শিবপুরের বিস্ময় হাজার হাত কালীমায়ের মন্দির
বাংলায় মাতৃপূজার ইতিহাস যেমন বিচিত্র, তেমনই বিচিত্র মায়ের বিভিন্ন রূপ। মা কালীর নানা রূপের মধ্যে অভিনব এক রূপ হল শিবপুরের হাজার হাত কালীমাতা। এই মন্দির ঘিরে প্রচুর গুজব, প্রচুর জনশ্রুতি। ভক্তরা তো বটেই, ইতিহাস-উৎসাহী বহু মানুষেরও আকর্ষণের কেন্দ্র এই মন্দির।
কলকাতার চোরবাগানের আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই মন্দির গড়ে ওঠে। তান্ত্রিক আশুতোষ তর্করত্ন নামেই তাঁর সমধিক পরিচিতি ছিল। আশুতোষ দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরে বেড়াতেন। পুজোপাঠ, ধ্যান, সাধনা নিয়ে থাকতেন তিনি। এক বার স্বপ্নে কালীর এই হাজার-হাতের রূপ দেখতে পান আশুতোষ। ওলাবিবিতলায় যেখানে আজ এই মন্দির গড়ে উঠেছে সেই জায়গাটিরও স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নাদেশ মতো মন্দির গড়ার জন্য ১২৫ টাকায় হালদার পরিবারের কাছ থেকে ৩ কাঠা জায়গা কিনে মাটির মন্দির তৈরি করেন আশুতোষ। ১৮৭০ সালে সেই মন্দির গড়ে ওঠে। বিগ্রহ বানান কুমোরটুলির প্রিয়নাথ পাল।
বর্তমানে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বংশধরেরাই এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবায়েতের কাজ করে আসছে। এই কালীমন্দিরে কোন বলির প্রথা নেই। বছরের দুটি দিন অর্থাৎ বুদ্ধপূর্ণিমায় প্রতিষ্ঠা দিবস ও কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয় মায়ের পুজো।
শোনা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা কৃষ্ণা সুব্রহ্মণ্যম এই মন্দিরে এসেছিলেন। তখন তিনি দৃষ্টিহীন। হাজার-হাত কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তার পর থেকে তিনি মায়ের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এখন প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় শ্রাবণে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে পুজো দেন।
প্রথমদিকে মায়ের মূর্তিটি ছিল মাটির তৈরি, পিছনের চালায় হাজারটি হাত আঁকা ছিল। পরবর্তীকালে চুন, সিমেন্ট, বালি, ইঁট ও আমেরিকান প্লাস্টার সহযোগে গঠিত হয় এই বিশাল আকার হাজার হাত কালীর মূর্তি। প্রতিমার মতই মায়ের হাতগুলিও তৈরি ওই একই উপাদান সহযোগে। তবে কথিত আছে এই মায়ের হাত নাকি গোনা যায় না। স্থানীয়দের মতে, হাজার-হাত কালী খুবই জাগ্রত, ভক্তিভরে কেউ কিছু চাইলে কালী কাউকে ফিরিয়ে দেন না।
...............
#হাজার হাত কালী #শিবপুর #Maa Kali #silly পয়েন্ট