যারোলাইনার বাড়ি।
সামনের লনের ঘাস ছাঁটছি, দেখি পিয়ন এসে ডাকবাক্সে চিঠি ফেলল। ওদেশের ডাক মানে হয় কোন বিল, অথবা সুপারমার্কেটের কুপন । এসবের মধ্যে একটা বেমানান লম্বা খয়েরি খাম দেখে এগিয়ে গেলাম।
হাতে লেখা ঠিকানা, দেশের ডাকটিকিট লাগানো।
উলটে দেখছি কে পাঠাল, আমার ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। হাতে লেখা চিঠি আগে কখনো দেখেনি। ওর উত্তেজনা দেখে ওকেই খুলতে দিলাম খামটা।
বাইরের ঠিকানা ইংরেজিতে হলেও, ভেতরের চিঠি বাংলায় লেখা।
হয়ে গেল উত্তেজনার ইতি। চিঠিটা আমার হাতে গুঁজে দিয়ে ছুটে চলে গেল বাড়ির ভেতর।
ততক্ষণে আমার দেখা হয়ে গেছে পেছনে লেখা, “বি চ্যাটার্জি, ক্যালকাটা, ইন্ডিয়া”
শান্ত হাতে চশমাটা পড়ে চিঠিটা খুলে ধরলাম।
“সেদিন তোর কথার উত্তর না দিয়ে দুম করে চলে এসেছিলাম কারণ আমার ট্রেন ধরার ছিল। অবশ্য তোকে বলতে বাধা নেই, আরও একটা কারণ ছিল।
মানুষের সঙ্গে কথা বলতে আর আমার ভাল লাগে না।
মাওইস্টদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে দন্ডকারণ্যের ভেতর আমার একজনের সাথে আলাপ হয়। ওর নাম দলসাই। ও একজন বড় নেতা।
কিন্তু তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, ওর একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে।
ও আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পারে। এখন আমিও পারি।
ভূতের গল্পের মত প্ল্যানচেট করে নয়, দুজন মানুষ সামনা সামনি যেভাবে কথা বলে, তেমনি।
আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
মানুষ সম্পর্কে, পশুরা মানুষের সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে কি ভাবে, আর সর্বোপরি, আত্মা কীভাবে গোটা মানবজাতিকে সাহায্য করতে পারে।
একবার তোর সঙ্গে দেখা করতে চাই। কবে আসবি আবার ?
বিনয় ।”
চিঠিটা হাতে নিয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
কোন ফেরত যাওয়ার ঠিকানা, যোগাযোগের উপায় কিচ্ছু লেখা নেই। চিঠিটা এসে পৌঁছল কী করে সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না।
ইতিমধ্যেই বাড়ির ভেতর থেকে ডাক এসে গেছে, আমাদের বেরোনোর কথা ছিল। খামটাকে একটা বইয়ের মধ্যে রেখে বেরিয়ে গেলাম।
এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে উইকেন্ড কাটানোর কথা। যথারীতি চিঠিটার কথা আরে সেভাবে মনে রইল না।
সে বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পরের বছর আমরা আমাদের আমেরিকার বাড়ি বেচে দেশে চলে আসি। মেয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার ফলে থেকে গেল, ছেলে-বউ নিয়ে আমি ফের ব্যাঙ্গালোর।
এরও কিছুদিন পর, ভাগ্যক্রমে কলকাতায় বদলি।
ফেরার পর কলেজ, যাদবপুর কফি হাউস, কলেজ স্ট্রিট... সব জায়গাতেই ঘুরেছি মাঝে মধ্যে। অরিজিতও কলকাতায় এসেছিল, দেখা হল বার দুয়েক… কিন্তু বিনয়ের দেখা পাইনি কেউই। অরিজিতকে জিজ্ঞেস করাতে জানলাম, ওর সাথে বিনয়ের বোনের ফোনে কথা হয়েছিল এর মাঝে, কিন্তু বিনয়ের বর্তমান অবস্থান কেউ জানে না।
আমার সঙ্গে ওর শেষ কী কথা হয়েছে সেটা আর অরিজিতকে বললাম না।
এক রবিবার সকালে চায়ের কাপ হাতে আনন্দবাজারের পাতা ওল্টাচ্ছি, হঠাৎ একটা খবর দেখে হৃদপিণ্ডটা গলার কাছে উঠে এল…
২২ জানুয়ারি, ২০১২। নিজস্ব সংবাদদাতা।
গতকাল বেলা দেড়টা নাগাদ সীমান্ত বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে ইন্দ্রবতী নদীর ধারে টাকিলোদ গ্রামে চারজন মাওবাদীর মৃত্যু হয়। মৃতদের নাম রাজু মাসে, নিতী মংটু, রুপি মংটু এবং বিবস্বান চ্যাটার্জি।
মৃতদের দেহ গ্রামে পৌঁছলে সেই নিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীটা যেন দুলে উঠল।
কাগজটা হাতে করে বসে রইলাম সারা সকাল।
********************************
অলংকরণ: বিবস্বান দত্ত
#সিলি পয়েন্ট # গল্প # অভি বিশ্বাস # বাকি কথা # বাংলা পোর্টাল #Abhi Biswas # silly point # webportal