জগদীশচন্দ্র ও সমকালীন বঙ্গসমাজ (দ্বিতীয় পর্ব)
পর্ব ২ : উপেন্দ্রকিশোর ও হেমেন্দ্রমোহনের ফটোগ্রাফি চর্চা
.....................
জগদীশচন্দ্র বসুর পরিবার আর উপেন্দ্রকিশোরের পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বড় যোগসূত্র হলেন হেমেন্দ্রমোহন বসু (১৮৬৪ – ১৯১৬)। যিনি ওপার বাংলার ময়মনসিংহের জয়সিদ্ধি গ্রামের বসু-পরিবারের একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। এই স্বচ্ছল পরিবারে বিশিষ্টজনের অভাব ছিল না মোটেই। পরিবারের মাথা পদ্মলোচন বসু ছিলেন ওই ময়মনসিংহের দেওয়ানী আদালতের কর্মী। পদ্মলোচনের তিন ছেলে— হরমোহন, আনন্দমোহন আর মোহিনীমোহন। এই আনন্দমোহন আর মোহিনীমোহনকে আমরা চিনি, এঁরা জগদীশচন্দ্রের দুই জামাইবাবু, যথাক্রমে স্বর্ণপ্রভা আর সুবর্ণপ্রভা বসুর স্বামী। অন্যদিকে হরমোহনের চার ছেলে— হেমেন্দ্রমোহন, যতীন্দ্রমোহন, সুরেন্দ্রমোহন আর সত্যেন্দ্রমোহন। এঁদের মধ্যে হেমেন্দ্রমোহনের দিকে আমরা এই পর্বে চোখ রাখব, কারণ ইনি নানা কারণেই উনিশ-বিশ শতকের কর্মবীর বাঙালিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ।
হেমেন্দ্রমোহন ছিলেন বহুবিদ্যাবিশারদ, সেই সঙ্গে কুশলী একজন ব্যবসায়ীও। তাঁরই ব্যবসায়িক দ্রব্য সুগন্ধি কুন্তলীন তেলের প্রচারের জন্য একসময় তিনি এক বিশেষ পুরস্কারের প্রচলন করেন, সেই ‘কুন্তলীন’ পুরস্কার প্রথম পেয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র, ১৮৯৬ সালে তাঁর একমাত্র সায়েন্স-ফিকশন ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’-র জন্য। পরে যদিও এই গল্পটি তাঁর ‘অব্যক্ত’ বইয়ে ‘পলাতল তুফান’ নামে ছাপা হয়। হেমেন্দ্রমোহনের আরও বহুবিধ কীর্তির কথা আমরা এই ধারাবাহিকের একাধিক জায়গায় পরে বলব।
হেমেন্দ্রমোহনের মতো কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের ওই তেরো নম্বর বাড়িতে থাকাকালীন একই শখ নিয়ে মেতে থাকতেন উপেন্দ্রকিশোর, সেটা হল ফটোগ্রাফি। তাঁর নিজস্ব ডার্করুমও ছিল। সেখানে নিজের ক্যামেরায় তোলা ছবিকে প্রসেস করা হত। তবে ফটোগ্রাফির চেয়েও পরে তিনি ছবি আঁকা আর ছাপাখানার কাজে, আর সেই সঙ্গে লেখালিখিতেও বেশি সময় আর মনোযোগ দিতে শুরু করেন।
শিশু সাহিত্যিক ও চিত্রকর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সবচেয়ে ছোট বোন মৃণালিনীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এই হেমেন্দ্রমোহনের। তাঁদের এক সন্তান মালতী ঘোষাল ছিলেন বিখ্যাত গায়িকা।
উপেন্দ্রকিশোরের ছোট বোন মৃণালিনীকে হেমেন্দ্রমোহন বিয়ে করবার সুবাদে এক হিসেবে পরোক্ষে সত্যজিৎ রায়ের দাদুর মামা হলেন জগদীশচন্দ্র। হেমেন্দ্রমোহন পড়াশুনোয় ছিলেন বেশ চৌখস। কলকাতার কলেজ থেকে বিএ পাশ করবার আগেই সে পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে তিনি ভর্তি হন মেডিক্যাল কলেজে। মূলত মামা জগদীশচন্দ্রের উৎসাহেই ইনি ভর্তি হন ডাক্তারি পড়তে। কিন্তু ভাগ্যের দুর্বিপাকে এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটা চোখ যায় নষ্ট হয়ে, ফলে তাঁর ডাক্তারি পড়ার সেখানেই সমাপ্তি। পরে তিনি এইচ বোস নামে খ্যাতি অর্জন করেন, এবং নানাবিধ ব্যবসা করে নিজের এবং পরিবারের যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তবে ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন হলেও তাঁর নিজস্ব শখ বা খেয়াল চরিতার্থতায় কখনও ঢিলেমি দেননি তিনি। এরই মধ্যে ছিল ফটোগ্রাফিচর্চাও। ক্যামেরায় ছবি তোলার এই শখ তিনি পেয়েছিলেন তাঁর মামা জগদীশচন্দ্রের কাছ থেকে।
উনিশ শতকের ওই শেষ পদে কলকাতায় ফটোগ্রাফিচর্চার এক জোয়ার আসে। এই প্রসঙ্গটা অনেক বেশি বিস্তারিতভাবে আছে সিদ্ধার্থ ঘোষের ‘ছবি তোলা বাঙালির ফটোগ্রাফি চর্চা’ বইয়ে। সে আমলে কলকাতায় যাঁরা ফটোগ্রাফি নিয়ে বেশ গুছিয়ে চর্চা করতেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই নাম করা দরকার জগদীশচন্দ্রেরও। অধ্যাপনার অবসরে জগদীশচন্দ্র মেতে থাকতেন নানারকম শখ নিয়ে। এর মধ্যে একটি ছিল ফটোগ্রাফি চর্চা। আচার্য ভবনে রক্ষিত আছে তাঁর তোলা কয়েকটি অসাধারণ নিসর্গদৃশ্যের ফটোগ্রাফ। যখনই কোথাও তিনি বেড়াতে যেতেন, সঙ্গে থাকত ক্যামেরা। প্রথম বৈজ্ঞানিক সফরে বিলেতে থাকাকালীন রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটিতে তিনি বক্তৃতাও দিয়েছিলেন।
ফটোগ্রাফিচর্চার পাশাপাশি জগদীশচন্দ্রের হবি ছিল আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে। তারই একটি, বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিভিন্নরকমের কাজ করে দেখানো। বিশেষ করে বঙ্গমহিলা সমাজের দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ডাক্তার মোহিনীমোহন বসুর বাড়িতে যে বিশেষ অধিবেশন বসে সেখানে ‘প্রায় ১০০ মহিলা তাঁহাদের স্বামী ও আত্মীয়গণ সহ উপস্থিত ছিলেন। বাটীটী বেশ সুন্দররূপে সজ্জিত হইয়াছিল। একটী গৃহ বৈদ্যুতিক আলোকে দীপ্তি পাইয়াছিল, অধ্যাপক জগদীশচন্দ্র বসু বিদ্যুৎ বা তাড়িৎ শক্তি দ্বারা কাপড় সেলাই ও অন্যান্য কতকগুলি প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন। তাহার মধ্যে একটী বড় আশ্চর্য্য। এক যন্ত্রের অপরদিকে হাত রাখিয়া বিদ্যুতালোকে দেখিলে হাত দেখা যায় না, হাত বাতাসের মত নিরাকার ও স্বচ্ছ হইয়া যায় এবং তাহার ভিতর দিয়া অপর দিকের বস্তু সকল দেখা যায়।’ (* ১৮৮৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল খবরটা)
এখানে যে অদৃশ্য রশ্মির কথা বলা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে কোনো এক অদৃশ্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। আর জগদীশচন্দ্র যে অধ্যাপনাকালের প্রায় সূচনা থেকেই এই ধরনের তরঙ্গ নিয়ে শখের গবেষণা করে যাচ্ছিলেন তা এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়।
তবে এই রশ্মি এক্স রশ্মি নয়, সে জিনিস আবিষ্কার হতে আরও সাত বছর বাকি তখনও।
১৮৯৫ সালের ৮ নভেম্বর। জার্মানির এক কাপড় ব্যবসায়ীর ছেলে এবং স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার লেকচারার উইলহেল্ম রয়েন্টগেন নিতান্ত আকস্মিকভাবে আবিষ্কার করে ফেললেন এক অদৃশ্য রশ্মির, যা ভেদ করতে পারে মানুষের দেহের ত্বককে, কিন্তু পারে না হাড় ভেদ করতে। ফটোগ্রাফির নেশাই তাঁকে বলতে গেলে দৈববশেই এই বিরাট মাপের আবিষ্কারের মুখোমুখি স্থাপন করে ফেলে। স্ত্রী অ্যানা বার্থার আংটি-পরা আঙুলের ছবি এই আবিষ্কারের পর জগৎবিখ্যাত হয়ে যায় এবং এই আবিষ্কারই রয়েন্টগেনকে এনে দেয় পদার্থবিদ্যার প্রথম নোবেল পুরস্কার। এক্স রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে এরপরে কী ধরনের সব অসাধ্যসাধন করা গিয়েছে, তা সকলেই জানেন।
কলকাতার বুকে এক্স রশ্মি প্রথম কে তৈরি করেছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বড় সহজ নয়। সিদ্ধার্থ ঘোষের মতে, ‘১৮৯৭-এ প্রদ্যোৎ কুমার ঠাকুর ও অধ্যাপক ফাদার লাফোঁ ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল এলগিনের হাটের একটি এক্স-রে চিত্র গ্রহণ করেন। ‘শ্যাডোগ্রাফ’ অভিহিত ছবিটি ফোটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার বার্ষিক প্রদর্শনীতে ফোটো-মেকানিকাল প্রসেস বিভাগে স্বর্ণপদক লাভ করে। সোসাইটির জার্নালেও তার প্রতিচ্ছবি ছাপা হয়।’ (* কলের শহর কলকাতা, ১১৯ পাতা)
কলকাতার বুকে উনিশ শতকের শেষ দিকে, অর্থাৎ ফটোগ্রাফিবিদ্যার আদিযুগে যাঁরা এই বিদ্যাটিকে ভালোবেসে চর্চা শুরু করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে যেমন আছেন ত্রিপুরার মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য, তেমনই আছেন ঠাকুরবাড়ির প্রদ্যোৎকুমার ঠাকুর বা আর্যকুমার চৌধুরীও। প্রদ্যোৎকুমার রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসেবে মনোনীতও হয়েছিলেন।
এক্স রশ্মি তৈরি করতে পেরেছিলেন জগদীশচন্দ্রও। এবং সেটা করেছিলেন কলকাতায় এই রশ্মি তৈরির যন্ত্র আসবার আগেই। এ ব্যাপারে আষাঢ় ১৩৪২ তারিখের ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত যোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমার দেখা লোক’ প্রবন্ধে একটি সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়: ‘আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন সত্যেন্দ্রবাবু [সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর] পেন্সন লইয়া বালীগঞ্জে বাস করিতেছিলেন, বিজ্ঞানাচার্য্য শ্রীযুক্ত জগদীশ বসু মহাশয় তখন প্রেসিডেন্সী কলেজে বিজ্ঞানের অধ্যাপক। আমাদের বন্ধু শ্রীরামপুর নিবাসী শ্রীযুক্ত জগদিন্দু রায় অধ্যাপক বসুর ল্যাবেরেটারি এসিষ্টান্ট ছিলেন। প্রাতে কলিকাতা আসিবার সময় আমরা জগদিন্দুবাবুর সহিত একই ট্রেনে আসিতাম। এক দিন জগদিন্দুবাবু বলিলেন, “আমাদের কলেজে এক্স-রে বা অদৃশ্য আলোক যন্ত্র নির্ম্মিত হইয়াছে। আজ বেলা ৩ টার সময় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর উহা দেখিতে আসিবেন; যদি আপনারা তিনটার সময় যাইতে পারেন, তবে আপনাদিগকেও দেখাইব।” তিনটার সময় একজন বন্ধুর সহিত প্রেসিডেন্সী কলেজে গিয়া জগদিন্দুবাবুর নিকট শুনিলাম যে, পার্শ্বের কক্ষে সত্যেন্দ্রবাবু ও ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জ্জি নামক তাঁহার এক আই-এম-এস [Indian Medical Service] বন্ধু আসিয়াছেন; ডাক্তার বসু তাঁহাদিগকে অদৃশ্য আলোক দেখাইতেছেন, তাঁহারা চলিয়া গেলেই তিনি আমাদিগকে লইয়া যাইবেন। আমি জগদিন্দুবাবুকে বলিলাম যে, বাল্যকালে যখন স্কুলে পড়িতাম তখন, জিমন্যাষ্টিক করিবার সময় পড়িয়া গিয়া হাত ভাঙ্গিয়া ছিলাম, সেই স্থানটার হাড় এখনও একটু বাঁকা আছে, আমি সেই হাড়টা অদৃশ্য আলোকে দেখিব। এই কথা শুনিয়া জগদিন্দুবাবু পার্শ্বের কক্ষে গমন করিলেন এবং তখনই ফিরিয়া আসিয়া আমাকে বলিলেন, “আমি ডাক্তারকে আপনার ভাঙ্গা হাতের কথা বলাতে তিনি আপনাকে লইয়া যাইতে বলিলেন।” আমি ও আমার বন্ধু জগদিন্দুবাবুর সঙ্গে সেই কক্ষে গমন করিলে অধ্যাপক বসু, ডাক্তার চ্যাটার্জ্জি এবং সত্যেন্দ্রবাবু তিন জনেই বিশেষ আগ্রহ সহকারে আমার হাতের ভগ্ন অস্থি দেখিলেন। সত্যেন্দ্রবাবু ইংরেজীতে তাঁহার বন্ধুকে বলিলেন, “কলিকাতায় এক্সরে সাহায্যে ভগ্ন অস্থি দর্শন বোধ হয় এই প্রথম। ডাক্তার চ্যাটার্জ্জি হাসিয়া বলিলেন, “আমার অভিজ্ঞতাতে প্রথম বটে।” তখন কলিকাতায় আর কোথাও এক্সরে যন্ত্র আসে নাই। প্রেসিডেন্সী কলেজের সেই যন্ত্র ডাক্তার বসুর নির্দ্দেশক্রমে কলেজের গবেষণাগারে জগদিন্দুবাবু নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন।’ [প্রবাসী, আষাঢ় ১৩৪২, ৩৮০ পৃ] প্রসঙ্গত এখানে উল্লিখিত ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জীর পরিচয় জানা এখনও সম্ভব হয়নি।
ডঃ দেবেন্দ্রমোহন বসু ২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৮-এ ‘ইন্ডিয়ান রেডিওলজিক্যাল কংগ্রেস’-এ এক ভাষণে বলেন, ‘…He was, I believe, the first person in India to reproduce Rontgen’s discovery in 1895, of the generation of X-ray in a cathode ray tube. Reading a newspaper account… Bose, then … prepare Barium Platinocyanide Screens with which he took X-ray photographs of different objects, like a human hand, coins enclosed in a purse etc…’ (Science and Culture. Vol.14, P. 366-371, March 1949)
এখানে এটাও বলে রাখা দরকার, এ দেশে প্রথম যে ডাক্তার এক্স রশ্মির সাহায্যে ছবি তুলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রয়োগ করেন, তিনি নীলরতন সরকার।
এই রশ্মির সাহায্যে আরও বেশ কয়েক বছর জগদীশচন্দ্র নানারকম রোগের চিকিৎসায় নীলরতন সরকারকে সাহায্য করেছিলেন; রবীন্দ্রনাথকে লেখা তাঁর যে চিঠিগুলি পাওয়া যায় সেগুলির মধ্যে প্রথমটিতেই আছে এই প্রসঙ্গ: ‘আঁধারে আলোকে দেখিতে গিয়া আমার আলোকে আঁধার হইবার উপক্রম হইয়াছে। এ সম্বন্ধে দু একটি নূতন কথা দেখা হইলে বলিব।
আপনারা (লোকেন[* স্যার তারকনাথ পালিতের ছেলে লোকেন্দ্রনাথ] এবং সুরেন [* সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে সুরেন্দ্রনাথ]) আশা করি রবিবার দিন সকালে ৮.৯ টার সময় আসিবেন। এবার আপনার পালা। সেই ফরম লইয়া আসিবেন। আর আপনাকে মধ্যস্থ থাকিতে হইবে, কারণ জজ সাহেবের সহিত আমার অনৈক্য হইতে পারে, আর সরাসরি বিচারে বিপদ আশঙ্কা করি।
যদি পারেন তাহা হইলে সকালে ৮টার সময় প্রেসিডেন্সী কালেজ হইয়া আসিবেন। রঞ্জেন কলে একজন রোগী দেখিতে হইবে— তাহার পৃষ্ঠভঙ্গ হইয়াছে। আপনি বলিতে পারেন এ রোগ সাংঘাতিক নয়; কারণ এ দেশে মেলেরিয়ার ন্যায় ইহা একপ্রকার সার্ব্বজনিক হইয়াছে। আমিও এ কথা বলিয়াছিলাম, কিন্তু ডাক্তার নীলরতন সরকারের কথা এড়াইতে পারিলাম না।’ (মনফকিরা-র চিঠিপত্রের কালানুক্রমিক সংকলন, ৯ পাতা)। এই চিঠি ১৮৯৯-এর ফেব্রুয়ারিতে লেখা বলে অনুমান করেছেন দিবাকর সেন।
এদেশে প্রথম কে এই রশ্মি তৈরি করেছিলেন, জগদীশচন্দ্র নাকি মহেন্দ্রলাল সরকার, তা এখুনি বলা সম্ভব না হলেও এই রশ্মির সাহায্যে চিকিৎসার কাজে পুলিশ বিভাগই তৈরি, এটা ভেবে মন খুশি হচ্ছে। বেতার বার্তা প্রেরণে মূলত লাগে বেতার তরঙ্গ, যেটার নির্মাণ এবং দূরবর্তী স্থানে প্রেরণের পরীক্ষা জগদীশচন্দ্রই করে দিতে হবে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের জমানো সব টাকা তুলে নিয়ে, এবং বেশ কিছু জায়গা থেকে সাহায্য নিয়ে জগদীশচন্দ্র বানিয়ে ফেললেন বসু বিজ্ঞান মন্দির। যেখানে চর্চা হবে আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা। যদিও একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
[চলবে]
..................