'রোটি ব্যাঙ্ক' : সকলের মুখে খাবার তুলে দেবার উদ্যোগ

গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের গত বছরের রিপোর্ট অনুযায়ী অপুষ্টি, খাদ্য অপচয় এবং শিশু মৃত্যুর ভিত্তিতে ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০২ নম্বরে। এমনকি প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ,নেপালও ভারতের থেকে এ-বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে। ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে প্রায় ১৯ কোটি লোক রাতের বেলা না খেয়ে ঘুমোতে যায়। এর পাশাপাশি অভুক্ত অবস্থা ও অপুষ্টির জন্য ভারতে প্রত্যেকদিন ৪,৫০০ জন শিশু(৫ বছরের নিচে) মারা যায়। এর থেকে করোনাতে মৃত্যুর হার অনেক কম। ধান, গম উৎপাদনে ভারত উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবু কেন এদেশের লোক না খেতে পেয়ে মারা যায়? এর উত্তর অনুসন্ধানে আমাদের হাতে একটি তথ্য উঠে আসে, যা অবাক করার মত। জি.এইচ.আই- এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে খাদ্য নষ্ট করার হার ছিল ২০.৮ শতাংশ। যা অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় সব থেকে বেশি।
এই ফেলে দেওয়া খাবারকে জমা করে অন্যের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে 'রোটি ব্যাঙ্ক’ নামে একটি সমাজ কল্যানমূলক উদ্যোগ। যদিও দেশে এই ধরনের উদ্যোগ ছিল, কিন্তু এত বড় আকারে রীতিমতো নথিভুক্ত করে কোমর বেঁধে কাজে নামার উদ্যোগ এই প্রথম। উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ডের এক পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে চল্লিশ জন যুবক ও প্রবীণদের তত্ত্বাবধানে এই ব্যাঙ্কটি খোলা হয়। প্রতিষ্ঠান হিসেবে একে নথিভুক্ত করা হয় এপ্রিল, ২০১৫ সালে। এইখানে দাতারা প্রতিদিন রুটি, শাক-সবজি প্রভৃতি খাদ্যসামগ্রী দান করেন, যা অভাবগ্রস্ত লোকেদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। এই মডেলেই ধীরে ধীরে পুনে, মহারাষ্ট্র, ঔরঙ্গাবাদ, ঝাড়খন্ড, দিল্লি, দেরাদুন সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠে একই নামের কিছু উদ্যোগ। বিভিন্ন স্থানের এই উদ্যোগগুলি বেশিরভাগই স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ করে।
নজরে থাকুক
বিবলিওবুরো : একটি চলমান গ্রন্থাগার
মুম্বইয়ের রোটি ব্যাঙ্ক সম্ভবত এদের মধ্যে সবচেয়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী উদ্যোগ। এর নেতৃত্বে আছেন মুম্বাইয়ের ভূতপূর্ব পুলিশ কমিশনার ডি. শিবানন্দন। তাঁর মতে, খিদেই মানুষকে অনেক সময় অপরাধপ্রবণতার দিকে ঠেলে দেয়। এই ভাবনা থেকেই অবসরের পর গড়ে তোলেন ‘রোটি ব্যাঙ্ক’। তাঁর সহযোগী হিসেবে রয়েছেন নীতিন খানাপুরকর নামে লন্ডন- প্রবাসী এক ভারতীয় ব্যবসায়ী। এই সংস্থাটি শহরের বিভিন্ন রেঁস্তোরার সঙ্গে টাই- আপ করে তাদের বাড়তি খাবার সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে। নিজেদের ‘food resque organization’ বলতেই পছন্দ করেন মিঃ শিবানন্দন।
একই উদ্দেশ্যে ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগে তাপস চক্রবর্তী এবং মহম্মদ খালিদ মিলে এই ধরনের আর একটি খাদ্য- ব্যাঙ্ক গড়ে তুলেছেন৷ তবে তাঁদের কর্মপদ্ধতি একটু আলাদা। তাঁরা জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মারফত অভিভাবকদের কাছে খবর পাঠান টিফিনে যাতে একটি বেশি রুটি বাড়ি থেকে দেওয়া হয়; যা অভুক্তদের দান করা হবে। তাঁদের এই উদ্যোগ হাজারিবাগে যথেষ্ট সাড়া ফেলে। এখানে হিন্দুদের ঘরে তৈরি রুটি-সব্জি মুসলমানে মুখে অন্ন জোগায়, আবার মুসলমানের হেঁশেলে তৈরি খাবার নিরন্ন হিন্দুর মুখের হাসি চওড়া করে। খিদের কোনও ধর্ম হয় না, এ কথাকে আক্ষরিক অর্থে প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরা।
#রোটি ব্যাঙ্ক #স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা #মুম্বই রোটি ব্যাঙ্ক #ভালো খবর #কুনাল দাস
Nilachal Chakrabarty
su sanbad o Bhalo lekha,
Diptendu kundu
Darun