কবুল না করার বিপদ (প্রথম পর্ব)
.....................
ডিটেক্ট it : পর্ব ১২
..........................
বড় কর্তা বললেন, “শোনো হে! অমুক গ্রামের অমুক জায়গায় কি যেন গোলমাল হয়েছে খবর পেলাম। শিগগির বেরিয়ে পড়ো। একটু তদারক করে এসো দেখি। অল্পদিনেই কাজ সেরো। বেশিদিন হলে আবার আমাকে অন্য ব্যবস্থা দেখতে হবে। এই নাও পরোয়ানা।” কোতোয়ালিতে ঢুকে কপালের ঘাম মুছে সবেমাত্র একটু বসেছেন কি বসেননি, মুহূর্তের মধ্যে পরোয়ানা-শিলমোহর ট্যাঁকে গুঁজে, ধড়াচুড়ো পাল্টে বরকন্দাজের সঙ্গে ছুটলেন দারোগা। না দৌড়ে আর উপায় কী! বড় সাহেব বড়ই অধৈর্য। তদবিরের চোটে পাওয়া চাকরিটা না খোয়াতে হয়।
হন্তদন্ত হয়ে পৌঁছলেন। কিন্তু খুঁজবেনই বা কী? আর জিজ্ঞাসা করবেনই বা কাকে? চৌকিদারের উপর চোটপাট করে কতদূর এগোনো যায়! অগত্যা সেই মহাজনপন্থা। “ধর মার পাকড়”। লাঠির ঘায়ে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে তারিফ, বকশিশ এবং মরণাপন্ন চাকরির গোড়ায় আরও দিনকয়েক আয়ুর রসদ জুগিয়ে চলা। যদিও এর জন্যে ম্যাজিস্ট্রেটের খাস বেয়ারার কাছে কিছু খসেছে। অবশ্য যাঁকে মাস মাইনের পুরোটাই খাস বেয়ারার উপরি হিসেবে নিয়মিত পৌঁছে দিতে হয় তার কাছে এসব খরচ সাগরজলের কয়েক আঁজলা। দেখেও দেখতে নেই। ঠিকঠাক পৌঁছে দিলেই ভালো বা মন্দ তদন্ত যাই হোক রায় একটা বেরোবেই। এবং অবশ্যই তা দারোগার পক্ষে।
আসুন শোনাই, উনিশ শতকে কোতোয়ালির ডিটেকশনের গল্প। ইয়ে, যদিও শোনাতে শুরু করে দিয়েছি শুরু থেকেই। আগের পড়াটুকু মোটেই “গুল্প” নয়। খটখটে সত্যি। এক ফোঁটাও জল মেশাবার উপায় রাখেননি দারোগা মিয়াজান। তাঁর চাকরির উমেদার ছিলেন কালেক্টর সাহেবের আর্দালি। সম্পর্কে মিয়াজানের দুলাভাই। যদিও দুলাভাইয়ের হাতযশের চেয়েও আসল কীর্তিমান ছিলেন তার নিকা করা স্ত্রী। মিয়াজানের বোন। দুলাভাইয়ের থেকেও কালেক্টরের সঙ্গে তার বেশি খাতির। তিনি কালেক্টর সাহেবের রক্ষিতা। অতএব, আসান যোগ বিয়োগেই মিয়াজানের অঙ্ক মিলে গেল। অল্প আয়াসেই দারোগাগিরির জিম্মাদারি। হ্যাঁ, ম্যাজিস্ট্রেটের বেয়ারার ঘুষের খবরটা মিয়াজানের থেকেই জানতে পেরেছি আমরা। আর ঘুষ না দিয়ে উপায় কী! ডিটেকশনের চোটে আসামী পটল তুললে বাঁচাবে কে? সেবার ছকু জমাদারের জেরার দাপটে কার্তিক পোদ্দার অক্কা পেলে তেজপুর থানার দারোগা আর জমাদারকে বাঁচিয়েছিল কে?
ভালো কথা, ছকু কে চেনেন তো? এই যা! চেনেন না? শুনে নিন মিয়াজানের জবানীতেই “...ছকু হল কোনো ভালো ফৌজদারের এক নম্বর দোসর। সব থেকে কড়া জুলুম চালানোর সময় ওর মুখের হাবভাবে কোনো বদল হত না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে যেতে পারত কিংবা সেখানেই শুয়ে ঘুমিয়ে নিতে পারত। ভয়ানক অত্যাচার চালানোর পাশাপাশি ওর ঠিক খেয়াল থাকত কতটা টাকা হাসিল করে নেওয়া যায় আর তার কতটা ভরা যায় নিজের পকেটে।” জুলুমের চোটে জলদি কবুল অথবা ফরিয়াদির অনুরোধে নির্দোষকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে হয় কে নয় করানোর জন্যে তার সুখ্যাতি ছিল। কার্তিক পোদ্দারের বেলাতে তার হিসেব একটু গুলিয়ে যায়। “শালা যে কী করে ফৌত হল আমার মাথায় ঢুকছে না, মনে হয় ভয়ের চোটেই ফৌত হয়ে গেছে। এইসব তিলি, তামুলি জাতের লোকেরা সহজে মরে না। একবার একটা ডোমকে হাত-পা বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রেখেছিলাম, সকাল হলে দড়ি খুলে দেখি একেবারে বুলবুলের মতো তাজা! এক সের চিঁড়েগুড় খেয়ে নিল! এই তামুলিগুলো হচ্ছে আসল বজ্জাত, এদের জন্মই হয়েছে আমাদের ঝামেলায় ফেলবে বলে। দড়ি ছিঁড়ে গেল, হাত পর্যন্ত খুলে এলো না আর শালা কিনা ভয়ের চোটে ফৌত হয়ে গেল।” পরে দারোগা মিয়াজানের কাছে এ নিয়ে একাধিকবার আক্ষেপ করেছিল ছকু জমাদার।
কার্তিককে ‘শ্বশুরবাড়ী’-কে কী এমন গুরুভোজন করিয়েছিল ছকু? কৌতূহল হচ্ছে? ‘মিয়াজান দারোগার একরারনামায়’ ফিরে যাই।
‘কার্তিককে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলে একজন বরকন্দাজ নিখুঁতভাবে সাড়ে তিন হাত জমি মেপে দেগে দিল। কার্তিককে হুকুম করা হল এমনভাবে পা ফাঁক করে দাঁড়াতে, যাতে ওই দাগগুলো ছুঁতে পারে। একটা জরিপ করার কাঁটা খুলে ধরলে যেমন হলে সেইরকম। শুনে যতটা সহজ মনে হচ্ছে কাজটা করা মোটেই তত সহজ নয়। খুব বেশি হলে কার্তিক লম্বায় হবে পাঁচ ফুট। শরীরের উপরটা লম্বা, পা দুটো ছোট ছোট, পেটটা ঝুলে পড়েছে নীচের দিকে। মাটিতে দাগ দেওয়া জায়গাটা দেখে ভয়ের চোটে ওর তোতলামি শুরু হয়ে গেল।’...‘কার্তিককে দাগ দেওয়া জায়গার মাঝখানে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করানো হল, বরকন্দাজরা চেষ্টা করছিল ওর পা দুটো টেনে দাগের কাছে নিয়ে যাওয়ার।...সে বুঝতে পেরেছিল ওই চেষ্টা করতে গেলে শরীর চিরে দু-ফাঁক হয়ে যাবে। শেষে কাঁপতে কাঁপতে ও আচমকা বেহুঁশ হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।’...‘তারপর ও একটা ভাঁড় এনে হাজির করল। তার মধ্যে কয়েকটা শুকনো লঙ্কা রেখে ওপর থেকে চাপাল জ্বলন্ত কয়লার টুকরো। লঙ্কাগুলো পট্পট্ করে ফাটতে শুরু করলে এমন ধোঁয়া আর গন্ধ বেরোতে লাগল যে আমরাই হেঁচে-কেশে অস্থির। এবার ছকু সেই ভাঁড়টা নিয়ে রাখল কার্তিকের মাথার কাছে। তারপর ঘরের কোনা থেকে একটা চটের বস্তা তুলে নিয়ে ঢেকে দিল কার্তিকের মাথা আর ভাঁড়টা।...হাঁচতে হাঁচতে আর কাশতে কাশতে তড়াক করে খাড়া হয়ে বস্তাটা ছুঁড়ে ফেলল কার্তিক।’ ‘কিন্তু ছকু তখন খেপে উঠেছে।... তাই ও এবার ঘরের চাল থেকে দড়ি ঝোলানোর শেষ হুকুম জারি করল, তারপর নিজেই পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল কার্তিকের হাতদুটো। হাত বাঁধার সময় কার্তিক কোনো আপত্তি করল না। ওর সঙ্গে ঠিক কী হতে চলেছে সেটা ও তখনও বুঝে উঠতে পারেনি, কিন্তু চাল থেকে ঝোলানো দড়িটার দিকে নজর পড়তেই ওর কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। ও শুরু করে দিল চিৎকার। ছকুর ঘাড়ে তখন শয়তান ভর করেছে। দড়ির শেষ গিঁটটা নিজের হাতে ভালো করে দিয়ে যে বরকন্দাজ সেটার অন্য দিক ধরে দাঁড়িয়েছিল তাকে সরিয়ে নিজেই পাগলের মতো টান দিল।আমি শুধু শুনতে পেলাম একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার। টিমটিমে বাতির আলোয় নজরে এল উপর থেকে কিছু একটা ঝুলে আছে। ঠিক সেই মুহূর্তে বাতিটা নিভে গেল। চারিদিক অন্ধকার।’ এবং কার্তিকের স্বর্গপ্রাপ্তি। ছকু শিল্পী মানুষ। ঠিক কিনা বলুন?
যদিও ছকু বা ছকুর মতো মানসিকতার জমাদার অথবা দারোগাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। একেই সে সময় যাঁরা পুলিশের চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই অশিক্ষিত বা স্বল্প-শিক্ষিত। কার্যসিদ্ধির চাইতে আখের গোছানোই ছিল যাঁদের মূল উদ্দেশ্য। উপায় নেই। বেতন কম। তারপর মাইনের পুরোটাই যায় ঘুষে। ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তারাও ধরল উপরির পথ। শিক্ষিত বাঙালি সন্তান কেরানির চাকরি ছেড়ে সহজে এদিকে পা বাড়ায় না। ফলে তদন্তে ঠেকে গেলে বুদ্ধিবলের উপর বাহুবল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
‘আমরাই বা কী করব, হয়তো ডাকাতি হয়েছে আমাদের থানা এলাকায়, হাকিমের পরোয়ানা এল দশদিনের ভিতর যদি চোরাই মাল আর ডাকাতদের হদিশ করা না যায় তাহলে নোকরি খতম। আমারও হাকিম হুজুরকে সওয়াল করতে ইচ্ছে করে, যদি সরকার তাঁকে হুকুম করত তাঁর জেলায় ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের কিনারা দশ দিনের ভিতর করতে না পারলে তাঁকে চাকরিতে ইস্তফা দিতে হবে, তাহলে তখন তিনি কী করতেন? তখনও কি তিনি এখনকার মতোই বলতে পারতেন অপরাধের কিনারা করতে আমরা যে আঙুল মোচড়ানোর কায়দা ইস্তেমাল করে থাকি সেটা ভয়ানক, বিশেষ করে তাঁর সামনে যখন আর অন্য উপায় নেই।’ মিয়াজানের উষ্মা ন্যায্য। ‘বাড়িতে আরামে আয়েশে বসে একজন হাকিম জোরজুলুম বন্ধ করার পক্ষে সওয়াল করতেই পারেন। আমার জানতে ইচ্ছে করে এইরকম কায়দা ইস্তেমাল না করলে আমরা কেমনভাবে ভয়ানক সব অপরাধের সুলুক পাব? বেশিরভাগ মামলাতেই তো কী আসামি কী ফরিয়াদি তরফকে দেখা যায় সবকিছু ঢাকাচাপা দিতে ব্যস্ত।’ বেকায়দায় ফেলে দেওয়ার মত প্রশ্ন। আর মিয়াজান কেন, বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত প্রথম শিক্ষিত দারোগা, গিরিশচন্দ্র বসু-র আত্মকথা, ‘সেকালের দারোগা কাহিনী’-তেও ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠে এসেছে। “পূর্ব্ব দারোগারা অনেকে ইচ্ছাপূর্বক এইরূপ কার্য্য করিতেন, এমন নহে। অধিক সময়ে তাঁহারা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবদিগের হুকুমের ভাবে সেই প্রণালী অবলম্বন করিতে বাধ্য হইতেন।” কারণ উর্ধ্বতন কর্তারা বলেই দিতেন, “দারোগা তিন (কিম্বা মোকদ্দমার গুরুত্ব বুঝিয়া সাত) দিবসের মধ্যে আসামি হাজির কিম্বা মোকদ্দমার কেনার করে, যদি সে এই সময়ের মধ্যে ঐ কার্য্য করিতে অকৃতকার্য্য হয়, তাহা হইলে আপনাকে সাসপেন্ড (কিংবা কোনও স্থলে পদচ্যুত) বিবেচনা করিয়া, নায়েব দারোগার হস্তে শীলমোহর অর্পণ করিয়া, জবাবদিহির নিমিত্ত হুজুরে হাজির হয়।” ফলে ‘জ’-এ জবাব এড়াতে ‘জ’-এ জুলুম। কখনও মারধর আবার মুসলমান দারোগা হলে “প্রকাশ্যরূপে হিন্দুর অখাদ্য জীব সকল জবাই এবং হিন্দুর অস্পর্শীয় দ্রব্য সকল চতুর্দিকে নিক্ষেপ করিতে আরম্ভ করিত”। এভাবেই মরীয়া হয়ে চাকরি বাঁচাতে গিয়ে অপরাধ ও অপরাধীর এ হেন শনাক্তকরণ চলার ফলে, “এদেশে এমনও সময় ছিল, যখন পুলিশের আগমনে গ্রাম জনশূন্য হইয়া পড়িত।”
কিসসায় ফিরি। কিসসা অবশ্য নয়। তীব্র বাস্তব। অবসরপ্রাপ্ত দারোগা মিয়াজান নিজের একরারনামায় এই অন্ধকার দিক এত বেআব্রুভাবে তুলে ধরেছেন, কোতোয়ালির ডিটেকশনের অন্যতম ধাপ স্বীকারোক্তি আদায়ের সুলুকসন্ধান জানাতে গেলে তাঁকে ছাড়া গতি নেই। তেজপুর থানার চৌহদ্দিতে আপনাকে আবার স্বাগত জানাই।
“থানায় যে এসবের ইস্তেমাল হয় সে আমার নিজের চোখে দেখা।...এইরকম একটা জিনিস, দেখতে এত মামুলি যে মাটিতে পড়ে থাকলেও কেউ খেয়াল করবে না, তা হচ্ছে এক টুকরো বাঁশ। বড়জোর ইঞ্চি দশেক লম্বা আর ইঞ্চি তিনেক চওড়া। চিরুনির মতো চারটে ফালা করা। ফালাগুলো যাতে টুকরো টুকরো না হয়ে যায় তার জন্য শেষে একটা গাঁট থাকে। কোনো বেয়াদবকে শায়েস্তা করতে হলে তার একটা আঙুল এর মধ্যে ঢুকিয়ে মুখগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় বা হাত দিয়ে চাপ দেওয়া হয়, যেমনটা সুবিধে। টুকরোগুলো একসঙ্গে চেপে ধরলে কী হবে বুঝতেই পারছেন।” শুধু বোঝা! হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারা যাচ্ছে। কিন্তু এই কায়দায় যদি কাজ হাসিল না হয়, তখন ? প্ল্যান বি ?
‘থানার জবরদস্তির আরেকটা কায়দা হল ‘ ঘুরঘুরে’ বলে ছোট্ট একটা পোকা। দিনের বেলায় তাকে ঘর থেকে বের করে আনলে সে নিজের জন্য মাটিতে এমন গর্ত খুঁড়বে যে দেখলে তাজ্জব হতে হয়। পোকাটার মুখের দু ধারে পাখার মতো বেরিয়ে থাকে চোয়ালের শক্ত হাড়। একেবারে করাতের দাঁতের মতো ধারালো। শক্ত থেকে শক্ত জমিতে সে এই দিয়ে নিমেষে গর্ত খুঁড়ে ফেলে।’...“পোকাটাকে আমাদের কাজের লাগানোর কায়দাটা হচ্ছে; বেয়াদবের জামাকাপড় খুলে, হাত-পা পিছমোড়া করে বেঁধে চিত করে শুইয়ে দেওয়া। তারপর তার নাভির ওপর পোকাটাকে রেখে চাপা দেওয়া হয় আধমালা নারকোলের খোলা। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় তার কাজ। শক্ত জমির বদলে ফুটো হতে থাকে নাভি। বজ্জাতটা যে ফুলের বিছানায় শুয়ে নেই সেটা মালুম হয় তার চিৎকারে।” এই পদ্ধতি অবশ্য থানারই একচেটিয়া নয়। “যদ্দুর জানি খাজনা হাসিল করতে জমিদারদের কাছারিতেও মাঝেমাঝে এই কায়দার ইস্তেমাল হয়।”
আরও পড়ুন : পোয়ারো থেকে ফেলুদা—ছাঁচবদলের সত্যজিৎ / রাজর্ষি গুপ্ত
ছকু-স্পেশ্যাল জবরদস্তির উল্লেখ করে মিয়াজানের পর্ব শেষ করা যাক। ‘থানায় আরেক রকমের জুলুম চলে যেটা খুবই নোংরা আর ভয়ানক। যে লোক এই কায়দাটা ফেঁদেছিল বা যারা এর ইস্তেমাল করে তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই। এটা একটা সহজ কসরত। কোনো লোককে দুটো বাঁশের মধ্যে ফেলে চাপ দেওয়া। কিন্তু কায়দাটা খুবই খতরনাক। চাপ সবসময় ঠিকঠাক হয় না, তার উপর যাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে তার ক্ষমতা কতটা সেটাও অজানা। তাই সময় সময় সর্বনাশ ঘটে যায়।’ মিয়াজান অবশ্য এই কায়দা ঠিক পছন্দ করতেন না। কিন্তু তার জমাদারের আবার এই কায়দার কাছে আর কোনো কিছুই মনে ধরত না। সবসময়েই কয়েদির উপর এই কায়দা ফলাবার জন্যে তাঁর হাত নিশপিশ করত। অনেক কষ্টে তাঁর মন ফিরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যন্ত্রণার উপায় ইস্তেমালে রাজি করানো যেত। অবশ্য এই পদ্ধতিই তাঁকে একদিন চরম বিপদে ফেলে। যে কারণে দীর্ঘদিনের চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয়। মিয়াজানও ছকুর উপর তাঁর অপমানের বদলা নিতে পারেন। সে খবর অন্য কোনওদিন।
আরও পড়ুন : পৌরাণিক নাকি সাংসারিক : গোয়েন্দা দময়ন্তী / বসুন্ধরা মন্ডল
কী! মাথা ঝিম ঝিম করছে তো ! আজ তবে এইটুকু থাক। একদিনে অত্যাচারের মাত্রা বেশি বাড়িয়ে লাভ নেই।
........................
[সিরিজ পোস্টার : অর্পণ দাস]