সংবাদপত্র থেকেই প্রাণের সঞ্চার : জাপানি খবরের কাগজের আশ্চর্য উদ্যোগ
সকাল হলেই কম-বেশি আমাদের সবার বাড়িতেই সংবাদপত্র আসে। পড়া হয়ে গেলে আমরা কেউ কেউ সেগুলো জমিয়ে রাখি, কেউ কেউ সেগুলোকে ফেলি বাতিলের খাতায়, আবার কেউ কেউ ওজন দরে বিক্রিও করে দিই। এই সংবাদপত্র কিন্তু আবার পুনরাবর্তিত হয়ে কখনো মুদিখানার ঠোঙা কিংবা অন্য কোনও রূপে ফিরেও আসে আমাদের জীবনে। আচ্ছা, কেমন হত একবার ভেবে দেখুন তো, যদি এই খবরের কাগজই নতুন প্রাণের সন্ধান নিয়ে প্রতিদিন হাজির হত আমাদের দোরগোড়ায়? চমকে গেলেন নাকি? আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে কিন্তু এমনই চমকপ্রদ ঘটনা ঘটিয়েছিল জাপানের এক নামী প্রিন্ট মিডিয়া।
২০১৬ সালের ৪ঠা মে, জাপানে সেদিন মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে ‘গ্রিনারি ডে’ বা ‘সবুজ দিবস’। এই উপলক্ষ্যে জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় একটি দৈনিক সংবাদপত্র সংস্থা ‘দ্য মাইনিচি শিম্বুনশা’ উদ্যোগ নিয়েছিল এমন এক সংবাদপত্র প্রকাশনার যা জাপানবাসীকে দেবে এক নতুন প্রাণের খোঁজ। আসলে, সংস্থাটি তাদের এক বিশেষ সংখ্যা মুদ্রণের সময় ব্যবহার করেছিলেন ‘plant-based-ink’ অর্থাৎ এমন একপ্রকার কালি যা উদ্ভিদকে দেবে তার প্রয়োজনীয় উপজীব্য এবং একইসঙ্গে তারা এই সংখ্যায় খবরের সঙ্গে বুনে দিয়েছিলেন পোস্ত কিংবা গোলাপ, ডেইজি’র মতো ফুলগাছের বীজ। এবার প্রশ্ন হল, এই সংবাদপত্রের উপভোক্তাদের করণীয় ঠিক কী? এক্ষেত্রে জাপানবাসীর কাজ ছিল, প্রথমে সংবাদপত্রটি পড়া, তারপর সেটিকে ছিঁড়ে ফেলা; এরপর বাড়ির কোন এক সুন্দর কোণে টবের মধ্যে মাটি নিয়ে কাগজের টুকরোগুলোকে সযত্নে পুঁতে দেওয়া। এরপর শুধু মাঝে মাঝে জল দেওয়া আর কিছুদিনের অপেক্ষা, তারপর ছোট্ট ছোট্ট পুষ্পচারার সৌন্দর্য উপভোগ।
শুনতে খুব সহজ এবং মজাদার মনে হলেও এর পিছনে ছিল উদ্যোক্তাদের এক গূঢ় উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পটি জাপানের পরিবেশে সবুজের পরিমাণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জাপানের বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পরিবেশ-বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এই প্রকল্পের সাহায্য নেওয়া হয় এবং একইসঙ্গে তাদের কাছে এই প্রকল্পটি হয়ে ওঠে পুনর্ব্যবহারের এক সফল উদাহরণ।
এই বিশেষ পরিবেশ-বান্ধব পত্রিকাটি যে শুধুমাত্র পরিবেশ সচেতনতাই বাড়িয়েছিল তা নয়, উদ্যোক্তাদের এনে দিয়েছিল চূড়ান্ত আর্থিক সাফল্য। এক-একদিনে মুদ্রিত প্রায় ৪০ লক্ষ সংবাদপত্র উদ্যোক্তাদের উপহার দিয়েছিল প্রায় ৮০ মিলিয়ন ইয়েন, যা ভারতীয় মুদ্রায় সেইসময় প্রায় ৫ কোটি টাকার সমান। ‘দ্য মাইনিচি শিম্বুনশা’র এই বিপুল জনপ্রিয়তার কান্ডারী ছিল সে দেশের অন্যতম নামজাদা একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা – ডেন্সু। সংস্থাটি এর পূর্বেও বিজ্ঞাপনী প্রচারের মাধ্যমে জাপানের বিভিন্ন তৃষ্ণার্ত এলাকায় জল পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে জাপানের সামগ্রিক স্বাস্থ্যোন্নয়নে প্রভূত সহযোগিতা করেছিল।
কখনও জাপানে যাবার সুযোগ হলে এই সংবাদপত্রের কপি সংগ্রহ করে আনতে ভুলবেন না যেন।
** তথ্যসূত্র – ইন্টারনেট