'একুশে'-র প্রথম কবিতা
অন্ধকার সময়েও কি গান থাকবে? ১৯৩৯ সালে ব্রেখট বলেছিলেন, থাকবে। অন্ধকার সময়ের গান রচিত হবে অন্ধকার সময় নিয়েই।
আরও একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য যে অভূতপূর্ব গণ আন্দোলন হয়েছিল, তা গোটা দুনিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছিল। বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন অনেকে। তাই এই দিনটিকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
গণ আন্দোলন থেকেই আসে গণসাহিত্য। একুশ জন্ম দিয়েছিল এমনই তাৎক্ষণিক অজস্র গান, কবিতা, শিল্পের। তার মধ্যে কিছু কিছু কালজয়ী হয়ে ফিরেছে বাঙালির মুখে মুখে। যেমন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা কবিতা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি', যা আবদুল লতিফের সুরে অমরত্ব লাভ করেছে। উল্লেখ করা যায় ২৬ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে আলাউদ্দীন আল আজাদের লেখা কবিতা 'স্মৃতির মিনার'-এর কথাও। বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির পরম সম্পদ এগুলি। এদের ঐতিহাসিক মূল্য কোনও এককেই মাপা সম্ভব না। আবার কিছু গান, কবিতা কিন্তু হারিয়েও গেছে কালের গর্ভে। একুশের প্রতিক্রিয়ায় লেখা প্রথম কবিতাটি কি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে?
আরও পড়ুন : গত দশ বছরে মরে গেছে যে ভাষারা
সেদিনই দুপুরে ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পর কবি রফিকুল ইসলাম লিখে ফেলেছিলেন 'ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি' নামে একটি কবিতা। সেটিই বাহান্ন-র সম্ভবত ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা প্রথম কবিতা। বানান অবিকৃত রেখে আমরা সেই কবিতাটি উদ্ধার করছি।
ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি
রফিকুল ইসলাম
এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে
রমনার ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার নীচে
যেখানে আগুনের ফুলকীর মতো
এখানে ওখানে জ্বলছে রক্তের আলপনা ,
সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি।
আজ আমি শোকে বিহ্বল নই,
আজ আমি ক্রোধে উন্মত্ত নই,
আজ আমি রক্তের গৌরবে অভিষিক্ত।...
যারা আমার অসংখ্য ভাইবোনকে হত্যা করেছে,
যারা আমার হাজার বছরের ঐতিহ্যময় ভাষায় অভ্যস্ত
মাতৃসম্বোধনকে কেড়ে নিতে গিয়ে
আমার এইসব ভাইবোনদের হত্যা করেছে
আমি তাদের ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।
.....................