ভালো খবর

বইয়ে ভরা সেলুন : আশ্চর্য নজির তামিলনাড়ুর পন মারিয়াপ্পানের

অহনা বড়াল Jan 30, 2021 at 3:48 am ভালো খবর

এই মুহূর্তে আপনি প্রতিবেদনটি পড়ছেন মুঠোফোনের পর্দায় চোখ রেখেই। কিন্তু যাঁর সম্পর্কে এই প্রতিবেদন, তাঁর বিদ্রোহ এই মুঠোফোনের বিরুদ্ধেই। তিনি আমাদের খানিক ছুটি দিতে চেয়েছেন স্ক্রিনমুখী জীবন থেকে। পরিবর্তে উপহার দিতে চেয়েছেন বইয়ের পাতার স্বস্তি।

মানুষটির নাম পন মরিয়াপ্পন। তামিলনাড়ুর থোথুকুড়ি শহরের এক সাধারণ ক্ষৌরকর্মী। নিজের ছোট্ট সেলুন। তবে তা বলে স্বপ্ন ছোট হবে কেন? যে কাজই করুন না কেন, তাতে অভিনবত্ব থাকবে - এমনই ইচ্ছে ছিল তাঁর। সেই অদম্য ইচ্ছেশক্তির জোরে আজ বিখ্যাত হয়ে গেছে তাঁর সেলুন। মরিয়াপ্পনের সেলুনে রঙিন পোস্টার, ম্যাগাজিন, টি.ভি. সেটের পরিবর্তে স্থান পেয়েছে বই। একটা-আধটা বই নয়; তামিল, ইংরেজী সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৯০০ বই। রয়েছে একটি বড়ো বুকশেল্ফ, যাতে প্রায় ২৫০-র কাছাকাছি বই। বাদবাকি বই জায়গা করে নিয়েছে সেলুনের বিভিন্ন কোণে। 

অর্থাভাব এবং পারিবারিক প্রয়োজনে অষ্টম শ্রেণিতেই মরিয়াপ্পনকে প্রথাগত লেখাপড়া ছাড়তে হয়। শিক্ষিত হবার খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর। ছোটবেলা থেকে তিনি শিক্ষিত হয়ে অভিনব কিছু করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি। ফলে রোজগারের অন্য পথ নিতে হয়। প্রায় ১৮ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে মরিয়াপ্পন ২০১৪ সালে নিজের সেলুন খোলেন। নাম ‘সুরেশ বিউটি সেন্টার’। তবে সম্প্রতি সেই সাধারণ সেলুন তাঁর অসাধারণ পরিকল্পনায় অনেকের নজর কেড়ে নিয়েছে। তিনি লক্ষ করলেন তাঁর সেলুনে আসা প্রত্যেকেই ব্যস্ত- কেউ টি.ভি.র পর্দায় চোখ রাখতে আর কেউ আবার মোবাইল স্ক্রিনে। ব‍্যাপারটা তার একেবারেই ভালো লাগে না। সেই প্রথম তাঁর মাথায় আসে সেলুনে বই রাখার ভাবনা। একটি নামজাদা সংবাদপত্রকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে তিনি বলেছেন, “জ্ঞান মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়। আমি সবসময় ভেবেছি মানুষ কেন এখন বই-বিমুখ হয়ে পড়ছেন। ভেবেছি কী করে মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যেস জাগিয়ে তোলা যায়।” তাই হঠাৎ করেই একদিন সকালবেলা তিনি সেলুনের টেলিভিশন সেটটি সরিয়ে সেখানে সাজিয়ে রাখেন পাঁচটি বই --- পেরিয়ার, আন্নাদুরাই, কালাম, আব্রাহাম লিঙ্কন এবং কার্ল মার্কসের জীবনী। কিছুদিন পরেই তিনি লক্ষ করেন বেশ কিছু মানুষ চুল কাটার ফাঁকে উল্টে নিচ্ছেন বইয়ের পাতা। সেখান থেকেই শুরু। এরপর থেকে বিভিন্ন বই কেনার, সংগ্রহ করার মধ্যে দিয়ে সেজে ওঠে তাঁর সেলুন। ২০১৫-র শেষের দিকে তাঁর সেলুনের একটা দিক ভরে ওঠে বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ে। এমনকি ছোটদের জন্য রূপকথার বইও বাদ পড়ে না তার থেকে। যখনই কেউ তাঁর এই সেলুনে চুল কাটতে আসেন, তখনই মরিয়াপ্পানের তরফ থেকে ভেসে আসে একটি অনুরোধ। ফোনের পরিবর্তে পছন্দ মতো একটি বই হাতে তুলে নেওয়ার অনুরোধ। প্রথম প্রথম অনেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে অনেকেই তাঁর এই অভিনব ভাবনার গুরুত্ব বোঝেন। তাঁর সেলুনে আসা খুদেদের জন্য রয়েছে একটি আলাদা রেজিস্টার খাতাও। যাতে লেখা থাকে তাদের এবং পড়া বইয়ের নাম এবং তাদের পাঠ করা অংশের সারসংক্ষেপ। 

আরও পড়ুন : হাজারেরও বেশি অনাথ শিশুর 'মা' সিন্ধুতাই সাপকল

২০১৮-র শুরুতে মরিয়াপ্পান তাঁর সেলুনে ঘোষণা করেন এক নতুন 'বাম্পার অফার'। মরিয়াপ্পান জানান, যেসকল মানুষ তাঁর সেলুনে এসে যে কোনও বইয়ের ১০ টি পাতা পড়বেন এবং তার একটি সারাংশ লিখতে পারবেন, তাদের তিনি দেবেন ৩০ টাকার বিশেষ ডিসকাউন্ট। এমনকি সপ্তাহের শেষে সে 'Open mike reading'-র আয়োজন করেন তিনি। তাঁর মতে এই অনুষ্ঠান আড়ম্বরহীন হলেও, এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যেমন জোরে জোরে পড়ার এবং গল্পপাঠের অভ্যেস বাড়বে তেমনি একইসঙ্গে বাড়বে আত্মবিশ্বাসও।

এরপর থেকেই বিভিন্ন মানুষ যেমন তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন তেমনি তাঁর কাছে উপহারস্বরূপ এসে পৌঁছেছে অনেককে সাহায্য এবং তাঁর প্রিয় বইও। বেড়েছে তাঁর বইয়ের সম্ভার। শিক্ষার সঙ্গে সংলগ্ন থাকার অপূর্ণ স্বপ্ন তিনি এভাবেই পূরণ করে নিচ্ছেন। পন মারিয়াপ্পয়ান আসলে প্রমাণ করে দিয়েছেন, ‘It’s never too late’। স্বপ্নকে নিরন্তর ধাওয়া করতে থাকলে একদিন না একদিন, কোনও না কোনওভাবে সে স্বপ্ন মানুষের মুঠোর মধ্যে এসে ধরা দেবেই। 


#barber #Salon-library #books #book-lover #Tamil Nadu #reading #Ponmariappan #ভালো খবর #অহনা বড়াল #সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

21

Unique Visitors

219134