ফিচার

চাপা পড়ে গেছে ভারতের জাতীয় পতাকার আসল ডিজাইনারের নাম?

কৌশিক দেবরায় Aug 15, 2020 at 4:30 am ফিচার

কাগজে কলমে নাম আছে পিঙ্গালি বেঙ্গাইয়ার। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিতর্ক উস্কে দিয়ে উঠে আসছে অন্য একটা নাম। সুরাইয়া তায়েবজি। ভারতের জাতীয় পতাকার ডিজাইন নাকি আসলে সুরাইয়ার। ক্ষমতার খেলায় নাকি চাপা পড়ে গেছে সেই সত্য।

১৯২১ সালে কংগ্রেসের একটি মিটিং-এ মহাত্মা গান্ধী প্রথম একটি জাতীয় পতাকার প্রয়োজনের কথা উত্থাপন করেন। সে বছরই পিঙ্গালি বেঙ্কাইয়া পতাকার প্রাথমিক নকশাটি উপস্থাপন করেন। বেঙ্কাইয়া ছিলেন তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশে) একজন কংগ্রেস নেতা। তারপর থেকে পতাকার নকশার একাধিক প্রস্তাব এসেছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে একাধিক নকশাও ব্যবহৃত হয়েছিল এবং তা নিয়ে বিতর্কও দেখা দিয়েছিল বিস্তর। মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছা অনুসারে পতাকার তিনটি রঙের পরিকল্পনা করা হয়, যার মাঝে ছিল চরকার চিহ্ন। এই ডিজাইনটিও বেঙ্কাইয়ার। জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। পরে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকার মর্যাদা দেওয়া হয়। পতাকার জন্য একটি আলাদা কমিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ২৩ জুন। তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় স্থির হয়, চরকার পরিবর্তে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার মাঝখানে থাকবে ২৪ টি দণ্ডযুক্ত নীলবর্ণের অশোকচক্র। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট এই পতাকাটিই উত্তোলিত হয়। এই চক্রযুক্ত ডিজাইনটি নাকি ছিল সুরাইয়া তায়েবজি নামে এক ভদ্রমহিলার। তিনি অবশ্য একেবারে আম আদমি ছিলেন না। হায়দ্রাবাদের এক অভিজাত মুসলিম পরিবারের মেয়ে সুরাইয়া ছিলেন ভারতীয় সিভিল সার্ভিস অফিসার বদরুদ্দীন তায়েবজীর স্ত্রী। আবার কোনও কোনও সূত্র বলে, এই বদরুদ্দীন তায়েবজী কংগ্রেসের খ্যাতনামা নেতা এবং আইনজীবী। সুরাইয়া নিজেও সে সময় শিল্পী হিসেবে মোটামুটি পরিচিত ছিলেন। অথচ কোনও এক অজানা কারণবশত সুরাইয়ার নামটি মান্যতা পায়নি। পুরনো দলিলপত্র থেকে ছাত্রপাঠ্য বই - সর্বত্রই জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিসেবে পিঙ্গালি বেঙ্কাইয়ার নামই পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ট্রেভর রয়েল তাঁর ‘The Last Days of the Raj’ বইতে এই বিতর্কের সূত্রটি তুলে ধরেছেন। তিনি এমন বিতর্কিত ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, সুরাইয়া একে মুসলিম তায় নারী বলেই তাঁর নাম সযত্নে উপেক্ষা করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন এল. পাণ্ডুরঙ্গ রেড্ডি নামে এক হায়দ্রাবাদি ইতিহাসবিদ কয়েক বছর আগে এই বিতর্কটি তুলে ধরায় বিষয়টি সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তবে রয়েলের বইতে যে একপেশে দাবিটি করা হয়েছে, ওয়াকিবহাল মানুষজনের সাক্ষ্য থেকে সে বিষয়ে নিঃসংশয় হওয়া যায় না। ক্যাপ্টেন রেড্ডি নিজেও কিছু খাপছাড়া শ্রুতি ছাড়া তেমন কিছু প্রমাণাদি পেশ করতে পারেননি। একজন মাত্র ব্রিটিশ ইতিহাসবিদের (তা-ও ততটা উল্লেখযোগ্য কেউ নন) দাবি এই মহান কৃতিত্ব বেঙ্কাইয়ার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে সুরাইয়াকে দিয়ে দেবার পক্ষে একেবারেই যথেষ্ট নয়। বরং অনেকে পরে এই দাবিও করেছেন যে সুরাইয়ার বিষয়টি ট্রেভর রয়েল তো বটেই, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও বেশ কিছুটা অতিরঞ্জিত করে পেশ করেছে। ১৪ অগাস্ট যে জাতীয় পতাকা উপস্থাপন কমিটি জাতীয় পতাকার ডিজাইন পেশ করেছিল, তাতে সুরাইয়া তায়েবজির নাম ছিল। এটুকুর বেশি কোনও প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। এ কথা আমরা সবাই জানি যে ইতিহাস পক্ষপাত-মুক্ত হতে পারে না কারণ মানুষের কায়েমী স্বার্থ তাকে পক্ষপাত-মুক্ত হতে দেয় না। তবে এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিপদগুলির একটির নাম ফেক বা ম্যানুফ্যাকচারড নিউজ, এটাও ভুলে গেলে চলবে না। আরও বড় বিপদ, চটজলদি সিদ্ধান্তে আসার প্রবণতা। পিঙ্গালি বেঙ্কাইয়ার মুকুট নিয়ে টানাটানি করার মতো গুরুতর কারণ এখনও ঘটেনি।



[ঋণ : www.indiatoday.in]

#স্বাধীনতা #পতাকা #জাতীয় পতাকা #ডিজাইন #পিঙ্গালি বেঙ্কাইয়া #সুরাইয়া তায়েবজি

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

4

Unique Visitors

216167