শান্তিনিকেতনের প্রথম পত্রিকার গল্প
বিশ্বকবির প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে সাহিত্যচর্চার একটা আলাদা গুরুত্ব থাকবে না, তা কি হয়? শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয় সাহিত্য পত্রিকার সংখ্যা নেহাত কম ছিল না।
ব্রহ্মবিদ্যালয় থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে সর্বপ্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন শিক্ষক শ্রী সতীশচন্দ্র রায়। কিন্তু তিনি পত্রিকা বের করে যেতে পারেননি। আরেক শিক্ষক অজিতকুমার চক্রবর্তী তাঁর অপূর্ণ উদ্যোগকে রূপ দান করেন। ব্রহ্মবিদ্যালয় থেকে প্রথম পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ১৯০৭ সালে। পত্রিকাটির নাম ছিল 'শান্তি'। অজিত চক্রবর্তীর সক্রিয় উৎসাহে ছাত্রদের চেষ্টায় হাতে-লেখা এই পত্রিকাটি প্রকাশ পায়। সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন মনোরঞ্জন চৌধুরী নামে এক ছাত্র। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ প্রথম সংখ্যার জন্য কলম ধরেছিলেন। তবে সূচিতে ছাত্রদের লেখাই ছিল বেশি। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রবন্ধ, গদ্য, কবিতা ও অনুবাদে। ছাত্রদের আঁকা ছবি ও অলংকরণও ছিল। নাথানিয়েল হথর্নের বিখ্যাত কবিতা 'পিগমি'-র অনুবাদ করেন মেধাবী ছাত্র সরোজচন্দ্র মজুমদার। বছরকয়েক পর বিদ্যালয়ে প্রথমবার যখন সাহিত্যসভার আয়োজন করা হয়, তাতেও মুখ্য উদ্যোক্তা ছিলেন এই সরোজচন্দ্র।
'শান্তি' প্রকাশ পাবার পরেই বিদ্যালয়ে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের হিড়িক পড়ে যায়। প্রায় প্রত্যেক ছাত্রাবাস থেকেও নিজস্ব পত্রিকা প্রকাশ হতে শুরু করে। প্রভাত, বীথিকা, শিশু, কানন, আশ্রম, কুটীর, নয়ন, মধ্যাহ্ন, পঞ্চমী, বুধবার ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশ পায়। আরও পরে শুরু হয় 'আমাদের লেখা' নামে পত্রিকা, যেটি বেশ দীর্ঘজীবী হয়েছিল। ১৯১১ সালে রবীন্দ্রনাথ 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহণ করার পর থেকে শান্তিনিকেতনের ছাত্র-শিক্ষকদের লেখার জন্য ও বিদ্যালয়ের খবরাখবরের জন্য সেই বিখ্যাত পত্রিকায় আলাদা একটি বিভাগ চালু করা হয়েছিল। এর ফলে অনেক ছাত্রের লেখাই বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছে যাবার সুযোগ পেয়েছিল, যাদের সকলেরই সলতে পাকানোর শুরু বিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলিতেই।
..................
ঋণ : কবির পাঠশালা / স্বাতী ঘোষ, অশোক সরকার, আনন্দ পাবলিশার্স
#শান্তিনিকেতন #রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর #Rabindranath Thakur #Shantiniketan #silly পয়েন্ট