আগুন আর ধোঁয়ায় চলত যে-আজব ঘড়ি
সভ্যতার অগ্রগতির পথে সময় গণনা বা নির্ণয় করার জন্য নানারকম উপায়ই মানুষ অবলম্বন করেছে। বস্তুত, ঘড়ির ইতিহাস মানবেতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু ধূপঘড়ি (Incense clocks)-র মতো অভিনব সময়-পরিমাপক আর কিছু কোনোদিন ছিল কিনা সন্দেহ। প্রাচীন চিনে সং রাজত্বের সময়কালে (৯৬০-১২৭৯ খ্রিস্টাব্দ) এই ঘড়ি প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়।
ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রু বি. লিউ (Andrew B. Liu) অবশ্য দাবি করেছেন, খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে চিনে এই ঘড়ির প্রচলন শুরু হয়েছিল। সে-সময়ের চিনে জলঘড়ি এবং আরও কয়েক ধরনের সময়মাপক যন্ত্রের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। তবে তার পাশাপাশিই এই ধূপঘড়িও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত। ঘরে ও মন্দিরে এই ঘড়ির ব্যবহার হত বেশি। চিনের পাশাপাশি জাপানেও এই ঘড়ি প্রচলিত ছিল। ছটা ধূপের কাঠি নিয়ে এই ঘড়ি তৈরি হত। পরের দিকে অবশ্য অনেকসময় কাঠির বদলে ধূপের গুঁড়োও ব্যবহৃত হত। ধূপকাঠির দহন দিয়ে সহজ-সরল পদ্ধতিতে সময় মাপা হত। ঘণ্টা বা প্রহর পরিমাপ করতে কাঠির গায়ে দাগ কাটা থাকত। তা থেকেই নির্ভুলভাবে আন্দাজ করা যেত সময়। অনেক ক্ষেত্রে ঘড়ির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সুগন্ধযুক্ত ধূপকাঠি লাগানো থাকত, যার ফলে গন্ধ দিয়েই নির্ধারণ করা যেত একটি দিনের বিভিন্ন সময়পর্ব। আবার অনেক ক্ষেত্রে কাঠির শেষে যুক্ত থাকত ছোট ধাতব গোলক। কাঠি পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেলে গোলক বাধামুক্ত হয়ে নিচের ধাতব পাতে পড়ে আওয়াজ করে উঠত। সেই শব্দই অ্যালার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হত। এই ধূপঘড়ির বিশেষত্ব ছিল এই যে এতে সময়ের হিসেবের সঙ্গে সঙ্গে ঘরে সুগন্ধ ছড়ানোও হত। সবচেয়ে সহজলভ্য যে মডেলটি পাওয়া যাচ্ছে, সেটা আকারে একটা কফি মগের মতো। ষোড়শ শতাব্দীতে যাজক ফাদার গ্যাব্রিয়েল দে মেগালহেন (Gabriel de Magalhaen) ছিলেন একজন বিখ্যাত ধূপঘড়ি-নির্মাতা। এই ঘড়ির বিষয়ে তাঁর একটি লিখিত বিবরণও পাওয়া গেছে।
.......