গল্প

অব্যক্ত

মানস দাস July 16, 2023 at 4:52 am গল্প

ঊর্মি দাঁড়িয়েছিল বাসস্ট্যান্ডে। অফিসের বাস আসতে এখনও মিনিট দশেক। আজ একটু আগেই পৌঁছে গেছে ঊর্মি। ছেলেটাকে আসার পথে স্কুলে ড্রপ করে দিয়ে আসতে হয়। আজ স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রোগ্রাম। তাই সকাল থেকে সমানে তাড়া দিয়ে যাচ্ছিল, ‘তাড়াতাড়ি চলো মা,তাড়াতাড়ি চলো।’ অগত্যা একটু আগেই বেরিয়ে পড়েছে।

নীল সাদা ঢেউখেলানো টিনের ছোট্ট শেডটায় ঊর্মির পাশে পেছন ফিরে এক ভদ্রলোক সেই কখন থেকে কার সাথে কথা বলছে। কথা বলে যাচ্ছে মানে যখন থেকে স্টপেজে ঢুকেছে ও, তখন থেকেই ওরকম দেখছে লোকটাকে।  পাশে দুজন আরও মাঝবয়সি আর একটা কলেজ পড়ুয়া। পিঠে একটা স্কুল ব্যাগ। বোধহয় বাসের অপেক্ষায় ওরাও।

নয়নের আজ অফিস নেই। বাড়িতে বসে সকালে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিল। মাঝে একবার অফিসের এক  কলিগ ওকে ফোন করেছিল। মনে হয় অসুস্থতা নিয়ে কী কথাবার্তা চলছিল। তারপর কাগজটায় মুখে গুঁজে ঠায় বসেছিল। আসার সময় বলে এসেছে, খাবারগুলো সব ফ্রীজবন্দী হয়ে রইল। খাবার সময় গরম করে খায় যেন। কতটা শুনল কে জানে ! নন্তাইটা এমন টানতে টানতে নিয়ে এল যে ভালো করে কিছু গোছানোর সময়টুকু পেলনা ! 

এতক্ষণ খেয়াল করেনি। ছাতাটা আনতে ভুলে গেছে ঊর্মি আজ। ব্যাগটা তবু একবার খুঁজল। মাথার ওপর ঝকঝকে সূর্যের তেজটা পড়তেই মনে পড়েছিল ওটার কথা। এরই মধ্যে বাসটা এসে ঢুকল স্টপেজে। তার আগে একটা ছোট্ট হর্ন মেরেছে বিরাট যন্ত্রদানবটা। 

ঊর্মি ব্যাগের চেনটা দ্রুত এঁটে নেয়। কলেজপড়ুয়া ছেলেটা এরই মধ্যে সুড়ুৎ করে আগে উঠে গেছে বাসে। ব্যাগ সামলাতে সামলাতে বাসে উঠল ঊর্মি। 

বাসটায় অনান্য দিনের মত আজও অনেক লোকজন। ঊর্মি ভালো করেই জানে অফিস টাইমে গাদাগাদি ভিড় হয় এ লাইনের  প্রায়  প্রতিটা বাসেই।  সবাই কোনোমতে অফিসে পৌঁছাতে পারলে যেন বেঁচে যায়। আজ তবু শেষের দরজাটা দিয়ে উঠতেই বাঁদিকে জানালার পাশে একটা সিট পেয়ে গেছে। সিটের লোকটা বোধহয় পরের স্টপেজে নেমে যাবে। তাই ঊর্মি ওর পাশে দাঁড়াতেই উঠে দাঁড়িয়েছিল। 

বাসের কন্ডাক্টর ছেলেটা অল্পবয়সী। সামনে একটা রড ধরে পিছমোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিল। ছেলেটা ওর পরিচিত।  ঊর্মিও হেসে জবাব দেয়।

গড়িয়া পেরিয়ে এখন সোজা ডাইনে টার্ন নিচ্ছে বাসটা। ভিড়টা ছাড়িয়ে মিনিটখানেকে একটা ফ্লাইওভারে উঠে পড়বে। তারপর সাউথ অ্যাভিনিউয়ের নতুন মল। মলটা পেরলেই ফাঁকা রাস্তা। ঝকঝকে সকালে এলোমেলো হাওয়া খেলছিল। জানালা দিয়ে সেই হাওয়া মিশে যাচ্ছিল ঊর্মির মধ্যে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল ঊর্মি। নীলাকাশে কেমন চেনা তুলোর মেঘ। পুজো কি এসে গেল নাকি ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্যাখে একবার। পৌনে দশটা। সবে সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। পুজোর এখনো ঢের দেরী। তবু মনটা আজ ভীষণ ফুরফুরে লাগছে।

 ঊর্মি খেয়াল করে, সামনের দিকে ভিড়ের মাঝে হাতলে হাত গলিয়ে দাঁড়িয়ে  সেই ভদ্রলোক। কথাই বলছে এখনও। কাকে  যেন কী সমানে বলে যাচ্ছে সেই তখন থেকে! অসহ্য লাগে ওর। লোকজনের মুখোমুখি বসে কথা বলার সময় আজকাল ভীষণরকম কমে গেছে। সামনে দাঁড়িয়ে মুখের কথাও আজকাল ফোনে বলে মানুষ। বড় কৃত্রিম লাগে সবকিছু। কেমন যান্ত্রিকতা চারপাশে ! কিছুকাল আগেও এমনটা হত না। পাশে বসে পাশের জনের সাথে কথা বলার সময় থাকত মানুষের। চকচকে স্ক্রিনে নকল মুখোশের বদলে একটা জ্যান্ত চেহারার হাসি কান্না মিশে যেত সুন্দরভাবে। সম্পর্ক অনেক সহজ ছিল, সাবলীল ছিল।


বাবুরবাগে গিয়ে দাঁড়াল বাসটা। কিছু প্যাসেঞ্জার ওঠানামা করছে এখন। বেশীরভাগই ডেইলি। ভিড়টা আরও বাড়ল। এরপর সবুজসরণী ধরে লালবাজারের দিকে এগিয়ে যাবে বাসটা। তারপর ওখান  থেকে  ভিআইপি লেন। লেন পেরিয়ে সল্টলেক। ওখানেই নামবে ঊর্মি। হাতেগোনা আর তো কয়েকটা স্টপেজ। কিন্তু জ্যাম-জটের হিসেব নিকেষে এখনও অন্তত আধঘন্টা  ।

একবার গুছিয়ে বসে ঊর্মি  সিটটায়। এরইমধ্যে কোত্থেকে কলেজ ছোকরার পাশে একটা কমবয়সী তন্বী বসেছে। ঊর্মি খেয়াল করেনি। একটা মিষ্টি হাসি বিনিময় হচ্ছে ওদের মধ্যে। ড্রাইভার কেবিনের গায়ে যে দাগধরা মলিন আয়নাটা, ওতেই  দেখা যাচ্ছিল লজ্জা আর ভালোলাগার  স্পর্শে মিশে যাচ্ছে মুখদুটো ।

ঊর্মি আনমনে  বাইরের দিকে তাকায়। ময়দানের ধার বেয়ে গোল করে বাঁধানো কৃষ্ণচূড়ার বেদীর পাশে হলদে  সাদা ছোটো  রেলিংগুলো সার বেয়ে পেরিয়ে চলে যাচ্ছিল পেছনদিকে। এই জায়গাটা ঊর্মির খুব চেনা। কতবার এখান থেকে বাস ধরেছে একসময়। ইউনিভার্সিটির রাস্তাটা এখান থেকে খুব কাছে। প্রথম যেদিন এখান থেকে ইউনিভার্সিটি যাবার বাস ধরেছিল ঊর্মি সেদিনও লক্ষ্য করেছিল এই রেলিংগুলো। কী সুন্দর নিয়ম করে ওরা পেছনে ছুটে যায়। ঊর্মিরও খুব ইচ্ছে করে ওদের মত করে পেছনদিকে ছুটে যায়। 

বাপিদার ক্যান্টিনটা ছিল হিউম্যানিটিজ বিল্ডিংটার ঠিক পেছনে। সবুজ কলাগাছের সারিবাঁধা ঘাটটা  ছিল ওখানেই। বিল্ডিংটার ঠিক সামনে পড়ত ঘাটটা। ঘাট পেরিয়ে ওপাশে ঊর্মিদের ডিপার্টমেন্ট। বটানি  আর জুওলজি, দুটো ডিপার্টমেন্ট ছিল ঠিক পাশাপাশি। ঊর্মির ছিল বটানি। বটানি ডিপার্টমেন্ট  ক্রস করে আরও ওইপাশে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রিসহ সায়েন্সের অনান্য  স্ট্রিমগুলো। বাপিদা ফুলকো লুচি আর আলুর তরকারি বানাত দারুণ। ঊর্মির খুব পছন্দ ছিল। ক্যান্টিনের পাকা দেয়ালটা ছাড়িয়ে সামনে একটা ছোট ত্রিপল টাঙানো থাকত রোজ। কিছু চেয়ার ওখানেও পাতা থাকত। টিফিনবেলা ঊর্মি ওখানে গিয়ে বসত।

সেই দুপুরটা আজও স্পষ্ট মনে পড়ে  । প্লেটে গরম লুচি নিয়ে সবে বসেছিল ঊর্মি। হঠাৎ একটা শোরগোল। হিউম্যানিটিজ বিল্ডিং থেকেই উঠে এল বোধহয় এদিকটায়। মাথায় ফেট্টি বাঁধা কয়েকটা দামাল ছেলে নিজেদের মধ্যে স্লোগান দিতে দিতে এদিকটায় এগিয়ে এল। কীসব ঝান্ডা নিয়ে পরে আরও কয়েকটা ছেলে দেখা গেল যোগ দিচ্ছে ওদের সাথে। ওদের চিৎকার শুনে যেটুকু বোঝা যাচ্ছিল তাতে প্রতিবাদটা ছিল ইউনিভার্সিটির ভিসি র নামে। কিন্তু একি! একদল আবার কোত্থেকে এসে জুটল ওদের মাঝে, যারা তর্কাতর্কি শুরু করল আগের ছেলেগুলোর সাথে। ঝামেলা হচ্ছে নাকি! পরিস্থিতি একটু পরে এমন গিয়ে দাঁড়াল যে এবার হাতাহাতির পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে ব্যাপারটা। একটা টুকরো ঢিল কোথা থেকে উড়ে এল এরই মাঝে। বাপিদার কাছে যে ছোট ছেলেটা কাজ করত, ওটা তারই মাথায় গিয়ে লাগল বেশ জোরে। বেচারা সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ল। সাংঘাতিক ব্যাপার ! আরও দুটো একটা এসে পড়ল এদিক সেদিক থেকে। একটা কাচ ভাঙল কোথায় যেন। সাথে সাথে চারপাশটা ঝনঝন করে উঠল। মুহূর্তে চিৎকার , চেঁচামেচি, হৈচৈ  পড়ে গেল জায়গাটায় । 

ঊর্মি ঠিক ভেবে পাচ্ছিল না কী করবে সে। হঠাৎ এইসময় একটা হাত এসে ওকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেল ক্যান্টিনটার ঠিক পেছনের রাস্তায়। হল্লাটা ওরা পেছনে ফেলে ছুটতে ছুটতে ইউনিভার্সিটির পেছনমুখে যে লম্বা ছোট দীঘিটা সেইখানে এসে হাজির হল। 

--ওটা কী ছিল ? – ঊর্মি হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে। 

--জানিনা, তবে মনে হয়  সংগঠনের কোনো ঝামেলা টামেলা ...  —ছেলেটা জবাব দেয়।

--তুমি কে  ? – 

--আমি অনিমেষ। --

--কোন ডিপার্টমেন্ট ? –

--মাস কমিউনিকেশন। আর তোমার ? --

-- আমি বটানি। 

সেই শুরু। অনিমেষ রোজ দেখা করত ঊর্মির সাথে। বাপিদার ক্যান্টিন ছিল সেই জায়গা। অনিমেষের একটা স্টাইল ছিল। সামনের ঢেউ খেলানো চুলটা ও বাঁহাতে ওপরদিকে তুলে ধরত বারবার। ঊর্মি জিজ্ঞেস করেছে অনেকবার। অনিমেষের ওটা অভ্যেস ছিল। অনিমেষের আরও একটা অভ্যেস ছিল। কবিতা। 

--মাস কমিউনিকেশনের ছেলে কবিতা কীভাবে লেখে, অনিমেষ ! – 

--যেভাবে বটানির মেয়ে গান গায়।–

ঊর্মি চমকে উঠেছিল অনিমেষের কথায়। ও তো সেভাবে কোথাও গায় না, তবে অনিমেষ কীভাবে জানল ! 

তা আর জানা হয়নি তার। সেবার দীঘির পাশে বাঁধানো বসার ছোট্ট  জায়গাটায় দেখা করার কথা ছিল ওদের। সময়টা কি আজ মনে পড়ে ঊর্মির ! মনে হয় বসন্তের কোনো এক বিকেলবেলা। ঊর্মি ঠিক কী আশা করছিল এই দেখা করার ব্যাপারটা নিয়ে। অনিমেষকে মন্দ লাগে না ওর। বরং ভালোই তো লাগে। 

একটু বাদে বিকেলবেলাটা পেরিয়ে গিয়ে গোধূলির রঙিন আভা আবীর খেলছিল দীঘির বুকে। ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যাচ্ছিল একটানা অবিরাম। অনিমেষ আর আসেনি সেদিন । 

সেই শেষ দেখা করার কথা ছিল ওদের । 

ঊর্মি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসে সিটে। পাশের লোকটা সেই তখন থেকে  উসখুশ করছিল। ওর কী অসুবিধে হচ্ছিল বসতে!  ঊর্মি আরও সেঁটে বসে জানালার ধারে। কন্ডাক্টর ছেলেটা একবারও আজ এদিকে আসেনি। সামনের গেটে দাঁড়িয়ে হাঁকছিল। ঐ গেটটার সামনেই যত ভীড়। ওখানেই গেটটার ডানহাতে একদিক করে সেই ফোনওয়ালা ভদ্রলোকটি। এখনও বকে যাচ্ছিল একতালে। আশ্চর্য! বিরাম নেই এতটুকু ! 

ঊর্মি আবার জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে। লোকটাকে কি চেনা মনে হল ওর একবার! ভিড়ে মুখটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তাছাড়া ভদ্রলোকের মত এত ফোনব্যস্ত কোনো চেনাজানা বন্ধু তার অন্তত নেই। 

মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকাল ঊর্মি।

এরই মধ্যে বাসটা পরের স্টপেজে পৌঁছে গেছে। সামনের ভিড়টা পাতলা হতে আরম্ভ করেছে এবার। ঊর্মি লক্ষ্য করে, ভদ্রলোক এবার দাঁড়াবার জায়গাটা অন্তত ভালো করে পেয়েছে। সোজা হয়ে হাত পা ছড়িয়ে নিচ্ছে। আর ঘুরে তাকিয়ে এক দুবার দেখে নিচ্ছে তারই দিকে।

ঊর্মি ফের মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে । 

বাসটা ছাড়ল। এর একটা পরের স্টপেজে ঊর্মি নেমে যাবে। ভিড় এখন নেই বললেই চলে । লোকজনের সংখ্যা  এবার হাতে গোনা যাবে।

ঊর্মি দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছিল। একটা দোটানা কাজ করছিল ওর মনে। লোকটা কী ওকে দেখেছে ! কই, সেরকম তো মনে হল না কিছু । 

মোবাইলে ক্রমাগত স্ক্রল করে যাচ্ছিল ঊর্মি অস্থিরভাবে। চেনা অচেনা অনেক নাম্বার ওপর থেকে নীচে নেমে যাচ্ছিল চুপিসারে একে একে।

অনিমেষের নাম্বারটা খুঁজে পেল ও ওখানেই। বহুদিন বহুকাল বাদে। ডায়াল করল। নাম্বারটায় ।

 বিজি বলছে...। 

 লোকটা কিন্তু এখনও কথা বলছে মোবাইলে। তাই কী ব্যস্ত দেখাচ্ছে ! 

ভারী ঝামেলা তো ! ঊর্মির ভেতরে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে এবার । অস্বস্তি তো সেদিনও হয়েছিল ওর। 

হঠাৎ একটা জোর ব্রেক কষে বাসটা ভিআইপি লেনে এসে দাঁড়াল । ঊর্মি চমকে উঠল। লোকটা কোনোদিকে না তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে নেমে গেল সোজা । 

তাকিয়ে দেখে ঊর্মি। তারপর মোবাইলটা একপাশে সরিয়ে রাখে। যত্তসব উটকো চিন্তা ! ডিসগাস্টিং ! 

পরের স্টপেজে নামার জন্য তৈরী হচ্ছিল ঊর্মি। হঠাৎ মোবাইলটা ভাইব্রেট করল হাতের মধ্যে। একটা মেসেজ.... 

--কেমন আছ ঊর্মি ? বহুদিন বাদে... ----

ঊর্মি যেন থতমত খায় । তড়িৎ গতিতে জানালা গলে  বাইরের দিকে মুখ বাড়ায়। 

রাস্তার পাশে ডিভাইডারে উঠে লোকটা ওর সামনের ঢেউ খেলানো চুলটা তখন বাঁ হাত দিয়ে ওপরের দিকে তুলে নিচ্ছে আর ডান দিকের গলিটায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

--অনিমেষ  ! – ফিসফিস করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বেরিয়ে আসে শব্দটা ঊর্মির গলা থেকে ।

অনিমেষকে দ্রুত আড়াল করে বেরিয়ে চলে সামনে বাসটা। 

ঊর্মি মেসেঞ্জারে দ্রুত টাইপ করছিল,  ভালো।তুমি কেমন ? –

--আমিও ভালো। কোথায় থাকো, কী কর ? –

--বারুইপুর। তেমন কিছু না। কোম্পানী।

--চিনতে পেরেছিলে ! 

--সুযোগ কই আর দিলে ! দেখা করনি কেন সেদিন ! 

--আর একটা সুযোগ দাও। দেখা হলে সব বলব তোমায় । 

হঠাৎ একটা ফোন কলে মেসেঞ্জারের মনোসংযোগটা  কেটে যায় ঊর্মির। ফোনটা রিসিভ করে।

নন্তাই স্কুলের প্রোগ্রামে ফার্স্ট পজিশন পেয়েছে। অফিসে যাবার প্রোগ্রাম না থাকায় আজ নন্তাইয়ের স্কুলে গিয়েছিল নয়ন।  ফোনটা ও ওখান থেকেই করছে। ছুটি হলে তারপর নন্তাইকে নিয়ে একসাথে ফিরবে। ছেলেটা আজ দারুণ খুশি । 

ফোনটা নামিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয় ঊর্মি। মেসেঞ্জারে তাকিয়ে দ্যাখে, অনিমেষ টাইপিং এ ব্যস্ত তখনও।

মেসেঞ্জার লিভ করে ঊর্মি। কিছু কথা বোধহয় অব্যক্ত থাকাই  চিরমঙ্গল।

 কন্ডাক্টর ছেলেটা একবার হাঁকল, সল্টলেক। ঊর্মি ফোনটা রেখে ব্যাগটা কাঁধে নেয় বাস থেকে নামার জন্য।

............................

[অলংকরণ : বিবস্বান দত্ত] 

#গল্প #রবিবারের গল্প #silly পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

2

Unique Visitors

219101