দক্ষিণাপথের টিকটিকি
..................
নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা
নাম পুল্লা রেড্ডি। শ্যামবর্ণ। মাঝবয়েসী। গড়পড়তা চেহারা। উচ্চতা মাঝারী। তেলেগু এবং বাংলা দুইভাষাতেই অনর্গল কথা বলতে পারেন। ইংরেজিতেও সমান স্বচ্ছন্দ। চেহারার বিশেষত্ব বলতে, হ্যান্ডেলবার গোঁফ আছে। অগস্ট ১৯৮৬ থেকে নিঁখোজ। যে কোনও রকম খবর পেলে যোগাযোগ করুন...
ডিটেকটিভই যদি নিখোঁজ হয়ে যান, তবে তাঁকে ডিটেক্ট করা কি মুখের কথা? পুল্লা রেড্ডি অন্তর্ধান রহস্যের আজও তাই কোনো কিনারা হলো না। রন্টুর কাছ থেকে মাত্র আটটি কেসের খবর পেয়েছিলাম আমরা। আমরা, মানে যাদের বয়স এখন পঞ্চাশের কোঠায়, আনন্দমেলার পাতায় পুল্লা রেড্ডির কীর্তিকলাপের সঙ্গে যথেষ্ট ওয়াকিফ ছিলাম।
পুল্লা রেড্ডি একা নন। সঙ্গে ছিলেন রন্টুর মেজকা আর রন্টু। রেড্ডি মেজকার সহকর্মী। দুজনেই সরকারি চাকুরে। রন্টুর ভালো নাম সমীরণ। সবে ক্লাস ইলেভেন। এই তিনজন একসঙ্গে হলেই রহস্যের খাসমহল। অবশ্য সবসময় রহস্য তাদের তাড়া করে না মোটেই। মেজকার গাড়ি চেপে ফাঁক পেলেই তাই ঘুরে আসেন এদিক সেদিক। শীতের দুপরে ইডেন গার্ডেনসে টেস্ট ম্যাচ দেখতে যান। তবে কলকাতার বাইরে চট করে পা রাখেন না। দার্জিলিং, আহমেদাবাদ আর বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই), কেসের সূত্রে এই তিন জায়গায় পা রেখেছিলেন রেড্ডি। নয়ত অবসর সময়ে ক্রাইম থ্রিলার আর এনসাইক্লোপিডিয়া পড়ে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। অবশ্য মেজকার কাছে উনি নিজেই একজন এনসাইক্লোপিডিয়া। খাওয়া দাওয়ায় আদ্যন্ত নিরামিষাশী রেড্ডি। খেতে ভালবাসেন খিচুড়ি আর অবশ্যই দক্ষিণী খাবার।
এক ঝাঁক বাঙালি গোয়েন্দার মাঝে এই দক্ষিণী গোয়েন্দা বাহুবলের থেকে বুদ্ধিবলের উপরই বেশী আস্থা রাখতেন। গুলিগোলা ছুঁড়তে মোটেই পছন্দ করতেন না। অবশ্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা মেজকা সেই অভাব পুষিয়ে দিতেন। তবে তার খুব একটা প্রয়োজনও হয়নি। বেশীরভাগ কেসই ছিল সম্পত্তিসংক্রান্ত। তা ছাড়া সাধারণ চুরি, হারানো জিনিসের তদন্ত, দুষ্প্রাপ্য ডাকটিকিটের খোঁজ, বিরল আফ্রিকান হীরের হদিশ এর মধ্যেই ঘুরে বেরিয়েছে দক্ষিণী গোয়েন্দার তদন্ত-নামচা। সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হলেও, রেড্ডির ডিটেকশন এতটাই সহজ রাস্তা ধরে এগোয়, চট করে বিশ্বাস হতে চায় না। চোখের সামনে ছড়িয়ে থাকা ক্লু গুলোকে জড়ো করেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন রেড্ডি। আর মধ্যে মধ্যে ঝিলিক দিয়ে যায় তার অগাধ জ্ঞান। ‘কুসুমে কীট’ গল্পে নতুন অর্কিডের ফাইল চুরির তদন্তে নেমে অর্কিড-এর বিষয়ে প্রচুর তথ্যের হদিশ দিয়েছিলেন প্রবলেম সলভার পুল্লা রেড্ডি। প্রথম গল্পে, রেয়ার স্ট্যাম্পের খোঁজ করতে গিয়ে রেড্ডির স্ট্যাম্প বিষয়েও প্রাথমিক জ্ঞানচর্চার ছাপ পাওয়া যায়।
বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্য অবাঙালি ডিটেকটিভ হিসেবে পেয়েছিল দীনেন রায়ের রবার্ট ব্লেককে। তা ছাড়া বাঙালি গোয়েন্দাদেরই দাপট। সম্প্রতি সৈকত মুখোপাধ্যায়ের কলমে আমরা পেয়েছি এক অবসরপ্রাপ্ত দারোগা উমাশঙ্কর চৌবে-কে। জুনিয়রদের ডাকে মাঝেমধ্যেই অবসর-বিলাস ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন তদন্তে। সেই পরিসংখ্যান নজরে রাখলে এই দক্ষিণী গোয়েন্দার জনপ্রিয়তা রীতিমত উল্লেখযোগ্য। স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টির এমন জনপ্রিয় হওয়ার নজিরও তো কম।
লেখিকা মীরা বালসুব্রামনিয়মের নাম কতজন মনে রেখেছেন? অথচ আনন্দমেলা,সন্দেশের পাতায় পুল্লা রেড্ডি ছাড়াও চুটিয়ে শিশু সাহিত্যের চর্চা করেছেন। বড়দের জন্যেও গল্প লিখছেন। ‘দৌড় যখন শেষ’ গল্পগ্রন্থে তারা ঠাঁই করে নিয়েছে। তবু, লেখিকা সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য আজও অধরা। পুল্লা রেড্ডিও তাঁর খোঁজ দিতে নাকাল।
এই লেখার শুরু হয়েছিল এক নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা দিয়ে, শেষেও রইল আরেক নিরুদ্দেশের খোঁজে বিজ্ঞাপন।
নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা
নাম মীরা বালসুব্রামণিয়ম। সাহিত্যিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : একটি কামনার মৃত্যু, তিনটি তামার পয়সা, দৌড় যখন শেষ, প্রবলেম সলভার পুল্লা রেড্ডি ও একটি রূপকথার সঙ্কলন। বিখ্যাত চরিত্র পুল্লা রেড্ডি। তাঁর সম্পর্কে যে কোনও তথ্যের সন্ধান পেলে যোগাযোগ করুন...
.........................................................
[পোস্টার : অর্পণ দাস]