বিনোদন

বাংলা ছবির সর্বনাশ করেছে পরিবর্তন

বিপ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য্য July 10, 2021 at 4:47 am বিনোদন

এ লেখার শিরোনাম দেখে বোধহয় এতক্ষণে ভুরু কুঁচকে গেছে অনেকেরই। বাংলা বাণিজ্যিক ছবি, তাই নিয়ে আবার নিবন্ধ? চায়ের দোকান বা রেলের কামরায় টুকরো আড্ডা ছাড়া বাংলা বাণিজ্যিক ছবির আবার কোথাও প্রবেশাধিকার আছে নাকি, বিশেষ করে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার মত কুলীন ক্ষেত্রে? আপনি একা নন মশাই, এফ আর লিভিস, থিওডোর অ্যাডোর্নো বা হারবার্ট মারকিউজের মত জাঁদরেল তাত্ত্বিকরাও বাণিজ্যিক সাহিত্য বা চলচ্চিত্রের সাংস্কৃতিক তাৎপর্যকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, আর পাঁচটা বাজারজাত পণ্যের মতোই বাণিজ্যিক শিল্প আদতে লাভের গুড় লুটেপুটে নেবার জন্যই তৈরি হয়, অতএব ওসব নেহাত ফেলনা জিনিস। তবে কিনা মানুন আর নাই মানুন, এ কথা সত্যি যে বাজার আজ সর্বত্র, আর সিংহভাগ মানুষ বিনোদন বলতে এই বাণিজ্যিক সংস্কৃতিকেই বোঝে। তবে বাজার যা খাওয়াবে পাবলিক তাই গপগপিয়ে গিলবে, জনগণকে এতটা আকাট ভাবার পিছনে কিন্তু লুকিয়ে আছে শিক্ষার অহঙ্কার। স্রেফ বিপুল জনসংযোগের নিরিখেই বাজারজাত শিল্প যথাযথ বিশ্লেষণের দাবি রাখে, আর বাংলা বাণিজ্যিক ছবির ক্ষেত্রেও একথা একশো ভাগ সত্যি।

আশির দশকে, অর্থাৎ প্রসেনজিতের কেরিয়ারের একেবারে প্রথম দিকের ছবিগুলোয় একটা চেনা প্যাটার্ন দেখা যায়, তিনি জিপগাড়ি চালিয়ে পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অথবা মাফলার গলায় জড়িয়ে চা বাগানে ঘুরে ঘুরে বাপ্পি লাহিড়ীর গলায় গান গাইছেন। সুরকার ছাড়াও এই ছবিগুলোর নায়িকাদের নামের পাশে ব্র্যাকেটে জ্বলজ্বল করত ‘বম্বে’- বিজয়েতা পণ্ডিত, ফারহা, জুহি চাওলা, দীপিকা চিকলিয়া। ‘অমর সঙ্গী’, ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’, ‘আশা ভালোবাসা’- ছবিগুলোর নাম থেকেই বোঝা যায়, মূল বিষয় হল অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের প্রেম। সত্তরের দশকের সাদাকালোর একঘেয়েমি ছেড়ে পর্দা জুড়ে বাহারি রঙের খেলা, পাহাড়ি এলাকার নিসর্গ দৃশ্য, নায়ক নায়িকার ঝলমলে জামাকাপড়, সব মিলিয়ে বেশ একটা খোশমেজাজি ব্যাপার। তখন উত্তাল সত্তরের দশকের রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষ হয়েছে, ক্ষমতায় এসেছে কমিউনিস্ট পার্টি। মানুষের মনে তাদের নিয়ে অনেক আশা, অনেক আকাঙ্ক্ষা তাদের ঘিরে। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, সেই আশারই কি প্রতিফলন ঘটেছিল পর্দায় ঝলমলে যৌবনের উদযাপনের মধ্যে দিয়ে? অর্থনৈতিক বৈষম্য এসেছে এই ধরনের ছবিতেও, ‘অমর সঙ্গী’ ছবিতে ধনী পরিবারের প্রসেনজিতের সঙ্গে চা বাগানের কুলির মেয়ে বিজয়েতা পণ্ডিতের প্রেম বা ‘বদনাম’ ছবিতে ধনী নীলম কোঠারির সঙ্গে গরিব প্রসেনজিতের ভালোবাসার মাধ্যমে, তবে ছবির শেষে সেই ভালোবাসার সাফল্য যেন ছিল সামাজিক বৈষম্য মিটিয়ে সমন্বয় সাধনের আশারই বহিঃপ্রকাশ। তাপস পালের ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘মঙ্গলদীপ’ প্রভৃতি ছবিগুলোতে আবার পাই মিউজিকাল ছবির ঘরানা। তবে এই সময়ে ‘একান্ত আপন’, ‘আক্রোশ’ প্রভৃতি ছবিতে ভিক্টর ব্যানার্জি অভিনীত চরিত্রগুলোতে একটা অন্য রকমের ইমেজ লক্ষ্য করা যায় বটে। ‘একান্ত আপন’ ছবির রণা গুণ্ডা বা ‘আক্রোশ’ ছবির সম্রাট, এরা আইনের চোখে অপরাধী হলেও হৃদয়বান, অসাধু ব্যবসায়ী বা শয়তান রাজনৈতিক নেতার যম। নতুন সরকারের আমলেও ক্ষমতার অপব্যবহার যে থামেনি, সাধারণ মানুষের আশার ইমারতে যে ইতিমধ্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে, এ ধরনের চরিত্রগুলো ছিল তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।



   আরও পড়ুন

টমাস হার্ডি, রাজস্থান ও এক আশাভঙ্গের কাহিনি


এই ফাটল অনেকাংশে বৃদ্ধি পেল নব্বইয়ের দশকে, যখন চরমে পৌঁছল বামফ্রন্ট সরকারের অধঃপতন। তোলাবাজি, লকআউট, মাস্তানি, ভোট রিগিং, গ্রামীণ সন্ত্রাস, কলেজে হাঙ্গামা, বাড়িভাড়া নিয়ে হুমকি- অবক্ষয়ের একের পর এক ছবি উঠে আসতে থাকল এই সময়ের ছবিগুলোতে। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলতে বলতে তথাকথিত মেহনতি মানুষের পার্টি দিব্যি হাত মিলিয়ে নিল অর্থনৈতিক উদারীকরণের ফল হিসেবে ভিড় করতে থাকা নব্যধনতন্ত্রের একের পর এক দালালদের সঙ্গে। ভোগবাদের আক্রমণে নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করল গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার। ‘পবিত্র পাপী’ ছবিতে তাই দেখি, গরিব ভোলার চাষের ছবি কেড়ে নিয়ে ভিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মদের কারখানা তৈরি করবার পরিকল্পনা করছেন। ভোগবাদ ভাঙন ধরাচ্ছে একান্নবর্তী পরিবারে, অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ‘মেজ বউ’, ‘ছোট বউ’ বা চিরঞ্জিতের ‘সংসার সংগ্রাম’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে পরিবারের জন্য সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দেওয়া বড় ভাইয়ের আদর্শকে অবজ্ঞা করছে নতুন অর্থনীতির চাকচিক্যে আকৃষ্ট ছোট ভাইয়েরা। প্রভাত রায়ের ‘খেলাঘর’ ছবির গল্প তৈরি হয়েছে পৈতৃক ভিটে প্রোমোটারকে বেচে ফ্ল্যাট তৈরি করবার পরিচিত হিড়িক নিয়ে। প্রসেনজিৎ যখন মধ্যগগনে, সেই সময়ের ‘শয়তান’, ‘বিদ্রোহ’, ‘রণক্ষেত্র’, ‘সূর্য’, ‘অন্যায় অত্যাচার’ বা ‘প্রতিবাদ’ ছবিতে সরাসরি উঠে এসেছে রাজনৈতিক নেতাদের অধঃপতনের ছবি- কখনো সে নেতা দীপঙ্কর দে, কখনও মৃণাল মুখোপাধ্যায়, কখনও বা দুলাল লাহিড়ী। নেতার পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি, মুখে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা, পার্টি অফিসে টাঙানো লাল কাপড়। তার সঙ্গী কখনও সুমিত গাঙ্গুলী বা রাজেশ শর্মার মত গুণ্ডা, কৌশিক ব্যানার্জির মত ঘুষখোর পুলিশ অফিসার বা টোটা রায়চৌধুরীর মত কলেজপড়ুয়া উঠতি মস্তান। ‘প্রতিবাদ’ ছবিতে তো লাবণী সরকার নীল পাড় সাদা শাড়ি পরে দাপুটে বিরোধী নেত্রী অবধি সেজেছিলেন। বেকারত্ব চরমে, ‘বিদ্রোহ’ ছবিতে নায়ক ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েও চাকরি পায় না, ‘প্রতিবাদ’ ছবিতে নিয়োগ পদ্ধতির চূড়ান্ত অনৈতিকতা দেখে সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে।

   নতুন শতাব্দীর প্রথম থেকেই আস্তে আস্তে বাজার দখল করতে থাকল শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, বাংলা ছবিতে বিনিয়োগ বাড়ার ফলে গোলকায়নের সঙ্গে তাল রেখে গানের আউটডোর শুটিং দার্জিলিং দিঘা বকখালি পেরিয়ে পা রাখল দেশের বাইরে, জিৎ কোয়েলের ‘বন্ধন’ ছবির গানের দৃশ্যে দেখা গেল সিঙ্গাপুরের ছবি। রিঙ্গোর ‘ক্রান্তি’ ছবিতে ব্যবহৃত হল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডলবি সাউন্ড। তবে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা বন্ধ হয়নি মোটেই। মিঠুন চক্রবর্তীর দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা পেলাম সলিল কুমার নস্করের লেখা মারকাটারি ডায়লগ, ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’ ছবির কিংবদন্তি ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’ থেকে ‘অভিমন্যু’ ছবির ‘বালিবোড়াও নয় জলঢোঁড়াও নয়, জাত গোখরো, এক ছোবলে ছবি’। সলিলের সংলাপে গ্রামীণ অনুষঙ্গ, বস্তির অশালীন শব্দপ্রয়োগ। এ যেন পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে এক নতুন ধরনের গণ আন্দোলনের সূত্রপাত, আরও কড়া ডোজের দাওয়াই। মিঠুন নব্বইয়ের প্রসেনজিতের মত ভুরু নাচিয়ে গলা কাঁপিয়ে মিনিটের পর মিনিট ধরে লম্বা প্রতিবাদী ডায়লগ দেয় না, দু এক লাইনে কথা সেরে হাত চালানো শুরু করে। এ যেন বুঝিয়ে দেওয়া যে অপশাসন মানুষের সহ্যের শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছে। শাসক দল দিনের পর দিন নিজেদের ফায়দার জন্য যে হার্মাদ বাহিনি পুষেছে, ফাটাকেষ্ট হল তাদের ভেতর থেকে উঠে আসা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানব।


আরও পড়ুন

উত্তমকুমারের অভিনয়-শিক্ষক সন্তোষ সিংহ : এক বিস্মৃত অভিনেতা


এরপর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম। বাস্তব গণআন্দোলনের হাত ধরে বাংলায় পতন ঘটল চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের। চাষের জমি বেআইনিভাবে বিদেশি লগ্নিকারীর হাতে তুলে দেবার গল্পও আমরা দেখেছি এই সময়ে স্বপন সাহার ‘তুলকালাম’ ছবিতে, যেখানে বিদেশি এজেন্ট এবং দেশি নেতাদের গলাধাক্কা দিয়ে বিদেয় করছেন মিঠুন এবং সাধারণ গ্রামবাসীরা। বাংলার শাসনে এল পরিবর্তন, এবং সর্বনাশ হল বাণিজ্যিক বাংলা ছবির। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার যা ছিল প্রধান রাস্তা, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা তুলে ধরবার সেই প্রবণতাই ক্রমশ লোপ পেতে বসল বাংলা ছবিতে। কারণ বোঝা খুব কঠিন নয়, বাণিজ্যিক বাংলা ছবির প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা মিলিয়ে একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই ছিলেন নতুন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। তাপস পাল শতাব্দী রায় চিরঞ্জিত দেবশ্রী হরনাথ চক্রবর্তীর মত পুরনো নামের পাশাপাশি এবার যোগ হতে শুরু করল দেব, সোহম, মিমি নুসরত রাজ চক্রবর্তী প্রভৃতি নতুন নাম, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতার কথা তো ছেড়েই দিলাম। সরকারি অনুষ্ঠানে অভিনেতা অভিনেত্রীদের উপস্থিতি ক্রমশ অনিবার্য হয়ে দাঁড়াল, নির্বাচনের আগে নিয়ম করে কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেতা অভিনেত্রী যোগ দিতে থাকলেন সক্রিয় রাজনীতিতে। আর ধীরে ধীরে বাস্তব জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকল বাণিজ্যিক বাংলা ছবির, শিল্পীদের তাৎক্ষণিক স্বার্থের বলি হল সাধারণ জনগণের সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত এক শিল্পমাধ্যম। নৈতিক প্রশ্ন এড়িয়ে যাবার প্রবণতা দেখা যেতে লাগল। ‘চ্যালেঞ্জ’ ছবির শেষে আমরা ভুলেই যাই যে নায়িকার বাবা আসলে স্মাগলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত! ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ বা ‘প্রেম আমার’ দুটো ছবিতেই অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলেও সমস্যার উৎস খোঁজার চেষ্টা সেখানে নেই, ছবি শেষ হয়েছে চড়া মেলোড্রামার মধ্যে দিয়ে। ‘পাগলু’ ছবিতে নায়িকার বাবার ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার রয়েছে, কিন্তু প্রসেনজিতের ‘প্রতিবাদ’ ছবির মত ক্ষমতাকে সৎভাবে প্রশ্ন করবার কোনো ইচ্ছেই নেই, তার বদলে রয়েছে রঙচঙে গানের দৃশ্য এবং অবিশ্বাস্য ফ্যান্টাসি। নায়ক এখানে গণ আইনের প্রতিনিধি হয়ে অন্যায়কে নির্মূল করে না, বরং নিজেই ফাঁকি দিয়ে আমেরিকা গিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে ভাব পাতিয়ে ফেলে। ক্রমশ বাংলা ছবির নায়কের নৈতিক ভিত্তিই লোপ পায়, দেব জিৎ অঙ্কুশ বনি অথবা যশ দাশগুপ্তর  সম্বল কেবল রঙবেরঙের জামা, বাহারি রোদচশমা এবং তাৎক্ষণিক উত্তেজনাপূর্ণ সংলাপ। চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়ানো আর তার লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য শুধু পাশের পাড়ার মেয়েটাকে যে করে হোক পটিয়ে ফেলা। ‘হিরোগিরি’ প্রকৃতপক্ষে এক মাফিয়ার আর এক মাফিয়াকে মারবার কাহিনি, ‘বরবাদ’ বা ‘টোটাল দাদাগিরি’ ছবিতে নায়ক বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে খাপছাড়া ভাবে প্রশ্ন তুললেও তার সমাধান খোঁজার কোনো প্রবণতা তার মধ্যে দেখা যায় না, ‘লাভেরিয়া’ বা ‘গার্লফ্রেন্ড’ ছবিতে নায়ক শ্বশুরের ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রশ্ন করলেও পরে নিজেই ক্ষমতাবান ব্যক্তির দু’নম্বরি কাজকর্মের ফায়দা নেয়। ‘বিন্দাস’ ছবিতে রাজনীতি এলেও কোনো টানাপোড়েন নেই, সেখানে নায়ক শুধুই নিখুঁত সততাসম্পন্ন ক্ষমতার প্রতিনিধি। ‘দুই পৃথিবী’ মাওবাদী সমস্যা দেখালেও তার কতটা গভীরে প্রবেশ করে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের জায়গা থেকে যায়। একমাত্র ‘প্রলয়’ ছবিটিতে রাজনৈতিক অপশাসন সরাসরিভাবে তুলে ধরা হয়, কারণ গল্পটি পুরোটাই বাম আমলের।

আরও পড়ুন

ভারতে গণহত্যা চালাতে চেয়েছিলেন চার্লস ডিকেন্স


সাধারণ মানুষের জীবনে প্রচুর সমস্যা এখনও রয়েছে- কাটমানি, সিন্ডিকেট, বেকারত্ব ইত্যাদি প্রভৃতি, নেই শুধু সমসাময়িক বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে সেগুলোর প্রতিফলন। রাজনৈতিক নেতার চরিত্র সন্তর্পণে প্রায় বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘বিক্রম সিংহ’, ‘আওয়ারা’ বা ‘পাওয়ার’ জাতীয় অ্যাকশন ধর্মী ছবির প্লট এখন বাংলার সামাজিক বা সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের তোয়াক্কা না করে তামিল ছবির থেকে বেমালুম টুকে দেওয়া হয়। বাংলার ছবির শুটিং হয় হায়দ্রাবাদে, বাঙালি নায়কের হাতে মার খায় দক্ষিণী গুণ্ডার দল, কখনও কখনও কিছু দৃশ্য আর নতুন করে শুট না করে মূল তামিল ছবিটির থেকে নিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়। ‘লে হালুয়া লে’, ‘জামাই ৪২০’, ‘জিও পাগলা’, ‘জামাই বদল’ প্রভৃতি ছবিগুলোতে ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর ইউরোপীয় কমেডি এবং নব্বইয়ের দশকের হিন্দি সিনেমার ছায়া দেখা যায়, সাধারণ দৈনন্দিন বাঙালি জীবনের কোনো যোগ নেই এগুলোর সঙ্গে। প্রযোজক পরিচালক অভিনেতা যত ক্ষমতার কাছাকাছি এসেছেন, তত সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে বাংলা বাণিজ্যিক ছবি। প্রথম প্রথম উন্নত প্রযুক্তি ও বিদেশি লোকেশনে আকৃষ্ট হলেও ক্রমশ জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন হলের থেকে, কারণ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের ছবি আর তাঁরা বাংলা সিনেমায় দেখতে পান না। আজ বাংলা বাণিজ্যিক ছবির পড়তি ব্যবসা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত, নায়ক নায়িকারা প্রায় হাতজোড় করে দর্শককে অনুরোধ করছেন হলে এসে ছবি দেখতে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এত কিছু করবার কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। বাংলার যে বিপুল সংখ্যক নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষ বাংলা বাণিজ্যিক ছবির প্রধান দর্শক, তারা যদি আবার দেখতে পায় সিনেমার পর্দায় তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো সৎভাবে ফুটিয়ে তুলে ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের তাগিদেই তারা আবার হলমুখী হবে।        

             




[ কভার পোস্টার : অঞ্জন চৌধুরীর 'ছোটবউ' ছবির পোস্টার ]

#বাংলা #নিবন্ধ #বিনোদন #টলিউড #প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় #চিরঞ্জিত #অভিষেক #দেব #জিৎ #অঙ্কুশ #ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত #দেবশ্রী রায় #শতাব্দী রায় #বিজয়েতা পণ্ডিত #ফারহা #জুহি চাওলা #দীপিকা চিকলিয়া #অমরসঙ্গী #অমরপ্রেম #আশা ভালোবাসা #চুমকি চৌধুরী #রঞ্জিত মল্লিক #বড় বউ #ছোট বউ #মেজ বউ #সেজ বউ #প্রতিবাদ #লাবণী সরকার #অনুরাধা রায় #জর্জ বেকার #মুনমুন সেন #কোয়েল মল্লিক #স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় #শ্রাবন্তী #কৌশানী #সলিল কুমার নস্কর #এন কে সলিল #জুডো রামু #বাবা যাদব #মিঠুন চক্রবর্তী #প্রভাত রায় #স্বপন সাহা #অঞ্জন চৌধুরী #লোকেশ #ভবেশ কুণ্ডু #সুখেন দাস #দীপঙ্কর দে #মৃণাল মুখোপাধ্যায় # বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় #মনু মুখোপাধ্যায় #শংকর চক্রবর্তী #নয়না দাস # মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় # সুজিত কুমার মন্ডল # রাজ চক্রবর্তী # রুদ্রনীল ঘোষ # কাঞ্চন মল্লিক # রাহুল # প্রিয়াঙ্কা # জিৎ গাঙ্গুলি # ভেঙ্কটেশ ফিল্মস # সুরিন্দার ফিল্মস #রিঙ্গ #সোহম #বাপ্পি লাহিড়ী #মহম্মদ আজিজ #শুভাশিস মুখোপাধ্যায় #বিশ্বনাথ চক্রবর্তী #সায়ন্তিকা #হিরণ #সুমিত গাঙ্গুলী #হরনাথ চক্রবর্তী

  • Indrani Rooj
    July 14, 2021 at 8:47 am

    কলকাতায় কলম্বাস, ভূতের ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের ভূত - এরকম ছিটেফোঁটা নাম পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোও ভীষণ চড়া দাগের ও একপেশে।

  • Ananya Bhattacharyya
    July 10, 2021 at 4:18 pm

    Bipra, tor bangla commercial cinema niye lekha ta ei just porlam. Tor lekha sobtheke shera lekha gulo r moddhe ekta hoe thakbe ei lekha ta. Ar bangla commercial cinema niye jodi keu konodin porashona kore, tahole take tor ei lekha ta k otiobosshoi refer kortei hbe. 👏🏻👏🏻👏🏻 Tor bishleshon r sathe ami sompurno bhabe sohomot. Contemporary bengali society r protifolon sebhabe nei. Tobe oi commercial ar so-called 'art' film r moddhe akhun j ekta jogsutro toiri korar chesta cholche, shiboprosad nandita r chhobi, mainak bhowmick r chhobi, Raj Chakraborty production r upcoming duto cinema, dhormojuddho ar habji gabji, ei chhobi gulo te genuine kichu samajik somossa k address kora hocche, but segulo obosshoi west bengal r political scenario k niye kono proshno korena, ba emniteo se orthe directly rajnaitik dr niye kono comment korena. Rajnaitik neta hisebe ekta motamoti bhalo choritro last dekhechi ami Kanamachi chhobi taye, Abir Chatterjee r choritro ta. In fact, pralay chhara oi chhobitai amr monehoechilo j directly political party ba political leader r manoshikota niye kono boktobbo rakhar chesta korche. Akhun onekta emn hocche j ami samajik somossa r kotha bolchi, kintu baba beshi jhamela e jacchina..onekta gaa banchiye chole jawa. Oi single screen dorshok r somossa gulo r manifested hocchena boro pordaye..tothakothito multiplex audience r somossa ba tader Facebook Twitter e lekha lekhi korar moto bishoy gulo niye cinema hocche. Tar e protifolon Brahma Janen Gopon Kommoti, Habji Gabji, DhormoJuddho, Saanjhbaati, ei r ki.

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

1

Unique Visitors

225497