প্রণব লাল : একজন দৃষ্টিহীন ফটোগ্রাফার
একটা বিষয়ে নিশ্চয়ই সকলেই একমত হবেন যে ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে সবথেকে জরুরি বিষয় হল দৃষ্টিশক্তি। দৃষ্টিহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফির ব্যাপারটা আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। কিন্তু এই মিথকে ভেঙে দিয়েছেন প্রণব লাল। আজ্ঞে হ্যাঁ। সোনার পাথরবাটি বা কাঁঠালের আমসত্ত্বকেও হার মানায় প্রণব লালের গল্প। প্রণব জন্ম থেকেই অন্ধ। অথচ তিনি একজন দুর্দান্ত ফটোগ্রাফার। দৃষ্টিহীন ফটোগ্রাফার প্রণব লাল আজ গোটা বিশ্বেই বেশ পরিচিত নাম।
২০০১ সালে 'ভয়েস' নামক একটি সফ্টওয়ার দাবি করে যে, তারা অন্ধদের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম। সফ্টওয়ারটি মূলত ছবিকে শব্দে রূপান্তরিত করে, যা দৃষ্টিহীন ব্যক্তি হেডফোনের মাধ্যমে শোনেন এবং নির্ধারণ করেন যে তিনি কী দেখছেন। শব্দের তীব্রতা দৃষ্টিহীন প্রণবকে দৃশ্যের উজ্জ্বলতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। একইভাবে বিষয়টি বাম থেকে ডানে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টিরিও হেডফোনটি তার অবস্থানকে তুলে ধরে। একইসঙ্গে শব্দটির পিচ বিষয়টির উচ্চতা উপস্থাপন করে। এই সফটওয়্যারটি প্রণবের কাছে কৃত্রিম চোখ হিসেবে কাজ করে। এর সাহায্যে প্রণব কোন কিছু স্পর্শ না করেই জিনিসগুলি বুঝতে পারেন।
দৃষ্টিহীন হলেও প্রণবের পড়াশুনা কখনও থেমে থাকেনি। মা-বাবার উৎসাহে ফটোগ্রাফির পাশাপাশি তিনি বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। নিজেকে অন্ধ বা প্রতিবন্ধী বলে মেনে নিতে কোনও আপত্তি তিনি করেন না। বরং তিনি যে অন্ধ এবং তা সত্ত্বেও একজন ফটোগ্রাফার, এই বিষয়টা তাঁর কাছে বেশ সুখকর৷ বর্তমানে তিনি নয়াদিল্লিতে একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। এরই পাশাপাশি সুযোগ পেলেই তিনি ফটোগ্রাফির ওয়ার্কশপেও যোগ দেন। নয়া দিল্লির লোধি উদ্যানে ছবি তুলতে তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কারণ সেখানে সবুজের সমাহার, জলের কলতানের পাশাপাশি নানারকম প্রাণির অনাগোনা রয়েছে। সেখানে প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধের বৈচিত্র্য অনুভব করে প্রাণের আরাম হয় তাঁর।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রণব দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে অনেক স্টিরিওটাইপ ভেঙে দিয়েছেন। বি বি সি'কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন - “Photography, for me, is a way to show what I am seeing. For me photography is a process”। আর এই ফটোগ্রাফিকে অবলম্বন করেই তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। কখনও সুযোগ পেলে তিনি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীর ছবি তুলতে চান কিংবা নিজস্ব ক্যামেরা দিয়ে বন্দী করতে চান অগ্ন্যুৎপাতকে।
জীবনকে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গিই বছর চল্লিশের প্রণবকে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করেছে। প্রযুক্তির সাহায্য তো রয়েইছে। তবে প্রযুক্তি তো উদ্যম আর অনমনীয় মনোভাব দিতে পারে না। যাঁদের সেটা থাকে, তাঁরাই পারেন প্রকৃতিদত্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজের চেষ্টায় সমাজে পরিচিত হয়ে উঠতে।
#Pranab Lal #Photographer #Blind #Blind Photographer #প্রণব লাল #দৃষ্টিহীন #ফটোগ্রাফার #কুনাল দাস