মুক্তগদ্য

মেলাঙ্কলিক মাতেরা

শ্রীময় ভট্টাচার্য Dec 25, 2020 at 10:37 am মুক্তগদ্য

পড়শিনগর: চতুর্থ কিস্তি


পুরোনো আমলের মেঘ যখন গির্জার উঠোন থেকে সরে যাচ্ছে, তার ছাদে রাখা টেবিলের ওপর দু'একটা তুষার পালক উড়ে এসে পড়লো। একান্নবর্তী মাতেরার এই এক সুবিধে। ছাদ কে উঠোন কিংবা উঠোন কে ছাদ করে নিয়েই সেজে উঠেছে কয়েক'শো আদিম সংসার। একটা সিঁড়ি,  তুমি হয়তো ভাবছ উঠলেই চিলেকোঠা,  ওপরে গিয়ে দেখলে বারান্দায় উনুন ধরিয়েছেন একাশি বছরের এক তন্বী। অথবা ধরো, খুব রাগ হলো তোমার, ভাবলে একলা হবে, বেরোলেও, কিন্তু ভূগোল তোমায় নিয়ে এসে ফেললো অন্য কারুর অন্দরমহলে । 


পাহাড় ঘেরা একটা গ্রাম। সময়ের হিসেব গির্জার ঘণ্টাবাদক ছাড়া আর কেউ রাখে না। বারো'শো বছর আগে নির্মম শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচতে কিছু লোক পাহাড়ের নরমে ঘর বাঁধে। এক সাথে, গায়ে গায়ে। অনেক নিচে দিয়ে এঁকে দেয় ছিপছিপে এক নদী। নাম দেয় সাঁঝলি। খুব কোমল পর্দার সুর রেখে যায় সাঁঝলির জলে। শর্ত একটাই, বছরে দু'মাস সে চুল ভেজাবে না, বরফ মাখবে। 


গ্রামে কারুর নিজের ঘর বলে কিছু নেই। ভালোবাসতে বাসতে, ভাসতে ভাসতে থেকে যাওয়ার তাগিদে যেটুকু আড়াল, তাই যথেষ্ট। জয়সলমীর এর কোন ময়ূর-বারান্দায় বসে যে ফকির মরুবেহাগ ছুঁলেন, তাঁরই না-ছোঁয়া রিষভ অথবা ধৈবত কুড়িয়ে নিয়ে আরামের শোলক গাইছে দক্ষিণ  ইতালিয় হৈমবালিকা। গির্জার ঘণ্টায় থমকে আছে সময়। কূপির মগ্ন আলোয়,  বড়দিনের ফ্রেস্কো আঁকছেন কোন এক নাস্তিক জাদুকর।




[ লেখায় ব্যবহৃত ছবি : লেখক ]
#বাংলা #মুক্তগদ্য #পড়শিনগর

  • অভয়শঙ্খ মন্ডল
    Dec 25, 2020 at 3:00 pm

    এই কলামটি ক্রমশ পছন্দের হয়ে উঠছে। যেভাবে দূর কে নিকটের করে তুলছেন লেখক, তা প্রশংসনীয়।

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

22

Unique Visitors

225518