ভ্রমণ

জুকু ভ্যালি : যেখানে মেঘ গাভীর মতো চরে'

দীপেন্দু ঘোষ Mar 5, 2023 at 11:07 am ভ্রমণ

বৃষ্টি বারো মাস পড়ে না ঠিকই, তবে সারাবছরই এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় নির্ঘাত জুকু ভ্যালির কথাই লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতায়।

মণিপুর আর নাগাল্যান্ডের বর্ডারে এই উপত্যকা। প্রকৃতির বুকে ট্রেক করতে ভালোবাসে যারা তাদের জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা। পাহাড় কিন্তু এখানে গুরুগম্ভীর, বরফ ঢাকা শ্বেতশুভ্র না একেবারেই, বরং সবুজ গালিচায় মোড়া। সঙ্গে রয়েছে রংবেরংয়ের চোখজুড়ানো ফুলের মেলা। সারাবছর যাওয়া যায়, তবে সেরা সময় মে-জুন, নাহলে আরও কিছুটা সময় বাদ দিয়ে অক্টোবর। অনেকে অবশ্য বর্ষায় জুকু ভ্যালির আনন্দ নিতে চান। সেক্ষেত্রে রেইনকোট, ছাতা ইত্যাদি নিয়ে যথেষ্ট প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। পথ চলতে হবে যথেষ্ট সাবধানে। কারণ জুকু ভ্যালির আসল ট্রেকিংটা বেশ সরু একটা রাস্তা দিয়ে। আমরা অক্টোবরে গেছিলাম। ঠাণ্ডা খুব, কিন্তু বর্ষার ওই ঝুঁকিটা ছিল না। 

কীভাবে গেলাম বলি। হাওড়া থেকে ট্রেনে দিমাপুর নেমে সেখান থেকে গাড়িতে কিগুয়েমা। সেখান থেকে ৯ কিলোমিটার গেলেই ভিস্বামা। সেখান থেকেই এই উপত্যকা শুরু। গাড়ির ভাড়া বেশ চড়া মনে হল। শুনলাম কোভিডের পর নাকি রেট বেড়ে গেছে। জোখামা থেকেও জুকু ভ্যালি যাবার একটা পথ আছে, তবে আমরা গেছিলাম ভিস্বামা রুট ধরে। ভিস্বামার এন্ট্রি পয়েন্টে প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢুকলাম। ক্যামেরার জন্য আলাদা মূল্য দিতে হল। আর সঙ্গে নিতে হল গাইড। আমাদের গাইডটি ভালোই জুটেছিল। হাসি মুখ। নম্র ব্যবহার। 

আমি সে-অর্থে ট্রেক এর আগে করিনি। ভ্রমণ জিনিসটা সেভাবে শুরু করেছি বন্ধুদের পাল্লায় পড়েই। নাহলে সাতাশ-আঠাশ বছর বয়েস অবধি আমার দৌড় ছিল ওই দী-পু-দা অবধিই। আমার বন্ধুরা অবশ্য ট্রেকের ব্যাপারে এক-একজন 'প্রো'। যারা ট্রেকে অভ্যস্থ নন, তাদের জন্য আমি তো বলব অন্তত চল্লিশের আগে এইসব জায়গা দেখে নেওয়া ভালো। নাহলে পাহাড়ি পথে উঠতে গেলে অনেকবার হাঁফ ধরবে, জিরিয়ে নিতে হবে বারবার। সে যাই হোক, কষ্টের শেষে যে মোহময় দৃশ্য আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে তা দেখে কষ্ট কোথায় উধাও হয়ে যাবে। শুরুর দু-তিন কিলোমিটার অবিশ্যি মনে হচ্ছিল, কেন এলাম। তারপর রাস্তার দু-ধারের মনোরম দৃশ্য  আস্তে আস্তে মনটা পাল্টে দিচ্ছিল আমার। বাকি তিনজনের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছিলাম। গাইড মাঝেমাঝেই পিছিয়ে এসে আমাকে সাহায্য করছিলেন। আমিই সবচেয়ে আনাড়ি এটা বুঝে নিতে তাঁর বেশি সময় লাগেনি। রাস্তায় এক জায়গায় দেখলাম লেখা আছে - "The best view comes after the hardest climb"। দেখেই কেমন চেগে গেলাম। মনে পড়ে গেল তিব্বতে টিনটিন কমিক্সে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের সেই গান - "কম্প সিয়ে কাঁপিস কেন লম্ফ দিয়ে চল রে সবাই লম্ফ দিয়ে চল"। গন্তব্যে পৌঁছে সত্যিই যে ছবি দেখলাম, তা ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে কঠিন। আমি ভালো লিখতে পারি না, ফলে বর্ণনা দেবার দুঃসাহস দেখাচ্ছি না। একটা কথাই বলব শুধু। এরকম দৃশ্য উইন্ডোজের ডিফল্ট ছবিগুলোয় দেখা যায়। পা ব্যথা করছিল, বড় বড় শ্বাস নিচ্ছিলাম। কিন্তু বুক ভরে ছিল মেদুর একটা অনুভূতিতে। পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে এরকম অনুভূতি কমই হয়েছে। 

জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে জুকু ভ্যালি অসাধারণ। সেরা আকর্ষণ অবশ্যই জুকু লিলি। লাল রঙের অদ্ভুত সুন্দর ফুল। দুর্গম জায়গা, ফলে খাবারদাবারের দাম অনেক বেশি। আর পাওয়াও যায় হাতে গোনা কয়েক ধরনের খাবার। কিছু করার নেই। রয়েছে জুকু ভ্যালি গেস্ট হাউজ। তাঁবু আর ডরমিটরির ব্যবস্থা আছে। বন্ধুরা গেলে তাঁবু নিলে ভালো হবে। কিন্তু আমি বলব পরিবার নিয়ে গেলে কটেজ ভাড়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আরও একটা কথা, সভ্য জগতের কোনও পিছুটান রাখবেন না। রেখে লাভও নেই। কারণ মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাবেন না। আধুনিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দু-তিনটে দিন কাটাতে ভালোই লাগবে। আমার বন্ধুরা দেদার ছবি তুলেছে। আমি ইচ্ছে করেই সেভাবে ছবি তুলিনি। ছবি তো গুগল ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। দুটো চোখ ভরে শুধু দেখে এলাম প্রকৃতির অকৃপণ দাক্ষিণ্য। 

..................... 

#dzüko valley #tour #ভ্রমণ #silly পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

23

Unique Visitors

215792