৫০০ টাকা ঋণের পরিশোধ হিসেবে বিভূতিভূষণ পেয়েছিলেন ঘাটশিলার বাড়ি
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাটশিলার বাড়িটি বাঙালির কাছে তীর্থের চেয়ে কম কিছু না। নিজের অকালমৃতা প্রথম স্ত্রী গৌরীদেবীর নামে বিভূতিভূষণ বাড়িটির নাম রেখেছিলেন 'গৌরীকুঞ্জ'। কিন্তু এই বাড়িটি কেনার পিছনে একটি গল্প রয়েছে। বাড়িটি তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে, তা-ও বেশ কয়েক বছর আগে দেওয়া ধারের পরিশোধ হিসেবে।
বাড়িটি তৈরি করেছিলেন শিক্ষাবিদ শ্রী অশোক গুপ্ত। উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চ মর্যাদার চাকুরে অশোকবাবু সস্ত্রীক বিলেতে থাকতেন। অবসরের পর তাঁরা ঠিক করেন বিকলাঙ্গ ও অপরিণতবুদ্ধি শিশুদের শিক্ষার জন্য একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান চালু করবেন। আর এজন্য গ্রাম্য কোনও শান্তশিষ্ট জনবিরল পরিবেশই তাঁরা খুঁজছিলেন। শেষমেশ পছন্দ হল ঘাটশিলার সুবর্ণরেখা নদীর অদূরে এই জায়গাটি। বাড়ি তৈরি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ শুরু করেন গুপ্ত দম্পতি। সেই সময়েই অশোকবাবুর সঙ্গে বিভূতিভূষণের পরিচয় হয়। তাঁদের মহতী উদ্যোগের কথা শুনে বিভূতিভূষণের খুব ভালো লাগে। এ কাজে অশোকবাবুর অনেক টাকার প্রয়োজন এবং তা জোগাড় করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শুনে তিনি পাঁচশো টাকা ধার দেন। পরবর্তীকালে নানা কারণে অশোকবাবুর উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখতে ব্যর্থ হয়। তিনি জড়িয়ে পড়েন বিপুল ঋণের জালে। স্বাস্থ্যও ভেঙে যায়। বিভূতিবাবু এ খবর জানতে পারেন, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অশোকবাবুর খোঁজ নিতে পারেন না - পাছে অশোকবাবু ভেবে বসেন তিনি টাকাটা ফেরত নেবার জন্য খোঁজ করছেন।
আরও পড়ুন : যুদ্ধে গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন সুবোধ ঘোষ? / শৌভিক মুখোপাধ্যায়
পরে একদিন কলেজ স্ট্রিটে অশোক গুপ্তের সঙ্গে একেবারে মুখোমুখি দেখা। তখনই অশোকবাবু বিভূতিভূষণকে তাঁর ঋণের পরিশোধ হিসেবে ঘাটশিলার বাড়িটি বিনা শর্তে লিখে দেবার কথা বলেন। পাঁচশো টাকার পরিবর্তে একটা গোটা বাড়ি? বিভূতিভূষণ তো অবাক। গররাজিও বটে। কিন্তু অশোক গুপ্ত তাঁর কোন আপত্তিই শুনলেন না। রেজিস্ট্রি করে বাড়িটি লিখে দিলেন বিভূতিভূষণের নামে। অতঃপর বিভূতিভূষণ বাড়ির নাম রাখলেন 'গৌরীকুঞ্জ'। বাড়িটি ছিল তাঁর বিশেষ প্রিয়। সময়সুযোগ পেলেই তিনি এখানে গিয়ে সময় কাটাতেন। ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৮ টা ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয় এই বাড়িতেই।
........................
ঋণ : মুকুল চক্রবর্তী / ঘাটশিলায় বিভূতিভূষণ