'রায় বাহাদুর' উপাধি ত্যাগ করেছিলেন নেতাজির পিতা জানকীনাথ
বিখ্যাত ব্যক্তির কৃতী আত্মীয়েরা অনেক সময় আড়ালে থেকে যান। যেমন নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পিতা জানকীনাথ বসু। নেতাজির পরিচয়ে পরিচিত না হলেও তাঁর একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি থাকত। পেশায় তিনি কৃতী আইনজীবী ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে 'রায় বাহাদুর' খেতাব দিয়েছিল। তাদের অপশাসনের প্রতিবাদে সেই খেতাব তিনি ত্যাগ করেন।
জানকীনাথের জন্ম ১৮৬০ সালে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে। পিতা হরনাথ বসু এবং মাতা কামিনী বসু। জানকীনাথ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সব পরীক্ষায় স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। স্কলারশিপের অর্থে নিজের লেখাপড়া চালিয়েছিলেন। বই কিনবার ক্ষমতা থাকত না সবসময়। কলেজে সহপাঠীদের কাছ থেকে বই নিয়ে তিনি হাতে লিখে নকল করে নিতেন। এইভাবে লেখাপড়া করে তিনি আইন পরীক্ষায় পাশ করেন।কলকাতায় থাকার সময়, তিনি ব্রাহ্মসমাজের নেতৃবৃন্দের সংস্পর্শে আসেন এবং গভীরভাবে প্রভাবিত হন। এই প্রভাব তাঁর মধ্যে আমৃত্যু কাজ করেছিল। ১৮৮০ সালে প্রভাবতী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৮৫ সালে তিনি কটকের আদালতের বারে যোগদান করেন । ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কটক মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম বেসরকারি সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সরকারী প্লিডার নিযুক্ত হন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সংস্থার সদস্য হন এবং তাঁকে রায় বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে মতানৈক্যকের কারণে তিনি সরকারি উকিল ও পাবলিক প্রসিকিউটর পদে ইস্তফা দেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে রায় বাহাদুর উপাধি ত্যাগ করেন। আট পুত্র ও ছয় কন্যার মধ্যে স্বদেশপ্রেমের আদর্শ সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন। সে-কারণেই হয়তো সুভাষচন্দ্রের মতো সন্তান পেয়েছিলেন। আর আরেক কৃতী সন্তান আইনজীবী ও স্বদেশপ্রেমী শরৎচন্দ্র বসু।
.................