অনাম্নী
দূরত্বের মাঝে উদ্বেগ বসে আছে। এমনি দেখা যায় না। কয়েকদিনের অনুপস্থিতি যখন মাস পেরিয়ে ফেলে, তখন নির্লিপ্তির খোলায় চিড় ধরে কুসুমের মতো পীত উদ্বেগ বেরিয়ে পড়ে। দূরত্ব কি শুধু অদর্শনেই বাড়ে? না বলা কথা জমে জমে পাহাড় হলো, সেই পাহাড় ডুবে গেল জমা কথার সমুদ্রে, ফের নিঃশব্দে পাহাড় জন্মালো। এই যে অকথিত শব্দের বিষাদ, যাকে বলার ছিল, যাকে লিখে দেওয়ার ছিল আমার শব্দের উত্তরাধিকার, তাকে বলতে না পেরে যখন বুঝতে পারি ভাঁটায় চড়া জেগে উঠছে, কয়েক কিমি থেকে হাজার বর্গমাইল, সে কি দূরে নেই? অথবা ক্লান্ত এসএমএস যে নম্বরে পাঠাতে গিয়েও পাঠানো হলো না, একবার রিং হওয়ার আগের মুহূর্তেই মন সজাগ হয়ে কেটে দিল যে ফোন কল, সেই প্রাপকের থেকে প্রেরক মনে মনে আছে কয়েক যোজন দূরে। সব দূরত্বই কি স্থানিক? মানসিক নয়! এই দূরত্ব কীসের! এই দূরত্ব কি আমি-র দূরত্ব? 'কী বলব' থেকে 'আমিই বা কেন বলব' এই দোলাচলের ফসল? কে জানে। পরিচিত প্রতিটি মনের কাছেই আমাদের অবস্থান আলাদা আলাদা। তাই তো সবাই প্রত্যাশায় ধরা পড়ে না। সবার উপর অভিমান হয় না। রাগ করা যায় না। খারাপ থাকার সময়ে যেমন হাতে গোনা কয়েকজনকেই মনে পড়ে, ভালো থাকাটুকুও হাতে গোনা কয়েকজনের সঙ্গেই ভাগ করে নিতে ইচ্ছে হয়। তারাও যে আমার প্রাপ্তি। তাই হারাবার সঙ্গে যে কোনও পাওয়ায় তাদের সঙ্গে বেঁচে নিই নির্দ্বিধায়। এদের থেকেই হঠাৎ দূরত্ব বাড়লে ঘুম কমতে থাকে। যে দিন রাত স্ট্রাগল করছে আর যে না চাইতেই সব পেয়েছে, দুজনেরই এই অ-সুখ জন্মাতে পারে। যে অ-সুখ দূরত্বে বাড়ে। কাছের মানুষের থেকে দূরত্বে। মনে মনে।
..........
অলংকরণ : ঐন্দ্রিলা চন্দ্র
#গদ্য #শৌভিক মুখোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট #ওয়েব পোর্টাল