লালনগীতি সমগ্র
বই : লালনগীতি সমগ্র প্রকাশক : বিন্দুবিসর্গ পাবলিশার্স প্রচ্ছদ : প্রতীক সেনগুপ্ত অলংকরণ ও অক্ষরবিন্যাস : অভিষেক চ্যাটার্জী প্রকাশ : সেপ্টেম্বর, ২০২০ মূল্য : ৪৫০ টাকা
লালন ফকিরের এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত সমস্ত গানের কোনও পূর্ণাঙ্গ সংকলন ইতিপূর্বে এপার বাংলায় ছিল না। সে অভাব পূরণ করতে এগিয়ে এসেছেন একেবারে নতুন এক প্রকাশনা সংস্থা বিন্দুবিসর্গ পাবলিশার্স। লালনের নামে প্রচলিত মোট ৮৫১ টি গানকে দুই মলাটবন্দি করে প্রকাশ করেছেন তাঁরা। লালন-অনুরাগীদের জন্য এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে বিরাট সুখবর। তিনটি গান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যে সেগুলি লালনের সৃষ্টি নাকি পাঞ্জু শাহের। সে বিতর্কের উল্লেখ করেই গানগুলি সংকলনভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : বইয়ের পোশাক / শৌভিক মুখোপাধ্যায়
রয়াল সাইজের সুদৃশ বই। পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৫২। ছাপা ও পৃষ্ঠার মান ভালো। প্রতীক সেনগুপ্তের প্রচ্ছদ ও ক্যালিগ্রাফি নজরকাড়া। বইয়ের ভিতরের অলংকরণ তুলনায় একটু অবহেলিত মনে হল। সম্পাদনার দায়িত্ব, অনুমান করা যায়, প্রকাশনা-সংস্থার দুই কর্ণধারই পালন করেছেন। এতগুলি গান একত্র করাই একটা বিপুল কর্মকাণ্ডের ব্যাপার। তার প্রুফ পরীক্ষা তো আরও দুঃসাধ্য। ওপার বাংলায় ‘গতিধারা’ পাবলিকেশন থেকে ২০০৪ সালে প্রকাশিত ওয়াকিল আহমেদের ‘লালনগীতি সমগ্র’ প্রথম এক খণ্ডে লালনের সমস্ত সৃষ্টিকে মলাটবন্দী করার চেষ্টা করেছে। বিন্দুবিসর্গ সেই মডেলই অনুসরণ করেছে। সাধারণ সঙ্গীতানুরাগী পাঠককে লক্ষ করেই এই সংকলন। মূল্য যাতে সাধারণের মোটামুটি আয়ত্তে থাকে, সে চেষ্টাতেই বোধ করি একাধিক খণ্ডের কথা ভাবা হয়নি কিংবা অন্যান্য মেদ পরিত্যাগ করা হয়েছে। একাধিক খণ্ডের পরিকল্পনা থাকলে টীকা-টিপ্পনী, পাঠান্তর ইত্যাদি যোগ করার কথাও নিশ্চয়ই ভাবার অবকাশ থাকত। অবশ্য ২০০৮ সালে ঢাকার ‘পাঠক সমাবেশ’ থেকে আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায় যে ‘লালনসমগ্র’ প্রকাশিত হয়েছে, তারও একটিমাত্র খণ্ড। তাতে গান ছাড়াও প্রাসঙ্গিক নানা আলোচনা, লালনগীতির অনুবাদ, দুষ্প্রাপ্য কিছু ছবি ইত্যাদিও রয়েছে, ফলে আকারে অনেকটাই পৃথুল। দামও অনেক বেশি। তবে তা সমস্ত দিক থেকে লালন-উৎসাহীদের আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করে। বলা যায়, লালন-চর্চার জন্য একেবারে পরিপূর্ণ একটি ‘গাইডবুক’ তৈরি করেছেন জনাব চৌধুরী। ততটা কলেবর (এবং দাম) না বাড়িয়েও পরবর্তী সংস্করণের জন্য প্রকাশনা-কর্তৃপক্ষ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে পারেন। যেমন, গানগুলির বর্ণানুক্রমিক সূচির পাশাপাশি সম্পূর্ণ সূচি পেলে পাঠকদের সুবিধা হয়। আর অবশ্যই প্রয়োজন একটি দীর্ঘতর ভূমিকা এবং একটি গ্রন্থপঞ্জি। সঙ্গে আরও কিছু ছবি যোগ করা গেলে খুবই ভালো। তাতে বইয়ের কলেবর বাড়বে, কিন্তু গবেষকদের কাছে বইটি আরও মূল্য পাবে। বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলভাবে তা পূরণ করেছেন বিন্দু বিসর্গ পাবলিশার্স। তাই ভরসা করে তাঁদের ঘাড়ে আরও কিছু প্রত্যাশা চাপিয়ে দেওয়াই যায়।