সত্যজিৎ, স্পর্শ, কাতরতা
নেটফ্লিক্সের ‘Ray’ সিরিজটির রিভিউ বাঙালি পাঠকদের জন্য লিখতে বসছি যখন, তার মুক্তির এক সপ্তাহ কেটে গেছে। মাত্র সাতদিনের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শয়ে শয়ে রিভিউ ছড়িয়ে পড়েছে; ছবিগুলি দেখে মতামত দিয়েছেন অনেকেই, তা পড়ে ছবিগুলি দেখার আগেই মতামত তৈরিও করে ফেলেছেন অনেকে। সিরিজটি দেখার ব্যাপারে, দেখে ভাল-খারাপের আলোচনায় মশগুল হওয়ার ব্যাপারে যে দর্শকেরা অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন, এই ক’দিনে তাঁদের সে কাজ শেষের পথে। তাই, এই রিভিউতে কোন অভিনেতা কেমন করলেন, কোন নির্দেশক কতটা ‘ছড়ালেন’, কোন ছবি দশে কত পাওয়ার যোগ্য, এ’সবের পুনরাবৃত্তি অমূলক। বরং, প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার ঢেউ কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসছে যখন, এই অবসরে আমার কয়েকটা প্রশ্ন ছিল।
কিন্তু তারও আগে বিচার্য, সিরিজটিকে নিয়ে এরকম হাসি-মশকরার আবহ কেন চারদিকে? জন্মলগ্ন থেকে অনেক প্রয়াসের ভাগ্যেই ট্রোলিং জোটে, সে নিয়ে বিস্মিত হচ্ছি না; কিন্তু এই সিরিজটিকে খাটো করার পিছনের কারণটি অনুধাবন করার চেষ্টা করছি। এবং যেটুকু বুঝেছি, খুব ভুল না করলে, এই সিরিজের গণগালাগাল খাওয়ার পিছনে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বা অন্য কোনও নির্দেশকের ব্যর্থতা যতটা দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী সত্যজিৎ রায়। একটু ভুল বললাম; দায়ী সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে আমাদের ফেলা বা গেলার মধ্যবর্তী অসহায়তা। বিশ্বভারতী একসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে যা করেছে, বাঙালি আজ এই সিরিজটির সমালোচনা করতে গিয়ে ঠিক তাইই করছেন – বিশুদ্ধতাবাদী, কুলীনবুদ্ধির প্রয়োগ।
এবার আমার প্রশ্নে আসি। আমার প্রথম প্রশ্ন – সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালে প্রয়াত হওয়ার পর থেকে কি আমরা আদৌ জানি, ওঁর লিখিত সাহিত্য থেকে যখন সিনেমা তৈরি হয়, তখন আমরা ঠিক কী চাই? শেষ ২০-২৫ বছর ধরে খুব কাছ থেকে সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টিসমূহের চলচ্চিত্রায়ন লক্ষ্য করেছি বলে বলতে পারি, সন্দীপ রায় যখনই সত্যজিতের কোনও একটি কাহিনি অবলম্বনে ছবি তৈরি করেন, আপামর সিনেমাপ্রিয়, সত্যজিৎ-সংবেদী বাঙালির বক্তব্য, “বাবা যে কথাগুলো লিখে গেছেন, ওইভাবে টুকে দেবে তাই বলে? নিজের সামান্য নিজস্বতা না থাকলে গল্পগুলো আজকের দিনে চলবে কেন? সাহিত্যের সংলাপ থেকে সিনেমার সংলাপ, দৃশ্যায়ন আলাদা হবে, এমনটাই তো হওয়া উচিত! সেটুকুও পারলেন না বাবার সঙ্গে থেকে শিখতে?” অথচ এই সিরিজ দেখে আমাদের বক্তব্য কী? “এত বদলে দিল? এটা কি ফাজলামো হচ্ছে?” “সত্যজিতকে ট্রিবিউট জানাবি জানা, অপমান করছিস কেন?” “লাগামছাড়া হওয়ার একটা সীমা থাকে!” আমাদের অসহায় বৈপরীত্যটা খেয়াল করুন শুধু – একদিকে আমরা বুঝি, সত্যজিতের সৃষ্টিগুলি তাদের আঙ্গিকে পুরোদস্তুর কালোত্তীর্ণ নয়, কিন্তু সময়ের মানদণ্ডে সেই সৃষ্টি থেকে ‘বিচ্যুতি’গুলিও আমরা বিচার করতে নারাজ। ‘কাল্ট’ হওয়ার সমস্ত বিড়ম্বনা বয়ে চলতে হয় সত্যজিৎ রায়কে; তাঁর স্পর্শকে সময়াতীত রাজদণ্ড ঠাওরে আমরা এখনও খুঁজতে ব্যস্ত সেই নাড়ি, যা বিচ্যুতি ও বিশ্বস্ততা একই সঙ্গে ধারণ করবে।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন – আমরা কি adaptation এবং appropriation-এর মধ্যেকার তফাত সম্বন্ধে অবগত? Adaptation বিষয়ে এখানে বক্তব্য রাখা নিষ্প্রয়োজন, সত্যজিৎ-নির্দেশিত বেশিরভাগ ছবিই তাই – অন্তত সেই সূত্রে আমরা এ ব্যাপারে অনেকটাই জানি। কিন্তু Appropriation যে adaptation-এরই একটি ধরণ, যাতে স্থান ও কাল পরিবর্তনযোগ্য বা পরিবর্তনশীল হয়ে ওঠে, এ নিয়ে আমাদের স্বচ্ছতর ধারণা থাকা প্রয়োজন। যখন একটি বিশেষ সময়ের, সমাজের, অর্থনীতির, ভাষার, স্থানের ছাপ বহনকারী একটি সাহিত্যকে বর্তমান সময়ে একটি ভিন্ন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে, ভিন্ন ভাষায়, বৃহত্তর দর্শককূলের জন্য আমরা চলচ্চিত্রে রূপায়িত করি, সময় ও উদ্দিষ্ট সংস্কৃতির দাবি মেনে চিত্রনাট্যে এবং সিনেমায় বদল এনে থাকি আমরা। কিন্তু বদলই যদি আসে, কোথায় গিয়ে তাহলে সিনেমা এবং মূল সাহিত্যে মিল? তাহলে কি পুরোটাই বিচ্যুতি? বিশ্বস্ততা নেই কোথাও? বিশ্বস্ততা আছে – ভাবে, উদ্দেশ্যে। মূল আখ্যানের ভাব বা উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত রেখে তাকে পুনর্গঠন করার কাজকেই সিনেমার বা নাটকের ভাষায় appropriation বলে থাকি আমরা।
Appropriation নামক এই ‘পাপ’ কাজটি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ই ভারতে প্রথম করলেন, এমন নয়। চারপাশে তাকালেই ভুরি ভুরি উদাহরণ পাবেন; ট্রোলিং-এর মেজাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি কুলীন উদাহরণই নিই, শেক্সপীয়রের তিনটি নাটক থেকে বিশাল ভরদ্বাজের তিনটি সিনেমা আমরা সকলেই তারিয়ে তারিয়ে দেখেছি, উপভোগ করেছি “ওঃ! শেক্সপীয়রকে ভারতে নিয়ে এল!” বলে। কই, এই যে ‘হায়দার’-এ কাশ্মীর সমস্যা দেখানো হল, আমরা তো প্রশ্ন করিনি, শেক্সপীয়রের ‘হ্যামলেট’-এর উপর এমন বাটপারি করার সাহস ভরদ্বাজের এল কোত্থেকে? ‘ওমকারা’-তে লংড়া ত্যাগী উঠতে-বসতে ‘চুতিয়া’ বলে গেল, কই আমরা তো গর্জে উঠিনি, “‘ওথেলো’-তে ইয়াগো নিদেনপক্ষে একবার “fucketh thee” বললে তবু একটা কথা ছিল! বলেনি লোকটা, তাও এসব বসিয়ে দিল মুখে?” আর ‘মকবুল’-এ তো, বাবা রে, লেডি ম্যাকবেথ নাকি হয়ে গেল আব্বাজির স্ত্রী! এ নিয়েও সাধারণ, মায় অসাধারণ ক্রিটিকেরা বিশেষ সরব হন নি। কেন হন নি? কারণ মূল সাহিত্যের যে লক্ষ্য, বক্তব্য – ম্যাকবেথের অতি-অ্যাম্বিশন মকবুলে, ওথেলোর হীনমন্য সন্দেহবাতিক ওমকারায়, বা হ্যামলেটের মানসিক দ্বন্দ্ব হায়দারে – বিঘ্নিত হয় নি। বরং, দেশ-কাল ভেদে, নতুন আঙ্গিকে ও বাচনে তারা কালোত্তীর্ণই হয়েছে।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে ‘গরীবের নোলান’ বলে আমোদ পাওয়া মানুষেরা নিশ্চিত এতক্ষণে ভাবছেন, তাহলে বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে সৃজিতের তুলনা শোনার জন্য তাঁদের বেঁচে থাকতে হল শেষ পর্যন্ত? নাহ, আমি সৃজিতবাবুর বা অভিষেক চৌবে বা ভসন বালার নির্দেশনা নিয়ে কথাই বলছি না; আমাদের অসুখ সত্যজিৎ রায় নিয়ে, আমি ওতেই বেঁধে রাখবো নিজেকে। আসুন, আলোচনা করি, সত্যজিৎ রায়ের গল্পগুলিকে নতুন স্থান-কালে পুনর্গঠন করার জন্য কী কী বদলাতে হতো? নেটফ্লিক্সে ১৫-১৮ কোটি বাজেটের একটি পপুলার, ‘ফিল্মি’ ওয়েব সিরিজের ছবি করার প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে, সত্যজিতের বেশিরভাগ গল্পের পুরুষচরিত্রই হয় নাবালক, নয় ব্যাচেলর, নয় বিপত্নীক। সেখানে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার সহজ পন্থা হিসেবে সৃজিতবাবুর মনে হয়েছে, দুটি ছবিতেই নারীর উপস্থিতি প্রয়োজন। ‘ফরগেট মি নট’-এ নারীর উপস্থিতি ও প্রয়োগ ঈপ্সিতের (বিপিন চৌধুরী) গ্লানিকে আরও ঘনীভূত করে, অন্ধকারময় করে তোলে; এটিকে বাতুলতা মনে হলে, তার সঙ্গে সহজেই তুলনীয় 'অরণ্যের দিনরাত্রি' উপন্যাস থেকে সিনেমার প্রকট ফারাক, বা 'প্রতিদ্বন্দ্বী'র শেষ দৃশ্যে গল্পের রগচটা সিদ্ধার্থকে সিনেমায় melancholy করে তোলা। দুই ক্ষেত্রেই অবশ্য পরিবর্তনগুলি সত্যজিতের একান্ত নিজস্ব সংযোজন হলেও, বা ঔপন্যাসিক ঈষৎ উষ্মা প্রকাশ করলেও, তা নিয়ে সভ্যসমাজে খিস্তি-খেউড় হয়নি, কারণ সেকালে বাঙালির উপাস্য হিসেবে সুনীল গাঙ্গুলির চেয়েও বড় ছিলেন সত্যজিৎ স্বয়ং। ওয়েব-সিরিজের ‘বহরূপিয়া’তে নির্দেশকের মনে হয়েছে, শিল্পীর নিখুঁত মেক-আপের বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে যদি একটা মাঝারি মানের টাকার স্ক্যাম ঢুকিয়ে দেওয়া যায় সহকর্মীকে অপদস্থ করতে, মন্দ হয় না। তিনি তাইই করেছেন। ‘হাঙ্গামা কিঁউ হ্যাঁয়, বরপা’ ছবিতে অভিষেক চৌবে কথকতাকে ব্যবহার করেছেন অন্য মাত্রায়। একজন শায়র – যিনি মানুষের সামনে গজল গেয়ে, শায়রি করেই আলাপে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ – নিজের হাত-সাফাইয়ের কাহিনি বলছেন বারবার ‘ফোর্থ ওয়াল’ ভেঙে বেরিয়ে এসে, দর্শকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগে। বিশ্বায়ন-পরবর্তী যুগে, মাসে ৬৫০ টাকা দিয়ে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা প্রজন্মের একটা বড় অংশ বিপিন চৌধুরীর প্রখর স্মৃতিকে যে চনমনে সাবলীলতায় দেখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে, সেই সাবলীলতাই একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সর্বেসর্বা ঈপ্সিতের মধ্যে দেখানো হয়েছে।
তাহলে এই পরিবর্তনগুলি কি ছবিকে তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করেছে? তার জন্য নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, কাহিনিগুলির মূল লক্ষ্য তবে কী? সত্যজিতের সাহিত্য অনুসারে প্রতিটি কাহিনির যে নির্দিষ্ট পরিণতি, তাতে পৌঁছনো তো লক্ষ্য বটেই, তবে ‘থ্রিলার’ নামে পরিচিত সত্যজিতের এই লেখাগুলির প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে একটি যে মানুষকে ‘থ্রিল’ করা, তা অনস্বীকার্য। আমরা প্রাপ্তবয়সে এসব কাহিনি পড়ে শিহরিত হয়ে বলি, “মোটেই শুধু কিশোর-সাহিত্য নয়”। অর্থাৎ, কিশোর-সাহিত্যের অতীতে অবস্থিত রোমাঞ্চের গন্ধ আমাদের টানে; সেই রোমাঞ্চের প্রকাশ সময় ও স্থানভেদে বদলে গেলে এত সমস্যা আমাদের? তখন জবরদস্তি “আমার শৈশবের ইনোসেন্সটাকে মেরে দিল গো” বলে বিলাপ করার অজুহাত খুঁজতে হচ্ছে আমাদের? পরিবর্তনগুলি কতটা প্রয়োজনীয় ছিল, তার বিচার হোক ছবিতে তার অবদানের নিরিখে? কৌলীন্য বজায় রাখতে এতই সাধ হলে সঠিক প্রশ্ন করা দরকার; সেটা করছি তো আমরা?
এতক্ষণে সকলেরই ধারণা হয়েছে, লেখক এই সিরিজের সবকটি ছবি ও পরিবর্তনের পক্ষে। আবারও নিরাশ করছি, সত্য তা নয়। প্রতিটি ছবিতেই দুর্বলতার ছাপ যথেষ্ট। দশ বছর বয়সী বাচ্চা জীবনে প্রথম খারাপ কথা শুনলে যেরকম উত্তেজনায় প্রতি পদে তা ব্যবহার করতে থাকে, সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রায় সেই আনন্দে প্রথম গল্পের সূচনাদৃশ্যে ঈপ্সিতের মুখে অযথা গালাগাল বসিয়েছেন। দ্বিতীয় গল্পে নারীচরিত্রের ও যৌনদৃশ্যের উপস্থিতি বহুরূপী শিল্পীর যে হতাশাকে ধরার চেষ্টা করেছে, তা না থাকলে মূল গল্পের উদ্দেশ্যরক্ষায় কোনও ত্রুটি হতো না। মনোজ বাজপায়ী ও গজরাজ রাও অভিনীত তৃতীয় গল্পটি যদিও এই সিরিজের সবচেয়ে বেশি জোরদার সৃষ্টি, সেখানেও ঘড়ি দেখে বিরাট ঘড়িসুলভ প্ল্যাটফর্মে মুসাফির আলির মাইম দৃশ্যগত বৈচিত্র্য যোগ করা ছাড়া আর কোন দিক দিয়ে যথার্থ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ভসন বালা নির্দেশিত শেষ গল্পটি, উদ্দেশ্যগত বিশ্বস্ততার নিরিখে বিচার করলে, বাকিগুলির পাশে অপাংক্তেয়, নিন্দনীয়। মূল গল্পের উদ্দেশ্য তো বাদই দিলাম, স্টোরিলাইনের সঙ্গে সামান্যতম সাযুজ্য না রেখে যে জিনিসটি নির্দেশক তৈরি করেছেন, তা স্বতন্ত্র মেলোড্রামা হয়ে ওঠারও অযোগ্য। খামোকা স্রষ্টা হিসেবে সত্যজিৎ রায় ঠাই পেলেন এখানে।
আরও পড়ুন : রোমাঞ্চ আর রসবোধের ককটেলে একটুকরো অহং : The Family Man / সুচরিতা বসু
অতএব, শেষ অব্দি গিয়ে হাতে তাহলে রইল কি? পেন্সিল? বরং পেন্সিল এবং নোটবই দু হাতে থাকুক, কিলবিল লেখায় ভরা থাক শিল্পকর্মের সমালোচনা। কিন্তু পূর্বপরিকল্পিত প্ল্যান অনুযায়ী, না-দেখেই সমালোচনা কেন? বা সমালোচনা হলেও তার প্রশ্নগুলি এত গোদা কেন, যার উত্তর আপনি নিজেই জানেন না? যেখানে কপিরাইট দেওয়া না দেওয়া আপনার হাতে নেই, এবং যাঁর হাতে আছে, তিনি কপিরাইট দিয়েছেন, সেখানে অলিখিত কপিরাইট-হোল্ডার সেজে এত দাপাদাপি কিসের? অনেক নবীন চলচ্চিত্রকার এবং film buff – যারা সিনেমা তৈরি করার ব্যাপারে সত্যজিতের কাপড় খুলে নেন, এখন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে লড়ছেন, “দু মিনিটের বেশি দেখতেই পারিনি” বা “দেখে সময় নষ্ট করবো কেন? সত্যজিতের ধারেকাছে তো আসবে না!” বরং, লড়তে যদি হয়ই, যা পাতে পড়েছে, চেখে দেখাই সমীচীন। সত্যজিৎ নিয়ে কথা যদি বলতেই হয়, পুরোটা দেখে বলুন। আলবাত নিন্দে করুন, কিন্তু ওরকম ক্লাস সেভেনের ‘ব্যাটটা আমার, তাই আমিই সব ম্যাচে প্রথম ব্যাটিং করবো’ ধরণের খেলো-খেলো যুক্তি নয়। বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথের কপিরাইট ছাড়ার পর নীল দত্ত ‘উ লা লা’ও বসিয়েছেন, শ্রীকান্ত আচার্য একের পর এক অনবদ্য বাদ্যযন্ত্রের সহায়তায় গান গেয়েছেন। দুই প্রকার নিবেদনই যার যার গ্রহণ করার, তারা করেছে। সত্যজিৎ রায়ও, তেমনই, আপনার বা আমার একার নয়। সর্বভারতীয় স্তরে সত্যজিৎ রায় সমাদৃত হন – এই স্বপ্ন যদি আমাদের সত্যিই থেকে থাকে, যদি সত্যিই তাঁকে সাহিত্যিক বলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বাসনা আমাদের থেকে থাকে, তাহলে বিসদৃশ উপস্থাপনার স্পর্শে এত কাতরতা কেন? দ্বার বন্ধ করে ভ্রম-ভ্রান্তি ঠেকাতে বসলে, সত্যই “কোথা দিয়ে ঢুকি” বলে ফাঁপরে পড়ে, তার আবার সত্যজিৎ!
........................
#সিলি পয়েন্ট #ওয়েবজিন #Web Portal #RAY #Satyajit Ray #সত্যজিৎ রায় #Srijit Mukherjee #Review #শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী