দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ...

সবেমাত্র একুশ শতকে পা দিয়েছি তখন আমরা। অন্য সবকিছুর মত বাংলার বেতার জগতেও এসেছিল বিপ্লব, “আমার 106.2 FM”-এর হাত ধরে৷ সেই সময় থেকেই আমাদের মনে-প্রাণে নিত্য যাওয়া-আসা শুরু হয় বাংলা গানের দল দোহার-এর 'খেজুর গাছে', 'কুন গাঙে' বা 'রূপসাগরে'-র মত গানগুলির। আর এগুলির নেপথ্যে ছিলেন বাংলা আর অসমের লোকসঙ্গীতের নবজাগরণের পথিকৃৎ কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য৷ অন্য সবার মাঝে তাঁর গলায় 'আমি দোহারের কালিকাপ্রসাদ' শুনে আমরা বুঝেছিলাম যে বাংলার লোকসঙ্গীতকে আজও একইভাবে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার মধ্যে গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় করে তোলা যায়৷ কালিকা নিজে শুধু একজন সুরসাধকই ছিলেন না, একই সঙ্গে একজন সঙ্গীত-গবেষকও ছিলেন। ফকির লালন শাহ তো বটেই, সেই সঙ্গে শাহ আব্দুল করিম, আব্বাসউদ্দিন, হাসন রাজা, কাঙাল হরিনাথ, গগন হরকরা-সহ বহু লোকসঙ্গীত-সাধকদের বিস্মৃতপ্রায় অনেক কাজই পুনরায় প্রাণ পেয়েছে কালিকাপ্রসাদ তথা দোহারের পরিবেশনায়৷ দোহার-কে কালিকা “ব্যান্ড” বলতে পছন্দ করতেন না, তাঁর কাছে দোহার ছিল “গানের দল”, রাজীব-মৃগনাভি-অমিত-সুদীপ্ত-ঋত্বিক-সত্যজিৎ-নিরঞ্জনদের নিয়ে সে যেন এক আনন্দ-মেলা। সমকালের “পাব্লিক কি খাবে”-র সংষ্কৃতি থেকে বেরিয়ে কিভাবে নিজের গবেষণা, শিল্পবোধ আর বাংলার লোকসংষ্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার নিরলস প্রচেষ্টা দিয়ে নিজের গানের শ্রোতা নিজেই তৈরী করে নেওয়া যায় তা করে দেখিয়েছেন কালিকাপ্রসাদ৷ আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেছি তাঁর “রূপসাগরে”, “মাটিস্বর” বা “জলে না যাইও”-র মত অ্যালবামগুলি৷ বেশ কিছু নমুনা পেয়েছি “মনের মানুষ” বা “বিসর্জন”-এর মত ছবিতেও৷ কোথাও একতারা, দোতরা, খমক, ঢাক, বাংলা ঢোলের মত লোকসঙ্গীতের যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহার, এবং একই সঙ্গে গিটার, ভায়োলিন বা পিয়ানোর মত পাশ্চাত্য যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহার তাঁর গানগুলির মাধুর্য্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷ গানের কিছু জায়গায় কোরাস, হামিং এবং হারমোনাইজেশনের সুনিপুণ ব্যবহার তাঁকে এবং তাঁর পরিবেশনাকে আমাদের হৃদয়ের আরও কাছাকাছি এনে দিয়েছে৷ কালিকাও আমাদের দেখিয়েছেন যে, কীভাবে বিভিন্ন সময়ে লালন ফকির, গগন হরকরা বা কাঙাল হরিনাথের মত অনেকেরই গানের ছায়া পড়েছে রবীন্দ্রনাথের গানে৷ তথাপি রবির আলোয় চিরকালই এঁরা যেন কোথাও ঢাকা পড়ে গেছেন, হয়তো আমাদেরই জন্য। বাংলা লোকসঙ্গীতের গাড়ী যতদিন চলতে থাকবে লালন, গগন, হাসন রাজাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রকাশিত থাকবেন কালিকাপ্রসাদও৷ রেডিও-তে তাঁর গলায় সেই “আমি দোহারের কালিকাপ্রসাদ” চিরকাল একইভাবে শিহরিত করে যাবে আমাদের৷ কালিকাপ্রসাদের উদ্যোগে হওয়া “সহজ পরব” পরিচিতি দিয়েছে এপার আর ওপার বাংলার বহু লোকশিল্পীদের৷ কালিকা দেখিয়ে গেছেন যে Radcliffe Line অন্তর থেকে কিন্তু দুই বাংলাকে আলাদা করতে পারেনি।
Triparna
সমৃদ্ধ ভাণ্ডার তোর।
Chandrima
Lekha ar gaan 2toi onobodyo. Kalikaprosad babur okalmrityu amader Bangali der kache ebong Bangla loksongit er jogote bishal nokhtropoton. Tar jonmodin upolokhye ei proyash khb e prosongsoniyo.
রূপসা
রাহুল দা , লোকসংগীতের যে আমাদের অমূল্য ভান্ডার আছে,তা কালিকাপ্রসাদ তাঁর গবেষণামূলক কাজের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন রূপে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন,তাই উনি সবার হৃদয়ে এক অন্য স্থানে সদা বিরাজমান।তোমার লেখা টা দারুন লাগলো পড়ে এবং সাথে গান টি অসাধারণ ,ওনাকে জন্মদিনে স্মরণ করার এর থেকে আর কি ভালো উপায় হতে পারে! রূপসা😊