গানের রামমোহন
ভারতপথিক রামমোহনের সংগীতচর্চার বিষয়ে বাঙালি সেভাবে ওয়াকিবহাল নন। অথচ গান লেখা, সুর করায় এক ভিন্ন ঘরানা তিনি সূচনা করেছিলেন। ধ্রুপদ বা টপ্পার চলনে ব্রহ্মসংগীত যে বাংলা গানের ধারায় জায়গা করে নিচ্ছিল, তার শুরুটা রামমোহনেরই হাতে।
অবশ্য প্রথাগতভাবে তাঁর গানের চর্চা শুরু নিতান্ত প্রৌঢ় বয়সে। সমসাময়িক ওস্তাদ গায়ক ধ্রুপদ ও টপ্পা বিশেষজ্ঞ কালী মির্জা তথা কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে গানের চর্চা করেছিলেন। তার কিছু পর থেকেই তাঁর ভাবসমৃদ্ধ রাগাশ্রয়ী ব্রহ্মসংগীত জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। সেগুলো বিদগ্ধ শ্রোতাদের মধ্যে মুগ্ধ বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। ব্রহ্মসংগীত নামটি রামমোহনেরই দেওয়া। কলকাতার পাথুরিয়াঘাটের জমিদার দর্পনারায়ণ ঠাকুরের পৌত্র গোপীমোহন ও গোপীমোহন ঠাকুরের পুত্র প্রসন্নকুমার ঠাকুর, সঙ্গীতশিল্পী রাহিম খাঁ এবং সমকালের অনেক সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতগুণীদের নিয়ে সঙ্গীতের এক মায়াবী পরিমণ্ডল তিনি গড়ে তুলেছিলেন। শোনা যায়, প্রতি শনিবার সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ৯ টা 'ফিরিঙ্গি' কমল বোসের বাড়িতে বসত এই ব্রহ্মসংগীতের আসর।
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে প্রকাশিত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত ‘রামমোহন গ্রন্থাবলী’তে ‘ব্রহ্ম-সঙ্গীত’ অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে রামমোহনের রচিত বত্রিশটি গান। নিরাকার ব্রহ্মের কথা গানের মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। গান দিয়ে মানুষের হৃদয়ে অনেক সহজে পৌঁছানো যায় বলে তিনি মনে করতেন। গবেষকদের মতে তাঁর প্রথম লেখা গান ১৮১৬ সালে, সিন্ধু ভৈরবী রাগে, ঠুংরি তালে রচিত গানটি হল ‘কে ভুলালো হায়’। ১৮১৬ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত আত্মীয়সভার এক অধিবেশনে এই গান গাওয়া হয়। তাঁর দ্বিতীয় গান ‘ভয় করিলে যাঁরে না থাকে অন্যের ভয়’ সাহানা রাগে, ধামার তালে নিবদ্ধ। প্রতিটি গানের জন্য আধার রাগ এবং প্রযুক্ত তালের উল্লেখ আছে। জীবনের শেষ গানটি লিখেছিলেন ব্রিস্টলে, ১৮৩২ সালে। 'ভাবো সেই একে' বা 'নিখিল নিরঞ্জন'-এর মতো কিছু গান গণমাধ্যমে আজও প্রচলিত। তবে মোটের ওপর এটা মেনে নিতেই হয় যে রামমোহনের সংগীত জনপ্রিয়তা পায়নি। কিন্তু অনেক শিল্পীকে তিনি অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন। তাঁরই ধারা অনুসরণ করে ব্রহ্মসংগীতের ধারায় অবতীর্ণ হন আরও অনেক সমর্থ শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথও এই ধারায় অসাধারণ কিছু গান রচনা করেছিলেন।
............
#Raja Ram Mohan Roy #Brahmo Samaj #silly পয়েন্ট