জল নিয়ে বিশ্বযুদ্ধ আগতপ্রায়?
লেখক-সাংবাদিক পি. সাইনাথ (Palagummi Sainath) তাঁর বিখ্যাত বই 'Everybody Loves a Good Drought'-এ পাহাড়িয়া উপজাতির নারীদের পানীয় জল আনার গল্প বলেছেন। তাঁরা নাকি জলের জন্য যে দূরত্ব অতিক্রম করেন, তার বাৎসরিক হিসেব নিলে দেখা যাবে সেটা চার-পাঁচবার দিল্লি থেকে বম্বে যাতায়াত করার সমান।
এমন ভয়ানক জলসংকট এবার পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের মানুষের জন্যই কঠোর বাস্তব হয়ে দেখা দিতে চলেছে। বিশ্বজুড়ে ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জলাধার। সেইসঙ্গে ফুরিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারও। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন। পাঁচ বছরের মধ্যে এই সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত মে মাসেই জলের অধিকার নিয়ে তীব্র বিবাদে লিপ্ত হয়েছে ইরান ও আফগানিস্তান। গুলি চলেছে। প্রাণ গেছে মানুষের। পুরোদস্তুর যুদ্ধের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সত্যি বলতে কী, জল নিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি মহাযুদ্ধকে এই মুহূর্তে আর নেহাত অলীক কল্পনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিবিসি গত বছর এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
‘ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট অ্যাক্যাডাক্ট ওয়াটার রিস্ক অ্যাটলাস’-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের ২৫টি দেশ খুব তাড়াতাড়ি তীব্র জলংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে। এই তালিকায় আছে ভারতও। এই বছরের ‘ইউনাইটেড নেশনস’-এর রিপোর্টে ভারতকে পানীয় জলের সমস্যার ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-তে শহরাঞ্চলের প্রায় ৯ কোটি মানুষকে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে হয়েছে। অনুমান, ২০৫০-এর মধ্যে এই সংখ্যা আড়াই কোটিতে পৌঁছে যাবে। মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর, সাংলি বা সাতারা জেলার প্রায় ১৬০০ গ্রামে পানীয় জলের হাহাকার তীব্র আকার নিয়েছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলোও খুব ভালো অবস্থায় নেই। বেলাগাম নগরায়ন, শিল্প, কলকারখানা, বসতি-নির্মাণ আর অপরিকল্পিতভাবে যথেচ্ছ পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেবার ফল এবার টের পেতে চলেছে মানুষ। প্রাথমিকভাবে সমাজের নিচুতলার মানুষই এর শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, খুব তাড়াতাড়িই জল অর্থমূল্য ছাড়া পাওয়া কঠিন হবে এবং দামও সাধারণ মানুষের নাগাল ছাড়িয়ে যাবে। জলই ডেকে আনবে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ।
তাহলে উপায়? সুষ্ঠু সরকারি পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই হবার নয়। তবে শুধু পরিকল্পনা থাকলেই তো হল না। নেতাদের সদিচ্ছা আর সচেতনতার অভাবে জল সংরক্ষণ নিয়ে কোনও পরিকল্পনাই কার্যকর হয় না। আমাদের দেশে যেটা একটা বিরাট সমস্যা। কর্পোরেট সংস্থাদের লোভে লাগাম পরানোটাও আশু প্রয়োজন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া দরকার। ব্যক্তিগত স্তরে এবং সামাজিকভাবেও আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের সন্ততিরা তেষ্টার জল পাবে কিনা, তা অনেকটাই নির্ভর করছে আমাদের আজকের আচরণের ওপর।
..................
#Water Scarcity #Water War #Environment #silly পয়েন্ট #Climate Change