কতটা কান পাতলে আমাদের কান্না শোনা যাবে, থিয়েটার?

২০১৯ সালে সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের নামে একাধিক অল্পবয়েসি মেয়ে সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের অভিযোগ এনেছিলেন। তার মধ্যে দুজন আইনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এবং সেই কেস এখনও চলছে। আমরা জানি যে এইসব কেস চলতে থাকে, চলতেই থাকে, নিষ্পত্তি হয় না। এরই মধ্যে সুদীপ্ত বেল পেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে অনেকেই নারী নিগ্রহের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছিলেন, সুদীপ্ত যেসব নাটকের সঙ্গে যুক্ত সেসব নাটক বন্ধ হয়ে গেছিল। তারপর আস্তে আস্তে নাট্যজগতের এক অংশ তাঁকে আবার কাজের জায়গা করে দিতে শুরু করল। হাতেগোনা কয়েকজন যদিও তাতে আপত্তি জানাচ্ছিলেন, কেউ পাত্তা দিচ্ছিলেন না।
এরপর সুদীপ্ত, সুমন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘টিনের তলোয়ারে’ গান গাইলেন (মার্চ ২, ২০২৪, ডবল শো)। রোজকার প্রতিবাদীরা ট্যাঁ ফোঁ করল। তাতে কোনও লাভ হত না, সুদীপ্ত নির্বিঘ্নে আবার রেভোলিউশনারি থিয়েটার করতে শুরু করতেন, কারণ যারা আপত্তি জানাচ্ছিল, তারা নেহাতই চুনোপুঁটি, তাদের কথার দাম নেই (যারা আপত্তি-টাপত্তি জানায়, তারা অবশ্য চুনোপুঁটিই থাকে। বাই চান্স রাঘব বোয়ালে প্রমোশান হলে সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানানোয় ইতি টানে, এবং সিস্টেম টিকে থাকে)। হঠাৎ খেলা বদলে গেল বেণীদি ঝাঁপিয়ে পড়ায়। কারণ বেণীদি এখন সেলিব্রিটি, বেণীদির কথা অনেকের কাছে পৌঁছায়। এরপর আনন্দবাজার থেকে বেণীদির আর্টিকেল উড়ে যাওয়ায় আরও গণ্ডগোল হয়ে গেল। যে লিবারালরা মনে করেন আজকালকার মেয়ে হয়ে অ্যাবিউজারকে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে থাপ্পড় মারতে পারেনি যখন, তখন নিশ্চয়ই তার সায় ছিল, এখন ভিক্টিম সাজছে; তাঁরাও অনেকে এইবার বলতে বাধ্য হলেন যে, না, আর্টিকেল সরিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি।
মনে আছে, ২০১৩-এ সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘কাঙাল মালসাট’ সেন্সরশিপে আটকে গেছিল। শেষ অব্দি যখন রিলিজ করল, তখন একদিন সকালের শো দেখতে গিয়ে, হতাশ হয়ে ফিরেছিলাম। অল্প দর্শক এসেছে বলে নাকি শো হয়নি। সত্যি অল্প দর্শক না অন্য কারণে শো বন্ধ হয়েছিল সেদিন, জানি না। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছিল নির্ঘাত তৃণমূলকে গালি দিয়েছে বলে সিনেমাটা বন্ধ করে দিল। খুব রাগ হয়েছিল, আর খুব গর্বও হয়েছিল, যে ‘আমাদের’ থিয়েটারে এমন লোক আছে, যার সিনেমা রাষ্ট্র ভয় বন্ধ করে দেয়। সেইরকমই, আনন্দবাজার ঠিক কেন বেণীদির আর্টিকেল উড়িয়ে দিল তো আমরা সত্যিই জানি না, কিন্তু স্বভাবতই মনে হয়েছিল যে এটা মুখ বন্ধ করার একটা কৌশল। রাষ্ট্রের পরে, রাষ্ট্রের মধ্যেও তো কতরকম ক্ষমতা-কাঠামো থাকে।
যাই হোক, আর্কাইভে সেই আর্টিকেল পাওয়া গেছে, এবং একরকম সুবিধেও হয়েছে এতে। যাঁরা ব্যাপারটাকে একেবারে দেখতে না পাওয়ার ভান করছিলেন, তাদেরও কাউকে কাউকে এবার চোখ তাকিয়ে দেখতেই হয়েছে। মার্চ ৩ থেকে যে ক্যাঁওম্যাঁও আমরা চালিয়ে যাচ্ছিলাম, বেণীদির লেখা আনন্দবাজারে বেরনো এবং উড়ে যাওয়ার পর, ফাইনালি তার প্রত্যক্ষ উত্তর এসেছে ৭ই এপ্রিল। রোববারে লিখেছেন সুমন মুখোপাধ্যায়।
তার মাত্র একদিন আগে, ৬ই এপ্রিল ‘টিনের তলোয়ার’ নাটকের নিবেদক বিলু দত্ত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান যে, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে নাটকে যুক্ত করা তাদের ভুল হয়েছে। প্রথম দিনের শো-এর পরেই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন ভুল, কী ভুল, তার কোনও উল্লেখ সেখানে ছিল না। হয়তো সুদীপ্তর গলা আজকাল ভালো নেই, সেইটা না জেনে তাঁকে নেওয়াটা ভুল হয়েছিল। তাই এটাকে প্রত্যক্ষ উত্তর বলে ধরতে পারছি না।
৭ই এপ্রিলের লেখায় সুমন মুখোপাধ্যায় বলেছেন, নিগ্রহের ঘটনাকে তিনি সমর্থন করেন না। স্পষ্টই বলেছেন, যে সুদীপ্তকে “সরিয়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের পিছনে বহু মানুষের প্রতিবাদ ছিল এবং ছিল তাঁদের বয়ানে লেখা অনেক মানুষের যাপনযন্ত্রণার কথা” যা তিনি আগে জানতেন না– বা ধরে নিয়েছিলেন যে সুদীপ্ত কিছুদিন লকআপে থাকায় (সেটা শাস্তি নয় কিন্তু, শাস্তি আদালত এখনও দেয়নি) তাঁদের যন্ত্রণার উপশম হয়েছে। এমনটা যে নয়, তা জানা মাত্র তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন। এটুকুর জন্য সুমন মুখোপাধ্যায়কে অনেক ধন্যবাদ।
তবে এই লেখা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া নয়। সুমন অনেক ‘কিন্তু’ রেখেছেন, প্রশ্ন, পালটা অভিমান, ইত্যাদি। তিনি মার্জিত ভাষায় যা লিখেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কটু ভাষায় সেইসব প্রশ্ন এবং সেই সংক্রান্ত ইয়ার্কি, তাচ্ছিল্য, ইত্যাদি চলছে। এর মধ্যে যে কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরে ঘুরে আসছে তার একটা হল, “চারিদিকে এত মলেস্টার, ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়, তার মধ্যে সুদীপ্তকে নিয়ে এত কথা কেন?”
এই প্রশ্নের সুতো ধরে বলি, কথাটা সত্যি। সুদীপ্ত যা করেছেন, তা ঘৃণ্য অবশ্যই, কিন্তু বেনজির কিছু নয়। নাটক শেখানোর অছিলায় সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ তো চলেই কলকাতায়। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় এবং রাজা ভট্টাচার্য– এঁদের নিয়ে আলাদা করে প্রকাশ্যে এত কথা, কারণ কয়েকজন নেহাত সাহসী সারভাইভার এঁদের নামে পুলিশ কেস করেছেন। না হলে প্রকাশ্যে বললে এতক্ষণে মানহানির মামলা করতেন না? আড়ালে কাকে কাকে নিয়ে কথা হয়, সবাই জানেন। একজন সারভাইভার কোন কোন দলে কাজ করেছে বললে কলকাতার নাটকের ভিতরের লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলে দেবেন, “তাহলে নিশ্চয়ই অমুক মলেস্ট করেছিল? নাকি তমুক?” এতটাই সর্বজনবিদিত আমাদের অ্যাবিউজের কালচার!
আমি নিজেও একজন সারভাইভার। আমার অ্যাবিউজারের যখন কাগজে ছবি-টবি দেখি, আমি ভাবি, দোষ তো আমারও, আমি তো কল আউট করিনি। কারণ কল আউট করলে পুলিশে যেতে হবে, কেস করতে হবে, অবাঞ্ছিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, রিট্রমাটাইজড হব, কাজকর্ম নষ্ট হবে, ইত্যাদি প্রভৃতি। তার থেকে ওই দলে চেনা কেউ গেলে বলে দিই, নিজের দায়িত্বে যাস। অথচ অচেনা মেয়েরাও তো যায়, যারা অত ঘাঁতঘোঁত জানে না, প্রথমবার নাটকের দলে নাম লেখাচ্ছে অনেক স্বপ্ন নিয়ে। এ মুখ, ও মুখ ঘুরে শুনি, তারাও মলেস্টেড হচ্ছে। এর দায় তো একরকম আমার উপরেও বর্তায়। নিজের মানসিক শান্তির কথা না ভেবে যদি প্রকাশ্যে কল আউট করতাম, হয়তো আরও দুটো মেয়ে বেঁচে যেত। আমি পারিনি। আমি নিজেকে বাঁচিয়েছি। আরও অনেকের মতো ভেবেছি, যে আগে নিজে ঠিক থাকি, তারপর প্রতিবাদ হবে।
আমরা কাউকে কল আউট করতে জোর করতে পারি না। কারণ কল আউট করার পর যে অশান্তি, সোশ্যাল মিডিয়ায় মব লিঞ্চিং, কোর্টে দৌড়নো, উকিল ধরা, জলের মতো ব্যয়, নাটকে কাজ না পাওয়া, বাড়ির লোকের টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া, এইসব হবে; সেটা তো যে কল আউট করছে তাকেই সামলাতে হবে। তাই অপরাধ যত হয়, কল আউট তত হয় না। এই সমস্ত বিপত্তি সত্ত্বেও যে মেয়েরা কল আউট করেছে, এমনকি পুলিশ কেস করেছে, তারা আমাদের সবার কাজ অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। তাদের পাশে এখনও না দাঁড়ালে কি খুব পাপ হবে না? এখন কেউ তাদের পাশে না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এই দায়টা নেওয়ার সাহস পাবে আর? আমি কী বলব আমার জুনিয়ার মেয়েদের? আমার অগ্রজরা আমায় যা বলেছেন? আমি চেপে গেছি, তুইও চেপে যা, এভাবেই টিকে থাকতে হয়? বলতে চাই না, তাই ‘নিজের চরকায়’ তেল না দিয়ে, কথা চালিয়ে যেতে হয়।
আবার বলছি, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় এবং রাজা ভট্টাচার্যের কেস প্রকাশ্যে এসেছে। পাবলিক ডোমেনে এসেছে। যাদের প্রকাশ্যে কল আউট করা হয়নি এখনও, তাদের ক্ষেত্রে তাও একটা আড়াল থাকে। মিথ্যে আড়াল হলেও থাকে। কেউ বলতে পারেন, আমি তো জানতাম না। জানলে অবশ্যই সারভাইভারদের পক্ষে থাকতাম। সুদীপ্তর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা না জানার নয়। তাই এখানে একটা পক্ষ নিতেই হয়। বাংলা থিয়েটারের প্রথম সারির শিল্পীরা কোন পক্ষ নেবেন, কীভাবে নেবেন, তার ভিত্তিতে ঠিক হবে আমাদের আগামী।
এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন যে তাঁরা সুদীপ্তর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি বিশ্বাস করেন না। অনেকগুলি মেয়ে একই অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও কারণে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি ব্যাপারটা। তাঁদের আমার কিছু বলার নেই। তাঁরা কোন পক্ষ নিয়েছেন, সেটা স্পষ্ট।
কিন্তু যাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অবিশ্বাসের নয়? ২০১৯-এর পুলিশ কেসের পর সুমন মুখোপাধ্যায়ের বয়ান বেরিয়েছিল টাইমস অফ ইন্ডিয়ায়। সেখানে, বা ৭ই এপ্রিলের লেখায় সুমন একবারও বলেননি যে তিনি সারভাইভারদের বিশ্বাস করেন না। অর্থাৎ, তিনি জানেন এবং বিশ্বাস করেন যে, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় থিয়েটারের স্পেস ব্যবহার করে, ছাত্রদের শেখার উৎসাহের, ভরসার সুযোগ নিয়ে, কোনও এক ‘ডায়াফ্রাম টেকনিক’ শেখানোর নাম করে তাদের অ্যাবিউজ করেছেন। এবং, সুদীপ্ত ক্ষমা-টমা কিছু চাননি তারপর। এমনকি “আমার ব্যবহারে কারও খারাপ লেগে থাকলে আমি দুঃখিত, ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব যেন এমনটা না হয়” ধরনেরও কিছু বলেননি (অন্তত আমার নজরে তেমন কিছু পড়েনি)। বলেছেন, এই টেকনিক তিনি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শিখেছেন। যাদের শিখিয়েছেন, তারা শিখতে চেয়েছিল বলেই শিখিয়েছেন, তাদের কৃতজ্ঞ হওয়ার কথা। মানে একরকম বলেই দিচ্ছেন, বেশ করেছি।
এইখানে বলে রাখি, এই ডায়াফ্রাম টেকনিকের কোনও সূত্র সুদীপ্ত দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে না। এরকম টেকনিক সত্যি আছে কি না জানি না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আছে, এবং সুদীপ্ত যেরকম শিখিয়েছেন, টেকনিকটি সত্যিই সেরকম, সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ সুদীপ্তর উদ্দেশ্য ছিল না। সেক্ষেত্রেও শিক্ষকের কি অধিকার আছে, ছাত্রকে ট্রমাটাইজ করার? অস্বস্তির কারণ হতে পারে এমন একটি টেকনিক শেখানোর সময় শিক্ষকের কি প্রত্যেক মুহূর্তে জিজ্ঞেস করার কথা নয়, ছাত্রের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না? এবং তারপরেও ছাত্র যখন জানাচ্ছে যে সে ভায়োলেটেড বোধ করেছে, তখন শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চাইবেন না? ইগো দেখিয়ে বলবেন তোমার তো কৃতজ্ঞ হওয়ার কথা? যা শিখিয়েছি, চুপচাপ তাই শিখে খুশি থাকবে, প্রশ্ন করবে না?
এক্ষেত্রে যাঁরা সারভাইভারদের কথা বিশ্বাস করেছেন, মানে বিশ্বাস করেছেন যে সুদীপ্ত দোষী– যাঁরা এটাও জানেন যে সুদীপ্ত অনুতপ্ত অব্দি নন (অন্তত তাঁর অনুতাপের কথা সারভাইভারদের জানাননি), তাঁরা যদি আবার সুদীপ্তকে থিয়েটার স্পেসে ডেকে আনেন, তার মানে কী দাঁড়ায়? এইটুকুই, যে, ওই স্পেসে অল্পবয়েসি ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা তাঁদের কাছে খুব একটা জরুরি নয়। এইটুকুই, যে, নাট্যশিক্ষার বস্তাপচা ধারার কোনও বদল তাঁরা চান না। কিছুদিন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি মানেই সব চুকেবুকে গেছে? বা বোঝাপড়া হয়ে গেছে? আমরা যে সেফ স্পেস চাই সে কথা বলে যেতে হবে, বলেই যেতে হবে, দু-মিনিট চুপ করলেই সবাই ভুলে যাবেন, আবার বারবার বললেও রাগ করবেন। আমরা কোনদিকে যাই বলুন তো?
সুমন বলেছেন তিনি নাটকের আগের তাড়াহুড়ো, উত্তেজনায় এ ব্যাপারটা খেয়াল করেননি। হতেই পারে। তবে এই উদাসীনতা একটা প্রিভিলেজ। প্রিভিলেজ থাকাটা অপরাধ নয়। আমাদের সবার কিছু না কিছু প্রিভিলেজ থাকে। যতই প্রতিবাদী হই না কেন, প্রিভিলেজের রঙিন চশমা চোখ থেকে খুলে রাখা যায় না সবসময়। সেই রঙিন চশমা দিয়ে দেখলে অনেক অন্যায়কে অন্যায় মনে হয় না। তবে যাদের রঙিন চশমা নেই, তারা সত্যিটা ধরিয়ে দিলে অপমানিত না হওয়া, অভিমান না করার মধ্যেই অ্যালাইশিপ। যারা সুমনের বিবৃতির পরেও গোঁজ হয়ে আছে, তারা স্রেফ অ্যালাইশিপ আশা করেছিল, এইটুকুই।
সুমন লিখেছেন, “কী যে ঠিক করতে হবে, এখনও বুঝিনি।” না বোঝা খুব স্বাভাবিক। অনেকদিন ধরে একরকমভাবে চলে এসেছে। এখন আমরা অন্যভাবে চলার, চালানোর চেষ্টা করছি। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরা সত্যিই বুঝতে পারছেন না কী হচ্ছে। কিন্তু, আপনারা কি জিজ্ঞেস করছেন? সত্যি সত্যি বুঝতে চেয়ে জিজ্ঞেস করছেন? কথা বলুন। ডায়লগে আসুন। ঠিক ঠিক শুভাকাঙ্ক্ষী হতে গেলে তো জানতে হয়, আপনি যার ভালো করতে চাইছেন, তার কী মনে হয়? কীসে তার ভালো হবে? আজকের থিয়েটারের অল্পবয়েসি মেয়েদের যদি একটা সুস্থ কাজের জায়গা আপনি দিতে চান, কোন জায়গাটাকে তারা সুস্থ মনে করছে, সেটা জানতে হবে।
‘কল আউট’ আর ‘কল ইন’-এর মধ্যে পার্থক্য আছে। সুমন মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশে যে যা লিখেছেন এখন অব্দি, যা চোখে পড়েছে, সবটাই ‘কল ইন’– আপনি এই কাজে আমাদের সহযোগী হন, সমব্যথী হন, এই বিশাল চাওয়া সবকটা লেখাতেই আমার চোখে পড়েছে।
আমরা কেউ সবকিছু ঠিক করিনি। বেণীদি রোববারে লিখেছে- “আমি সারাজীবনই চুপচাপ ছিলাম। ... ভেবেছিলাম নিজেকে গোছানোটাই আমার একমাত্র কাজ। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে কিছু হবে না আদতে। অন্যায় করেছে, কিছু বলিনি। ... কিন্তু এখন যখন সেই অন্যায়টা নিয়ে হাসাহাসি করছে, সামাজিকভাবে মশকরা করছে, ভেংচাচ্ছে, যে মেয়েরা কষ্ট পাচ্ছে, যারা ভিক্টিম, যারা ট্রমাটাইজড, তাদের ব্যঙ্গ করছে, তখন আর চুপ করে থাকা যায় না।” ভাগ্যিস নিজেকে গুছিয়েছিল বেণীদি, অন্তত খানিকটা দাপটের জায়গা থেকে এই কথাগুলো বলতে পারল বলে তো এখনও কথা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : পুরনো ‘টিনের তলোয়ার’-এ জং ধরেনি? / রণিতা চট্টোপাধ্যায়
এই যে সব অন্যায়ের সবসময় প্রতিবাদ করতে না পারাটা বেণীদি মেনে নিয়েছে, এটা ওর দুর্বলতা না, এটাই জোর। এটা মেনে নিয়েছে বলে তো এখন জোর গলায় বলতে পারছে। বেণীদি নিজেকেই কল ইন করেছে। সুমন মুখোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, আরও অনেক অগ্রজ যদি নিজেদের কল ইন করেন, বড্ড ভালো হয়– এতদিন একরকমভাবে চলে এসেছি, আমরা সবাই একরকম অন্যায় সিস্টেমের অংশীদার ছিলাম, সেই সিস্টেমকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সাহায্য করে এসেছি, এইটা আমাদের মানতে হবে। তা না করে, আমি আর থিয়েটারে থাকব না ইত্যাদি বলা তাঁদের কাছে কাম্য নয়। আপনাদেরই তো থিয়েটার। সত্যি সত্যি কত মেয়ে থিয়েটার ছেড়ে গেছে ‘সেফ স্পেস’ না পেয়ে, আমরা জানতেও পারব না। আর এত জলঘোলার পরেও কিন্তু ‘টিনের তলোয়ারে’র প্রতিটি শো হাউজফুল, যে বিশাল সংখ্যক মানুষ সেই নাটক দেখতে আসছেন– আমরা যে প্রশ্নগুলো তুলছি, তা তাঁরা জানেন না, অথবা পাত্তা দেন না। এরপরেও কি বোঝা যাচ্ছে না, ক্ষমতা কোনদিকে?
নিজের চশমা কত রঙিন যদি স্বীকারই না করেন, তবে চশমা খুলে দেখবেন কী উপায়ে?
.....................
[হেডপিসের ছবিতে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়]
#bengali theatre #বাংলা থিয়েটার #Gender Equality
Chandreyee Mitra
Academy of Fine Arts-er samne abar pratibad sabha organize kora hok, sign collection hok ....theatre community-r modhye jara ba jader close relatives legal practitioners achhe, tader ke amontron janiye seminar, session type organize kora hok , law kibhabe esob khetre ekti meyeke protect korte pare, koto prompt ayiner help paowa jabe, ba immediate hit back korle tar support-e law ta strong thakbe egulo niye tader ekta training session howa uchit ....ekta protective committee/forum gothon kora hok, theatre practising men-women niye, otai hobe first complaint cell ....Human Rights Commission type ....tarai sochchar hobe meyetir sathe ghote jaowa abuse niye, police , media ityadi ke tarai convey korbe ebong upojukto byabostha neyoar jonyo pressurize korbe , sathe constant meyetike mental support provide korbe, trauma theke beriye aste help korbe .....
Aritra De
হক কথা