ফিচার

বিখ্যাত আলতামিরা গুহাচিত্র আবিষ্কার হয়েছিল আট বছরের একটি ছোট্ট মেয়ের দৌলতে

ইমানুর রহমান July 29, 2020 at 4:30 am ফিচার

নাম মারিয়া। বয়েস মাত্র আট। তারই সৌজন্যে আবিষ্কার হয়েছিল মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের একটি অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন - আলতামিরার বিখ্যাত গুহাচিত্র।

প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রের ক্রমবিকাশের ধারায় আলতামিরার স্থান চতুর্থ পর্বে। পুরনো প্রস্তর যুগের নিদর্শন প্রথম এখানেই মেলে। স্পেনের কাতাব্রিয়া প্রদেশের সানতিলানা দেল মার গ্রামে এই গুহার অবস্থান। সানতানদের- মাদ্রিদ রেলপথের টরেলাভেগা স্টেশন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে এই গুহা আবিষ্কৃত হয় উনিশ শতকের শেষদিকে। নেপথ্যে মারিয়া।

১৮৭৯ সালের কথা। মারকুইজ ডি স্যুতুলা নামে এক স্পেনীয় অভিজাত তাঁর ছোট্ট মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে ওই গুহার কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন। পুরাতত্ত্বে মারকুইজের বিশেষ আগ্রহ ছিল। ফলে নিছক বেড়ানো নয়, তাঁর ইচ্ছা ছিল ওখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে যদি প্রাগৈতিহাসিক মানুষের কিছু দেহাবশেষ মেলে। বাবা যখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এদিক ওদিক দেখছেন, মেয়ে বিরক্ত হয়ে বাতি হাতে ঢুকে পড়ল গুহার ভিতর। গুহায় ছাদে আঁকা ছবি দেখে সে তো দারুণ উৎসাহিত। মেয়ের ডাকে গুহার ভিতরে এসে মেয়ের চেয়েও বেশি তাজ্জব হয়ে গেলেন মারকুইজ। এটিই লাল আর কালো রঙে আঁকা বিখ্যাত সেই বাইসনের ছবি। এই সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত যা সভ্যতার বিকাশের আলোচনাধারায় একটি অসামান্য তাৎপর্যময় অধ্যায় যোগ করে দিল। এরপর মারকুইজ এবং মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পুরাতত্ত্ব- বিশেষজ্ঞ জুয়ান ভিলানোভা বেশ কিছুদিন ধরে গুহাচিত্রটি ভালো করে পরীক্ষা করেন এবং পরের বছর গবেষণাপত্রে রায় দেন যে এগুলি পালেওলিথিক অর্থাৎ পুরনো প্রস্তর যুগের।


অবশ্য প্রথমদিকে অনেকেই এই গুহাচিত্রের প্রাচীনতা সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু অচিরেই সে সংশয় দূর হয়। অন্ত্য- প্রস্তর যুগে গুহাচিত্রের প্রথম আবির্ভাব। আলতামিরার গুহাচিত্রের সময়কালও মোটামুটি ওই যুগেরই। তবে এখানে আদি- ম্যাগডেলেন পর্বের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। আলতামিরার গুহাচিত্রে বিভিন্ন পশু (যেমন হাতি, ম্যামথ, মহিষ ইত্যাদি) এবং মানুষের উপস্থিতি। নানারকম রঙের ব্যবহার বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই গুহাচিত্র নিয়ে, বিশেষত আঁকার পদ্ধতি, কার্যকারণ ইত্যাদি নিয়ে নানারকম মতভেদ আছে। ১৯৭৭ সালে বেশ কিছু বছরের জন্য এই গুহা পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। কারণ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেন, মানুষের শরীরের তাপ, শ্বাস - প্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বাতাসের আর্দ্রতায় এই গুহাচিত্রের ক্ষতি হচ্ছে। তার আগে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার দর্শক এখানে পা রাখতেন। পরে ২০০২ সালে দর্শকদের জন্য প্রায় স্থায়ীভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। মূল গুহার খুব কাছেই গড়ে তোলা হয় আলতামিরা যাদুঘর, যেখানে মূল গুহার অনুসরণেই সবকিছু অনুসৃজন করার চেষ্টা করা হয়েছে। পরবর্তীকালে মাঝে মাঝে লটারির মাধ্যমে সামান্য সংখ্যক ভাগ্যবান বিজেতাদের মূল গুহায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোটি টাকা খরচ করলেও অজানা প্রাচীন শিল্পীদের অজানা মনের খেয়ালের এই আশ্চর্য রূপায়ণ আজ চাক্ষুষ করার সুযোগ প্রায় নেই। কিন্তু এই অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শন যে আমাদের গোচরে এসেছে, তার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য সেই আট বছরের ছোট্ট মেয়ে মারিয়ার।

#আলতামিরা #আলতামিরা গুহাচিত্র

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

28

Unique Visitors

219549