আখ্যানের খোঁজ (পঞ্চম পর্ব)
[চতুর্থ পর্বের পর]
.....................
৯
দিন আর সন্ধের মাঝখানে যে ছোট্ট গলি থাকে, সেইখান থেকে আখ্যান ঢুকে পড়ে এক অন্য কলকাতায়। কীভাবে যেন কদিনের ছুটি পেয়েছিল সে। তাও ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। যেন খুব শিগগির শেষ হয়ে আসছে প্রিয় উপন্যাস। অথচ এই ছুটিতে কী করেছে আখ্যান?
ঘোরানো সিঁড়ির ওপর শহরের আদিম পানশালা। চকমেলানো মেঝে। বিশাল কাঠের জানলার ওইপার দিয়ে হইহই করে ছুটে চলেছে ভবানীপুর। লম্বা সিলিং ফ্যান নেমে এসেছে কাঠের কড়িবরগা থেকে।
আখ্যানের সেই আশ্চর্য চাকরির বয়স হল বেশ। এই এতগুলো দিনের মুখ এতটাই একরকম যে আখ্যানের অবাক লাগে। প্রত্যেকদিন ঘুম থেকে ওঠা। স্নান-খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়া কলকাতার রাস্তায়। খুঁজে চলা সেই আশ্চর্য ঘর। রাতে বাড়ি।
চাকরির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির উদ্যম কমে আসে। তারপর এক রংহীন দুপুর এসে বলে যায়, এই অনন্ত চাকরি আসলে এক অভ্যেস মাত্র। রোজকার জামাপ্যান্ট, রোজকার ব্যাগ, টিফিন, জলের বোতল, জুতোর ফিতে, এই সমস্ত পেরিয়ে সিসিফাসেরা যেন কবে বুঝে গেছে তাদের বয়ে চলা পাথর আসলে একটা সময়ের পর আবার ফিরে আসবে নিজের শহরে। তারপর আবার সেই পাথরকে শহর থেকে ঠেলে তুলতে হবে পাহাড়চুড়োয়। এই অনন্ত অর্থহীন অশান্তি আখ্যান বুঝে গেল কবে!
কবে সে বুঝে নিল এই শহরের সমস্ত রাস্তা আসলে এক আশ্চর্য গোলকধাঁধা। এই শহরের কোনও রাস্তা মানুষকে কোত্থাও নিয়ে যায় না। আখ্যানের মনে হয় এই শহরটাই তার অনন্ত চাকরি। এই শহরের রাস্তা, ভেঙে পড়া বাড়ি, ঝুলে পড়া গাছ, নিঃস্ব প্রেমিকের মতো একলা পানশালা, এইসব– সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে আখ্যানের কাঙ্ক্ষিত ঘর। যে ঘর খুঁজে দেওয়ার চাকরির বোঝা আখ্যানের কাঁধে। সেই ঘরটা রয়েছে এদেরই কোনও পাশে। আখ্যান দেখতে পাচ্ছে না।
ঝড়ের মতো মানুষ এসে পড়ে এই খোঁজার শহরে। আসে, আবার চলে যায়। তারপর ফিরে ফিরে আসে। এই শহরে যারা আসে তারা কেউ কোনোদিন মন থেকে এই শহর ছেড়ে যায় না। কলকাতায় মানুষের মন জমে ওঠে।
অথচ কলকাতা ছেড়ে চলেও তো যাচ্ছে কত মানুষ। অন্তত যেতে চাইছে। আখ্যানের বন্ধু মিছিল। যার সঙ্গে আখ্যানের অনেক দিন দেখা হয় না। যার সঙ্গে আখ্যানের একদিন দেখা হবে। সেও সেদিন কথায় কথায় বলল, সে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চায়। এমন এক জায়গায়, যেখানে কেউ চেনে না তাকে। অতীতের সম্ভাবনা আর বর্তমানের ব্যর্থতা কোনোটাই নেই যেখানে!
আর আখ্যানের সেই বন্ধু! দূরদেশবাসীকে ভালোবেসে যে লাইব্রেরির চাকরি নিতে চায়!
সেই আশ্চর্য লাইব্রেরি! সেই একলা ছেলে! যে বন্দি হয়ে ছিল অভিশপ্ত লাইব্রেরিতে। আর সেইখানে ছিল এক অত্যাচারী ভেড়া মানুষ! অত্যাচারী? অত্যাচার শব্দের মধ্যে আছে অতি আচার। নিজের কাজে, নিজে আচরিত ধর্মে যে অন্ধ হয়ে গেছে, সে-ই কি অত্যাচারী? একবার একটা পাতলা বই পড়ে এমনই মনে হয়েছিল আখ্যানের। মাত্র ছিয়ানব্বই পাতা। আর তার ভেতরে একটা একলা ছেলে এক অভিশপ্ত গ্রন্থাগার থেকে পালাতে চাইছে!
সেই কোন ছোটোবেলায় আখ্যান ঢুকে গেছিল বইয়ের দুনিয়ায়। বই হয়ে উঠেছিল আখ্যানের অনিবার্য পলায়ন। লুকিয়ে থাকার জায়গা। যে পৃথিবীতে আখ্যান মানিয়ে নিতে পারল না কোনোমতে, সেই পৃথিবীটাকে বেশ খানিকক্ষণের জন্য একেবারে না করে দিতে পারে একটা বই। বই আসলে এই অসহ্য পৃথিবীর একমাত্র জাদুকর।
অথচ আখ্যানের পড়া ছোট্ট উপন্যাসে লাইব্রেরিই হয়ে উঠল এক আশ্চর্য অন্ধকার। এক অনন্ত ভয়। যে-কোনো বিষয়ের বই এলোমেলো পড়ে চলা বাচ্চা ছেলেটি ঢুকে পড়েছিল যে অনন্ত অন্ধকারে, সেই অন্ধকার ঘনিয়েছে কখন। কলকাতায় সন্ধে নেমেছে। এই বুঝি শেষ হয়ে এল আখ্যানের বন্ধুর সেতারের ক্লাস। এই বুঝি শেষ হয়ে এল আখ্যানের প্রিয় শ্যামকল্যাণ। প্রাচীন এই পানশালা ঢেকে গেল আদিম অন্ধকারে! চেয়ারের নিচ থেকে হেঁটে গেল বিষণ্ণ বিড়াল। সেই আশ্চর্য পৃথিবী গিলে ফেলল আখ্যানকে...। চারপাশের দেওয়ালগুলো খালি সরে আসছে আখ্যানের দিকে।
আখ্যানের ভয় করছে। ভীষণ ভয় করছে।
১০
যে বছর আখ্যান চাকরি পেল, সেই বছরের পুজোর কয়েকদিন পর তার হাতে এসেছিল এক হারিয়ে যাওয়া বই। বইটা পেয়ে খুবই অবাক হয়ে গেছিল আখ্যান। তার ভাবতে ভালো লাগছিল আমাদের হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখে কেউ। তারপর হঠাৎ একদিন সেই জিনিসদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়ে যায়। আখ্যান মাঝেমধ্যেই সেই বইটা নিয়ে বসে। কিন্তু পড়ে না। এইসব ভাবে। তার ভাবতে ভালো লাগে মাধবীও একদিন এইভাবে চলে আসবে। মাধবীর অনেকদিন কোনও খোঁজ নেই। মাধবী হারিয়ে গেছে।
তবে যাওয়ার আগের মাধবী বলে গেছিল আখ্যান ঘরটা খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে পাবে। আখ্যান সেই ঘর এখনও পায়নি। মিথ্যে বলেছিল মাধবী?
অবশ্য মাধবী তো আর গণৎকার নয়। সে জানবেই বা কী করে? হয়তো আখ্যানকে একটু ভোলানোর জন্যই বলেছিল। কিন্তু আখ্যান ভুলল কই? সে ক্রমাগত খুঁজেই চলেছে সেই ঘর।
প্রচণ্ড গরম পড়েছে এইবার। প্রত্যেকবারই পড়ে যদিও। আর এই গরমে আখ্যানকে বেরোতে হচ্ছে রোজ। খাঁ খাঁ দুপুর। সমস্ত শহর ঢেকে গেছে একটানা রোদে। সেইদিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কেমন একটা নেশা হয়। চোখ জ্বালা করতে থাকে।
এইরকম এক দুপুরে ক্লান্ত আখ্যান এসে বসল একটা বটগাছের ছায়ায়। কলকাতা শহরে প্রচুর বড়ো বড়ো গাছ কাটা হয়। তাদের মধ্যে কোনও কোনও গাছ বেঁচেও যায় যেন কীভাবে। এ তেমনই এক গাছ। গোড়াটা বাঁধানো। রাস্তায় তখন পিচ গলছে। মানুষ তো নেই-ই। কোনও পাখিও নেই। একটানা রোদ আর গরম হাওয়া। বিষণ্ণ ঠ্যালার ওপর গামছা পেতে ঘুমোচ্ছে ঠ্যালাওয়ালা। তার দিকে তাকিয়ে আখ্যনের হঠাৎ খুব ঈর্ষা হয়। ওইরকম আগুনের মাঝে শুয়ে ওইরকম নিশ্চিন্ত ঘুম, আখ্যান কি পারবে কোনোদিন?
রোদের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ধীরে ধীরে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। বেঁকেচুরে যায় সামনের দৃশ্যপট। ভেসে আসে ফেলে আসা সময়। মানুষজন।
মাধবীর কথা খুব মনে পড়ে আখ্যানের। এই কদিনের জীবনে যে সমস্ত মানুষ আখ্যানের কাছে এসেছে, তারা সবাই দূরে চলে গেছে। আখ্যানের মনে যাওয়া বা আসার দাগ বেশিক্ষণ থাকে না। সত্যিই কি থাকে না?
এদিকে হয়েছে এক মুশকিল। চাকরি পাওয়ার পরেই বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য খুব করে বলছে। বিশেষত মা। মধ্যবিত্ত সাধারণ ঘরে একটা বয়সের পরে ছেলে চাকরি পেলে এসব বলা হয়। কিন্তু আখ্যান বাড়িতে কী করে বোঝায়, তার চাকরিটা আর পাঁচটা সাধারণ চাকরির মতো নয়! এর কোনও নিশ্চয়তা আছে কি না সে নিজেই জানে না। অথচ বাড়ির ঘ্যানঘ্যান এতটাই বেড়ে গেছে যে আখ্যান একরকম বিরক্ত হয়েই একটা ডেটিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছে। মানে বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে নিজের পছন্দমতো করাই ভালো। কিন্তু আখ্যান কি বিয়ে করতে চায়?
আসলে সে যে বিয়ের জন্য কোনোরকম উদ্যোগ নিচ্ছে এইটা দেখাতে পারলেও আত্মীয়স্বজন একটু শান্ত থাকে। অন্তত ‘মেয়ে দেখছি’ বলা যায়। সে অবশ্য কিছু না করেই বলা যায়। এসব উপযাচক প্রশ্ন শিমুল তুলোর ওড়াউড়ি। বেশিক্ষণ গায়ে থাকে না। আসলে আখ্যানেরই একজন কাউকে দরকার। না, বিয়ে নয়। একজন, যাকে অন্তত কিছু কথা বলা যায়। না হলে তার আশ্চর্য খোঁজ যে কথার পাহাড় তৈরি করছে, একদিন সেই পাহাড়ের তলাতেই চাপা পড়ে যাবে আমাদের আখ্যান।
যখন প্রেম ছিল জীবনে, তখন ওর প্রেমিকা খুবই বিয়ের কথা বলত। এতটাই বলত যে আখ্যানের মনে হত প্রেমটা বিয়ের একটা সিঁড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে আখ্যানের তখন চাকরিবাকরি নেই। তারপর একদিন সেই প্রেম ঘুমিয়ে পড়ল। কদিন আখ্যানের মনে একটা ফাঁকা ফাঁকা ভাব এসেছিল ঠিকই। কিন্তু প্রেম ভাঙলে যতটা কষ্ট হওয়ার কথা, আখ্যানের ততটা কষ্ট হয়নি। সে এটা ভেবে বেশ শান্তি পেত যে বিয়ের চাপ আপাতত নিতে হবে না। আখ্যান যখনই বিয়ের কথা ভেবেছে তখনই তার সেটাকে একটা বাড়তি চাপ বলেই মনে হয়েছে। একে তো আমাদের দেশে বিয়ে ব্যাপারটা একটা বড়োসড়ো সামাজিক ইভেন্ট। আর আখ্যান চিরকালের অসামাজিক। কিন্তু তার থেকেও বড়ো কথা, তখন আখ্যানের রোজগার বলতে কয়েকটা টিউশনি। আখ্যান মা-বাবার সঙ্গে যে ছোট্ট বাড়িটায় থাকে সেটা বিয়ে করে থাকার মতো নয়। একটাই ঘর। একটাই বাথরুম। এক ঘরে মা বাবা ছেলে থাকা যায় বটে, কিন্তু আর-একজন এসে গেলে একটা পরিবারের মধ্যে আর-একটা পরিবার তৈরি হয়। আর সমস্ত পরিবারেরই একটু নিভৃতি লাগে।
তো, প্রেম ভাঙার পর আখ্যানের মনে হয়েছিল যে এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনটাই যেন হওয়ার ছিল। বিয়ে করার মতো পরিস্থিতি তো তার নয়। শুধু রোজগারের জন্য নয়, আরও গহিন এক সমস্যা আছে তার। যে সমস্যাকে নিজের নিভৃততম বাক্সে লুকিয়ে রাখে সে। প্রাক্তন প্রেমিকাকে সেই কথা বলতে পারেনি আখ্যান। ভয় পেয়েছে। নতুন কেউ এলে তাকে কি বলতে হবে? বলা তো উচিত।
এসব ভাবতে ভাবতেই গরমকালের কলকাতায় ওঠে এক অন্যরকম হাওয়া। যে হাওয়ায় শুকনো ঘাস আর পাতা ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসে আখ্যানের দিকে। হুহু শব্দে বাঁশি বেজে ওঠে।
১১
সাদা ঢোলা পায়জামা আর হাফহাতা ফতুয়া। কাঁচাপাকা গোঁফ। ব্যাকব্রাশ করা চুল নেমে এসেছে কাঁধের ওপর পর্যন্ত। দীর্ঘদিনের সেই ব্যাকব্রাশের টানেই মনে হয় লোকটার মাথার সামনেটা একদম ফাঁকা হয়ে গেছে। কপাল থেকে মাথার দুপাশ দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে টাক। বাদামি মানুষ। কাঁধে একটা ঝোলা। ঝোলায় নানান সাইজের নানান বাঁশি। আর একটা বাঁশি লোকটার হাতে। সেটা বিক্রির জন্য নয়। বাজাবার জন্য। অনেকেই লোকটাকে দেখেছে। দমদম মেট্রো স্টেশনে বসে বাঁশি বাজায়। বাঁশি বেচে। তবে এইরকম একটা আগুনের দুপুরে লোকটা কেন হেঁটে আসছে ময়দানের ওপর দিয়ে? আখ্যানের ঘোলাটে দৃশ্যপটে হঠাৎ করেই কাঁপতে কাঁপতে স্পষ্ট হয়ে উঠল লোকটার অবয়ব। কিন্তু তার আগেই আখ্যানের কানে এসেছে বাঁশির আওয়াজ।
পা-র্সা র্সা নি। ধা পা -হ্মা গা মা। ধা া া া। ধা া না র্সা…
হাম্বীর?
ছায়ানট হলে ভালো হত, সে ভাবে। অথচ এই ভাবনার তেমন কোনও মানে নেই। এই গরমে ছায়ানট শুনলে যে ঠান্ডা লাগবে তা তো নয়। তা ছাড়া এই সুর যে হাম্বীর সেটাও তো আখ্যান নিশ্চিত নয়। কোনও রবীন্দ্রসংগীতের সুর মনে হচ্ছে। ‘মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি’? কে জানে!
এদিকে বাঁশিওয়ালা চলে এসেছে আখ্যানের ছায়ায়। বুড়ো বটে হঠাৎ করেই ফিরে আসছে দগ্ধ পাখি। কখন যেন দুপুর গড়িয়ে পড়েছে বিকেলের দিকে। আর এক রোদেপোড়া বাঁশিওয়ালা আখ্যানের কাছে আগুন চাইছে।
আসলে বিড়ি ধরাবে। আখ্যান সিগারেট খায় না। দেশলাই সঙ্গে থাকে না তাই। শুনে সেই বাঁশিওয়ালা আখ্যানের পাশে উবু হয়ে বসল। আগুন না পেয়ে একটু হতাশ কি? কিছু কিছু মুখ থাকে যেখানে দুঃখ হতাশা আনন্দ আলাদা করে বোঝা যায় না। এই মুখ তেমনই। পশ্চিমে ঢলে পড়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে বসে আছে লোকটা।
আচ্ছা, একে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়? হঠাৎ মনে হল আখ্যানের। মানে সেই ঘরটার কথা। আখ্যানের সন্ধান এইরকমই। প্রথম কয়েকমাস এলেমেলো হেঁটে বেরিয়েছে কলকাতার রাস্তায়। ব্রোকারদের কাছে গেছে। পুরোনো বাড়ি কেনাবেচা করে এইরকম মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সবাই বলেছে যে সেই বিশেষ ঘরের খোঁজ তারা জানে। তাদের সঙ্গে দৌড়েছে আখ্যান। চষে ফেলেছে মোকাম কলিকাতা। কিন্তু হায়! কোথাও চকমেলানো মেঝে থাকলেও দেওয়াল নীল নয়। কোথাও কাঠের জানলা রয়েছে বটে, কিন্তু সেই তাসের ফটোফ্রেম তিনটে নেই। মোট কথা, ইমেলের বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যাবে এমন ঘর আখ্যান পায়নি।
মাঝেমধ্যে আখ্যান ভাবে, সে কি সত্যিই মন থেকে চায় ঘরটা খুঁজে পেতে? ঘরটা পেলেই হয়তো চলে আসবে এক অমোঘ ইমেল। your service is no longer required. বন্ধ হয়ে যাবে মাসের মাইনে। জীবনে প্রথম যে সামান্য সচ্ছলতার মুখ আখ্যান দেখেছে, চলে যাবে তাও। কিংবা হয়তো অন্য কিছু খোঁজার বার্তা আসবে। সেই ভরসাতেই খোঁজা বন্ধ করেনি আখ্যান। তা ছাড়া আখ্যানের ভয়ও আছে। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই কয়েকটা কালো চোখ ওর ওপর নজর রাখে। অন্য পৃথিবীর সাপের দৃষ্টি অনুসরণ করে ওকে। কোনও অকস্মাৎ সন্ধেবেলা অনর্গল বিদ্যুতের মাঝে খুলে যায় সেই পৃথিবীর দরজা। আখ্যান আবার খুঁজতে শুরু করে।
তা কোনোভাবে যখন ঘরের সন্ধান মিলছে না, তখন আখ্যান রাস্তাঘাটের অচেনা মানুষদের ধরে জিজ্ঞেস করতে থাকে। কেউ কেউ তো পাগল ভাবে। অধিকাংশই পুরো কথা শুনতে চায় না। আবার কেউ কেউ শোনেও মন দিয়ে। শোনে। আর ভারী অবাক হয়।
এই লোকটাও শুনল। হয়তো মন দিয়েই। অথবা মন না দিয়ে। কারণ ওর চোখ দুটো সেঁটে রইল ঘোলাটে সূর্যের দিকে। ওর মুখে পড়তে লাগল দিনের শেষ আগুন। চোখে চিকচিক করতে লাগল হারিয়ে যাওয়া সময়ের আলো।
সবটা শুনে কিছু না বলে আবার বাঁশি বের করল সে।
দিনটা ফুরিয়ে নিই। বলে সুর ধরল সে। সুর হয়ে সন্ধে ছড়িয়ে পড়ল গড়ের মাঠে।
(ক্রমশ)
...........................
[অলংকরণ : ঐন্দ্রিলা চন্দ্র]