শিল্পী ভূত
১ সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমায় ভূতেদেরকে কেমন চমৎকার নাচতে দেখেছিলেন মনে আছে ? আমাদের দেশের, বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের ভূতেরা মাল্টি-ট্যালেন্টেড! তারা নাচে, গায়, এমনকি গল্প-কবিতাও লেখে!! ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘কেন এত নিদয় হইলে?’ গল্পে এক দুখিনী ভূত কেঁদে কেঁদে গায় দুঃখের গান ----
“কেন এত নিদয় হইলে?অবসান নিশি, অস্ত গেল শশী,দাসীরে ভুলিয়া নাথ কোথায় রহিলে।”
অনীক দত্তর সিনেমা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর কদলীবালাকে মনে পড়ছে নিশ্চয়। দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ‘ভূতের বোঝা’, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘ভূতের বিপদ’ সব গল্পেই ভূতেদের নাচ-গানের খবর আছে। গৌরী ধর্মপালের গল্প ‘ভূতের ভয়’-এ দুই ভূত কুলো আর মুলো ভূতেদের ঘুম-তাড়ানিয়া গান শোনায়
“ভয় জয় ভয় জয় ভয় জয়ভূতেদের রাতে ঘুম ভালো নয়।”
আর হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘ওলাইতলার বাগানবাড়ি’ গল্পে শুনি আরেকটা দুর্দান্ত ভূতুড়ে গান ------
“ধিন তা ধিনা পচা নোনা,হাড়-ভাতে-ভাত চড়িয়ে দে না!চোষ না হাড়ের চুষিকাঠি,রক্ত চেঁচে পুছে নে না!”
২ নাচেও কম যায়না ভূতেরা। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের লেখা ‘অন্নদামঙ্গল’ বইতে ভূতেদের নাচের খবর আছে ------
“করতালি দিয়া বেড়ায় নাচিয়াহাসে হি হি হিহি হিহি ।দন্ত কড়মড়ি করে জড়াজড়িলক লক লক জিহি ।।করে চড়াচড়ি ধায় রড়ারড়িকিলাকিলি গন্ডগোল ।কারে আছাড়ে কে কারে পাছাড়ে ।কে মানে তাহার বোল ।।”
পরশুরাম তাঁর ‘ভূশণ্ডীর মাঠে’ গল্পেও লিখেছেন ----- “গোঁফ কামানো ভূত বাঁশি বাজাইয়া নাচিতে লাগিল।” আর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মায়া’ গল্পে হানাবাড়ির ভূতেরা “লাঠি বাজিয়ে” নাচ করে! অনেকটা গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী নাচের স্টাইলে আর কী!
৩ কবিতা পড়তে ভালবাসেন? ভূতেরা ভালবাসে কিন্তু! মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি অবন ঠাকুরের জামাই ছিলেন, তিনি ভূতেদের নিয়ে একটা চমৎকার গল্প লিখেছিলেন ------ ‘কঙ্কালের টঙ্কার’ । এই গল্পে এক কবি ধরা পড়েন ভূতেদের হাতে। রাগেশ্বরী পেত্নীর সঙ্গে বিয়ে করবে না বলে ক্যাংলা ভূত পালিয়েছে। কবিকেই ভূতেরা ধরে নেয় ‘ক্যাংলা’ বলে! তিনি যে ক্যাংলা নন, কবি মাধব চক্রবর্তী তা প্রমাণ করবার জন্য জাঁদরেল নামে এক ভূতের কাছে, কবিতা লেখার পরীক্ষা দিতে হয় কবিকে। পরীক্ষকের নামে দুর্ধর্ষ এক প্রশস্তি-কবিতা লিখে সে যাত্রা কবি ফিরে পান পৈতৃক প্রাণ! শুনবেন সে কবিতা? বেশ, শুনুন তবে -----
“রেল আছে জেল আছেআর আছে কৎবেল;পাশ আছে, ফেল আছেআর আছে, শূল শেলঢোল আছে, চোল আছেআর আছে সরখেল;সব সে বড়া হ্যায়জাঁদরেল জাঁদরেল।”
নিজের নামে এমন কবিতা শুনলে কোন মাস্টার না খুশি হবে বলুন তো!!