বইয়ের পোশাক
পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। লেখা শেষ। উৎকণ্ঠার শুরু। এতদিন যা বেড়ে উঠেছিল লোকচক্ষুর আড়ালে, সেই আখ্যানবিশ্বে পা দেবে আরও এক অভিযাত্রিক। তার হাত ধরে সবার সামনে আসবে ‘লেখকের উপনিবেশ’। The Clothing of Books-এ আছে সেই প্রচ্ছদশিল্পী এবং প্রচ্ছদের কথা।
পাঠকের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আগে নিজের সৃষ্টিকে ঘিরে লেখকের ভিতর চাপা উদ্বেগ কাজ করে।
কারণ,
‘If the process of writing is a dream, the book cover represents the awakening.’
এই জাগরণের মুহূর্তে বাইরের সঙ্গে ভিতরের মিল না ঘটলে কী খাপছাড়া বিষয় জন্মে ওঠে, উদাহরণ দিয়ে ঝুম্পা লাহিড়ি চিনিয়ে যান বার বার। আসলে সাহিত্যের শর্ত এবং শিল্পের শর্ত দুইই সমান্তরাল অবস্থানে স্থিত। শিল্পী-সাহিত্যিক নিজ নিজ বিশ্বাসে স্বাধীন। যে লেখাটি এইমাত্র শিল্পীর কাছে সেজে উঠতে পৌঁছল, শিল্পরাজ্যে সে আপাত অভিবাসী। প্রবাসী বাঙালি লেখক হয়তো তাই তার অস্তিত্ব সংকট এতটা তীব্রভাবে অনুভব করতে পারেন।
কলকাতায় অথবা বিদেশের মাটিতেও যে অস্বস্তিজনক অসহায়তায় ভুগতেন লেখক তার কারণও লুকিয়ে ছিল, পোশাকেই। এদেশের মাটিতে তাঁর জামাকাপড় অতি আধুনিক আবার বিদেশে ততদিনে তা আউট অফ ফ্যাশন। ফলে সমবয়স্কদের মাঝে একসঙ্গে থেকেও আলাদা হওয়ার যে বিড়ম্বনা তা তার আবাল্য সঙ্গী। তাই হয়তো, একই ধাঁচের মলাটের বিভিন্ন সিরিজের প্রতি এক দুর্বলতা রয়ে যায়। এক আইডেন্টিক্যাল ইউনিফর্ম। যেখানে ক্লাসিকের পাশে অনায়াসে জায়গা করে নেয় সায়েন্স ফিকশন, ট্রাজেডির পাশে কমেডি,বায়োগ্রাফির পাশে ক্রাইম থ্রিলার। পোশাকের ভিন্নতায় ‘তফাত যাও’ বলে না কোনো মেহের আলি।
‘The cover signifies that the text inside is clean, definitive. It is no longer wild, coarse, mellable. From now on the text is fixed, and yet the cover has a metamorphic function as well. It transforms the text into an object, something concrete to publish, distribute,and, in the end, sell.’
বাজারের গুরুত্ব লেখক অস্বীকার করেননি। অতিরিক্ত নান্দনিকতা মাঝেমধ্যে সাধারণ পাঠকের কাছে বোঝা হয়ে ওঠে। তবু বাজারের কাছে সম্পূর্ণভাবে মাথা নুইয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করেছেন। এমন অনেক বই আছে, যা শুধু প্রচ্ছদের কারণেই কিনতে ইচ্ছে করে। আবার চটকদার প্রচ্ছদের কারণে তুলনামূলক কম ভালো বই কিনে ফেলে, লেখকের বাকি বইগুলো সম্পর্কে সন্দেহ জন্মায়। বিপণনের দুনিয়ায় পড়ার চেয়ে দেখা বেশি প্রাসঙ্গিক। সেই সুযোগে জন্মে ওঠে একাধিক পাঠক ধরা ফাঁদ। ভালো বই পড়ে থাকে। শুধু দেখার জন্য নয়, পড়ার জন্যে।
শিল্পীর স্বাধীনতাও কি সম্পূর্ণত রক্ষা করা যায়? প্রকাশকের শর্তে অনেকেই কি দায়ে পড়ে কাজ সারতে বাধ্য হন না? নিজের বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক বলেন,
‘ Upon close inspection, my covers tend perfectly to mirror my own double identity, bifurcated,disputed. As a result they are often projections, conjectures.
All my life I have been in conflict between two different identities, both imposed. No matter how I try to free myself from this conflict, I find myself, as a writer, caught in the same trap.’
এই আরোপিত সত্তার স্বরূপ রয়েছে ৬৫ পাতা জুড়ে। রয়েছে একাধিক বই, অজস্র অনুবাদ পেরিয়েও কেন গ্যালি প্রুফে এখনো স্বচ্ছন্দ লাগে লেখকের, তার উত্তরও।
তিনি অবশ্য এর আরেকটা নাম দিয়েছেন, The Naked Book ।