কলকাতার বুকেই রয়েছে অটিস্টিক এবং বিশেষভাবে সক্ষমদের দ্বারা পরিচালিত রেস্তোরাঁ

নামের সঙ্গে তাঁদের পরিচয়ে জুড়ে যায় ‘স্পেশালি-এবেলড্’, ‘ডিফ্রেন্টলি-এবেলড্’ প্রভৃতি শব্দবন্ধ। খাস কলকাতার বুকে এরকমই একদল যুবক-যুবতীর আত্মনির্ভরতার গল্প ‘সিপ্ অ্যান বাইট’। চারুচন্দ্র কলেজের কাছে ১৩ এ, লেক রোড -এ ‘মাদারল্যান্ড ক্রাফটস’-এর ভেতরে অবস্থিত এই ব্রেকফাস্ট ক্যাফে সবুজ খড়খড়ি, হলুদ দেওয়াল আর দারুণ ইনটেরিয়ার সাজসজ্জা নিয়ে পুরোনো কলকাতার নস্ট্যালজিয়া জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি মোহিত করে এক অভাবনীয় দৃশ্যে। সেখানে খাবার তৈরি থেকে পরিবেশনা, কাস্টমারের সঙ্গে কথাবার্তা থেকে ক্যাশ কাউন্টার সামলানো - সবই নিখুঁতভাবে করছেন ‘অটিজম’ কিংবা ‘ডাউন সিন্ড্রোম’-এর মত জটিল রোগে আক্রান্ত কিছু যুবক-যুবতী, যাঁদের বয়স মোটামুটি কুড়ি থেকে তিরিশের মধ্যে। মোট ষোলজন এরকম কর্মী নিয়েই চলে এই ক্যাফের কাজ। ক্যাফের উদ্যোগ সফল হবার পর বিপণীর নাম হয়ে যায় ‘মাদারল্যান্ড ক্রাফটস অ্যান্ড ক্যাফে’। শহর কলকাতায় হাতে-গোনা কিছু ফাস্টফুড চেইন-এ কিছু সংখ্যক ‘স্পেশালি-এবেলড্’ কর্মী থাকলেও, এই ক্যাফে এককথায় ‘স্ট্যান্ডআউট’।
অমৃতা রায়চৌধুরী-র এনজিও ‘ট্রান্সেন্ডেন্ট নলেজ সোসাইটি’র এই ষোলজন শিক্ষানবিশের কেরিয়ার গড়ার উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৮ সালে। সহায়তায় ছিল ‘সাউথ কলকাতা পরশমণি’ সংস্থা। এনজিও-এর নানাবিধ স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং প্রফেশনাল শেফদের কাছে কয়েক মাসের ট্রেনিংয়ের পর মাদারল্যান্ড বুটিকের হাত ধরে ‘সিপ অ্যান বাইট’-এর পথচলা শুরু।

কর্মীদের প্রত্যেকেই এখানে কাজ করেন আলাদা আলাদা শিফটে – দিনে চার-পাঁচ ঘন্টা। কখনো কখনো তাদের অভিভাবকেরাও ক্যাফের কাজে অল্পবিস্তর সাহায্য করেন। প্রত্যেকে নিজেদের অসুস্থতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের কাজ করে যান হাসিমুখে। চব্বিশ বছরের অর্ঘ্য দত্ত যেমন তার ‘স্লো-লার্নিং’-এর সমস্যাকে কার্যত তুড়ি মেরে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন সুস্বাদু কুকিস্ থেকে কেক বানানোয়, তেমনই বছর পঁচিশের শ্রুতর্ষি ব্যানার্জী অটিজমের সমস্যা সামলে দিব্যি কাস্টমার বিলিং-এর দায়িত্ব সামলান। ডাউন সিন্ড্রোমের সমস্যা সত্ত্বেও তেইশ বছরের শ্রেয়া গামি কাস্টমারদের সঙ্গে যোগাযোগে ‘প্রো’ হয়ে উঠেছেন, খাবার সম্বন্ধে কাস্টমারের ফিডব্যাক নিতে কখনোই ভুল হয় না তাঁর। দক্ষিণ কলকাতায় প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কাছে এই ক্যাফে খাবারের মান, স্বাদ ও অসাধারণ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। কর্মচারীদের ‘বেকিং স্কিল’-এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে মাথায় রেখে ভবিষ্যতে মোবাইল বেকারি ভ্যান চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে ক্যাফে কর্তৃপক্ষের।
দিনে দিনে গোটা দেশে চাকরি জিনিসটা যেভাবে ‘ডুমুরের ফুল’-এর মতো হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ‘স্পেশালি-এবেলড্’দের ক্ষেত্রে নিজেদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা কতটা কঠিন, তা অনুমান করা কঠিন নয়। এহেন পরিস্থিতিতে এই ক্যাফের কর্মব্যস্ত, প্রাণোচ্ছল যুবক-যুবতীরা নিজেদের মনের জোর ও বাকিদের সহৃদয় সাহায্যে ভর করে নিজেদের শারীরিক বাধা-বিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে খুঁজে পেয়েছেন এক আত্মনির্ভর ও সুন্দর জীবন। তাঁরা যে তাঁদের মতো আরো হাজারো মানুষের অনুপ্রেরণা, একথা বলাই বাহুল্য। লকডাউনের কঠিন সময় কাটিয়ে আবার নিয়মমাফিক ঝাঁপ খুলছে ‘মাদারল্যান্ড ক্রাফটস অ্যান্ড ক্যাফে’। অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার জন্য ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন।
ঋণ : www.yourstory.com
#Motherland Crafts and Cafe #Sip n Bite #Autistic #Autism #Specially Abled #Cafe #মাদারল্যান্ড বুটিক #মাদারল্যান্ড ক্রাফটস অ্যান্ড ক্যাফে #অটিজম #ডাউন সিনড্রোম #সিলি পয়েন্ট #অলর্ক বড়াল #Down syndrome
Sagnik Hazra
খুব ভালো লাগলো Alarko Baral ।❤️