আত্মিক
তার সাথে আমার পরিচিতি নয় নয় করেও তাও অনেকদিনই। এখন তো আঠারোর গন্ডি পেরিয়ে ঊনিশ বিশ ছুঁয়ে রীতিমতো ছুটে চলেছে। মনের টানে মন বোধহয় আর কিছু আগেই বাঁধা পড়েছিল। ভাবা যায়!তার সাথে কুড়িটা বছর একসাথে ঘর করছি। সময়ের বিবর্তনের সাপেক্ষে যদি ধরা যায়, তবে বলা যেতে পারে সেই ‘বারোয়ারি’ ফোন , যখন কারোর জন্য ফোন এলে পাশের বাড়ি থেকে লম্বা-লম্বা সুরে ডাক পড়ত, সেই তখন থেকে যখন প্রত্যেকের হাতে ঘরে ঘরে সযত্নে বা প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত টাচ-ফোন এসে পৌঁছল। এমনকি বাড়ির নিয়মানুযায়ী স্কুলের চৌকাঠ টপকে ‘তার’ হাতেও, এই পুরো বিবর্তনের সময়টা আমরা একসাথে ‘ঘর’ করেছি। একসাথে ঘুমিয়েছি, কান্না-হাসি-ঝগড়া-ভাব সব, সবটা ভাগ করেছি। একসাথে, একঘরে থেকেছি, গায়ের গন্ধ নিয়েছি প্রতিনিয়ত। তা সত্ত্বেও জীবন বয়ে গিয়েছে নিজের মত সব বিচিত্র খাত বেয়ে। আর আমাদের জীবন বিভিন্ন অভিজ্ঞতায়ে আমাদের আলাদা আলাদা বয়সের খাতায় নানারকম আঁচড় কেটে রেখে গিয়েছে। এলোমেলো সব অভিজ্ঞতার জাল সরিয়ে প্রায়শই সবকিছু টেনে এনে জোড়া লাগিয়ে আমরা সমালোচনায় মগ্ন হয়ে এঁটো থালার পাশে বসে কাটিয়ে দিয়েছি ঘন্টার পর ঘণ্টা। এভাবেই পালন করেছি একসাথে, জীবনের প্রতিটা বিরক্তি থেকে আনন্দ। রাগ গলিয়ে কান্না বানিয়ে এভাবেই গল্পের বাটিটা পড়ার বইয়ের সামনে উল্টে দিয়েছি। কুড়িটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে, কক্ষপথ এবার যেন অনুসূর-অপসূর গতির মত ভবিষ্যতের মুহূর্তগুলোকে নিয়ে আমাদের একবার এক ছাদের নিচে আনে আর সরিয়ে নিয়ে যায়ে। তবু তার কানের পাশের সেই দুধেল গন্ধটা, সকালবেলার চা, মাথার সেই কেমন একটা গন্ধ আর আমার ‘আমি’-তে আদ্যোপান্ত ভরা আমার ‘সে’ একই থেকে গিয়েছে। এক-এক সময় মনে হয় আমার ছেলেবেলা থেকে বহুকাঙ্খিত ‘সে’ যেন কিভাবে আদরে-শাসনে আমারই আত্মজ হয়ে উঠেছে । আমাদের একছাদ ভাগ করে নেওয়ার যে সময় ব্যবধান ছিল, মনের বাঁধন তো সেই ব্যবধান ভেঙে তাকে ছায়া ও কায়াসঙ্গী করেছিল কবে-ই। এখন যত দিন যাচ্ছে তত সে আমাতেই মিশে যাচ্ছে, আমার মনের সব নয়, তবু যেন প্রায় সবটুকুই অধিকার করে ফেলেছে ‘সে’ আর আমাদের ‘কুড়ি বছরের ছোট্ট সংসার’।
[কভার: অন্তর্জাল]
#বাংলা #মুক্তগদ্য #উদিতা আচার্য