ভালো খবর

আলোর পথে পিপলান্ত্রি গ্রাম

সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় Dec 12, 2020 at 11:39 am ভালো খবর

" শুকোতে দাও স্যাঁতস্যাঁতে এ জীবন
রোদের পিঠে, আলোর বিষম বন্যা
হচ্ছে দেখ, নাচছে ঘন বন..
সঙ্গে সুখী হরিণ।
ও মেয়ে হাসো,
নিজের দিকে দু' চোখ দাও,নিজেকে
ভালোবাসো"

আমাদের তথাকথিত আধুনিক সমাজ তথা ভারতবর্ষে এখনো নবদম্পতির কাছে পুত্র ভাগ্য শব্দটির মধ্যেই বধূটির পূর্ণতা ও সম্মানবোধ লুকিয়ে থাকে।  তারই একটি নিদর্শন বহন করে চলত রাজস্থানের রাজসমন্দ জেলার পিপলান্ত্রি গ্রামের মানুষ। নারী মানেই বিবাহ আর বিবাহ মানে যৌতুক। এমন নীতিই তো আমরা সানন্দে বহন করে চলেছি যুগের পর যুগ! সুতরাং প্রচুর যৌতুক দিয়ে অর্থাৎ অর্থ ব্যয় করে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কারণে মেয়ে হয়ে উঠেছে একটি 'বোঝা'  পিপলান্ত্রি গ্রামে। তাই সেখানে কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং কন্যা শিশু হত্যা ছিল সেই বোঝা ঝেড়ে ফেলার একমাত্র উপায়। কিন্তু চিরকালই অন্ধকারের পরে আসে আলো। পিপলান্ত্রি গ্রামের গ্রাম প্রধান শ্যামসুন্দর পালিওয়াল সেই আলোর কথা শোনায়। 'কিরণ নিধি যোজনা' নামে এক প্রকল্পের উদ্যোগ নেন তিনি এবং উদ্যোগে সামিল হয় সরকারও। 



এই প্রকল্প অনুসারে একটি কন্যা শিশু জন্মানোর পর শিশুটির পরিবারকে সেই গ্রামে লাগাতে হবে ১১১ টি গাছ।  এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পরিস্থিতি বিশেষে গ্রামের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও বয়স্ক মহিলারা। 

এই প্রকল্পটির পিছনে সমাজকর্মী ও গ্রাম প্রধান শ্যামসুন্দর পারোয়ালের যে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তা হল কন্যা শিশু জন্মের সময় তার পরিবার এই প্রকল্প অনুযায়ী গাছ লাগালে তা ১৮ বছর পরে মেয়েটি সাবলম্বি হলে তা তার আর্থিক ভবিষ্যতকে অনেকাংশে নিশ্চিত করবে। আর্থিক দিক দিয়ে মেয়েটির উচ্চশিক্ষা কিংবা বিবাহ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা দেখা যাবেনা। ফলে ' নারী জন্ম' যেখানে পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা সাবলীল ভাবে এগিয়ে যেতে পারবে উচ্চশিক্ষার দিকেও। তারা হয়ে উঠবে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর।



এছাড়াও কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যত সুদৃঢ় করতে 'কিরণ নিধি যোজনা' প্রকল্পের সঙ্গে নেওয়া হয় আরো বেশ কিছু উদ্যোগ। 'ভামাশা' নামক আরও একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেখানে পরিবারের মহিলাদের নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট এবং ভামাশা কার্ড তৈরি করা হয়। এছাড়াও কন্যা সন্তান জন্মানোর পর মেয়ের বাবা মায়ের কাছ থেকে ১০,০০,০ টাকা এবং দাতা ওবামা সার থেকে ৩১,০০,০ টাকা সংগ্রহ করে একটি এফ ডি একাউন্ট খোলা হয়। এবং এর দেখভালের দায়িত্বে থাকে গ্রাম পঞ্চায়েত। ১৮ থেকে  ২৫ বছর পরে এই টাকা ম্যাচিউরিটির পরে হয়ে দাঁড়ায় প্রায় কয়েক লক্ষ টাকায় যা নিশ্চিত করে মেয়েটির ভবিষ্যৎ। সেই সঙ্গে এত বছরে চারাগাছ গুলিও বড় হয়ে ওঠে ফলে পরিবেশও ফিরে পায় ক্রমশ তার হারিয়ে যেতে চলা বন্ধুদের। এছাড়াও চালু হয় জননী সুরক্ষা প্রকল্পও।  এই প্রকল্প গুলির সাথে পরিবারগুলির চুক্তিবদ্ধতার জন্য গ্রহণ করা হয় ' কিরণ নিধি প্রকল্প শপথ'। সেই শপথপত্রে যে কয়েকটি চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয় তা হল :


যে পরিবারগুলিতে কন্যা শিশু জন্মানোর পর ১১১ টি গাছ রোপন করা হয়েছে সেই পরিবার গুলিকে শিশুকন্যাটিকে এবং গাছগুলোকে সমান যত্ন সহকারে লালন করার দায়িত্ব নিতে হবে।

কন্যা ভ্রুণ হত্যা নিষিদ্ধকরণ। 

পরিবারকে কন্যার বাল্য বিবাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপরে যে ফিক্সড ডিপোজিট এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই অর্থ একমাত্র মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা এবং বিবাহের ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে।

সর্বোপরি কন্যা জন্মের সময় গ্রামে যে বৃক্ষ রোপন করা হয়েছিল পরবর্তীকালে সেইসকল বৃক্ষ গ্রামের সম্পত্তি হবে। ইত্যাদি।



আসলে আলোর উৎস লুকিয়ে থাকে অন্ধকারের মাঝেই।  তা কেবল ছড়িয়ে দিতে জানতে হয়। তবেই তো এক নতুন মাত্রা পাবে রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রাম পিপলান্ত্রির মত বাকি অন্ধকারের রাস্তাগুলো। 



তথ্য ঋণ : Vinnosomoy.com



কভার ছবির উৎস : indiatvnews

#বাংলা #ফিচার #Rajasthan. #Pipalantri Village

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

23

Unique Visitors

208846