ফিচার

চাঁদের গহ্বরের নাম বাঙালি বিজ্ঞানী শিশিরকুমার মিত্রের নামে

প্রগত ভৌমিক Nov 25, 2022 at 10:15 am ফিচার

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে চাঁদের মাটিতে সৃষ্টি হয় নানা মাপের গহ্বর। যাদের বলা হয় impact crater। চাঁদের এমন গহ্বরগুলির নামকরণ হয় বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নামে। জানলে বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ হবেই যে, সেই তালিকায় জার্মানির আর্নল্ড সমারফেল্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্যানিয়েল কার্কউড, স্কটল্যান্ডের জন জ্যাকসন, কানাডার জন প্লাসকেট প্রমুখদের পাশাপাশি রয়েছেন এক বাঙালিও। শিশিরকুমার মিত্র। চাঁদের উত্তরাংশের একটি গহ্বরের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। গহ্বরের নাম 'Mitra'। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে তাঁর নাম একেবারে প্রথম সারিতেই থাকবে। এই শিশিরকুমার মিত্রের উদ্যোগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতার-পদার্থবিদ্যা বিভাগ চালু হয়। অথচ এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নন অনেক বাঙালিই।


শিশির মিত্রের জন্ম ১৮৯০ সালে, হুগলির কোন্নগরে। মা শরৎকুমারী দেবী ছিলেন সেই যুগের মেডিক্যালের ছাত্রী, পরে বিহারের ভাগলপুরে লেডি ডাফরিন হাসপাতালে ডাক্তারের চাকরি পান। বাবা জয়কৃষ্ণ মিত্র ছিলেন শিক্ষক। প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যা পড়তে পড়তে জগদীশচন্দ্র বসুর স্নেহসান্নিধ্য পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে কলেজে জগদীশচন্দ্রের সহ-গবেষক হিসেবেও কিছুদিন কাটান। এরপর সাংসারিক অনটনের কারণে ভাগলপুরে নিজের প্রাক্তন কলেজে চাকরি নেন। ১৯১২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯১৬ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় স্বয়ং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান কলেজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করলেন। সেখানে সি ভি রামনের তত্ত্বাবধানে আলোকবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন শিশির কুমার, এবং ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-এসসি ডিগ্রি পান তাঁর ‘ইন্টারফিয়ারেন্স অ্যান্ড ডিফ্রাক্‌শান অব লাইট’ শীর্ষক থিসিসের জন্য। এরপর ১৯২০ সালে ইউরোপ সফরে গিয়ে চার্লস ফেবরে, মারি কুরি প্রমুখ কিংবদন্তী বিজ্ঞানীদের সান্নিধ্য পান শিশিরকুমার। তখন থেকেই রেডিও-ফিজিক্স বা বেতার-পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজে উৎসাহ পান তিনি, এবং ১৯২৫ সালে তাঁরই উদ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বেতার-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। এই উপমহাদেশে প্রথম বেতার সম্প্রচারও চালু করেন শিশির কুমার, কলকাতা থেকে তাঁর ‘রেডিও টু-সি-জেড’ কেন্দ্রের মাধ্যমে।

১৯৫৮ সালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে পেয়েছিলেন ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মান। বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানচর্চার উপর তাঁর লেখা 'দি আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার' বইটি সেকালে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য বই ছিল। ১৯৬৩ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়।

আরও পড়ুন : বাঙালি পণ্ডিতের রোমাঞ্চকর তিব্বত-অভিযান : পুথি-সংগ্রাহক শরৎচন্দ্র দাস / মন্দিরা চৌধুরী

১৯৭৩ সালে গৃহীত এক প্রস্তাবে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন ঘোষণা করে, চাঁদের গহ্বর অথবা গহ্বর-জাতীয় স্থানের নামকরণ হবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী (অ্যাস্ট্রোনমার) বা প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের নামে, এবং তা হতে হবে মরণোত্তর। এই তালিকায় আরও বহু খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর সঙ্গে কালক্রমে জায়গা করে নেন শিশিরকুমারও। ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট ইসরো-র চন্দ্রযানের তোলা ছবিতে আরও একবার ধরা পড়েছে চাঁদের বুকে শিশিরবাবুর নামাঙ্কিত সেই গহ্বর। 

.................. 

#Moon Crater #Shisirkumar Mitra #ISRO #Silly পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

60

Unique Visitors

219588