জগদীশচন্দ্র ও সমকালীন বঙ্গসমাজ (তৃতীয় পর্ব)
পর্ব ৩ : হেমেন্দ্রমোহন ও কুন্তলীন প্রসঙ্গ
...............
৫২ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিটের বহু পুরনো এক পেল্লায় বাড়ির বারান্দায় আজও খোঁজ করলে দেখা মেলে অনেককাল আগেকার কিছু পাথরের তৈরি বোতলের, গায়ে লেখা 'ফ্রেঞ্চ ন্যাচরাল অয়েল'। একশো বছর আগে এই বোতলের মধ্যেকার ওই তেল থেকেই তৈরি হত তখনকার বাঙালির কাছে দারুণ আদরণীয় এক সুগন্ধী দ্রব্য 'কুন্তলীন তেল'।
সেই তেল তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে কবেই। এ বাড়ির মূল মালিকও পৃথিবীতে নেই আর, স্রেফ টিকে আছে ধূসর হয়ে আসা ইতিহাসের শুকনো কিছু তথ্য আর নথিপত্র। এক সময় বৌবাজারের কারখানায় এই তেল এবং আরও হাজারো সুগন্ধী দ্রব্য তৈরির যে ব্যবসা রমরম করে চলত, কালের স্রোতে ভেসে গিয়েছে সেই সোনালি অতীত, এখন নিতান্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে এরকমই কিছু সামান্য স্মৃতিচিহ্ন। আর এই যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকা আসল ব্যক্তিটিও একশো আট বছর আগে পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন।
হেমেন্দ্রমোহন বোস (১৮৬৪ - ১৯১৬), আগেই বলেছি রায় পরিবার আর বসু-পরিবারের মধ্যেকার সবচেয়ে উজ্জ্বল সংযোগ। আজকের দিনে ব্যবসাক্ষেত্রে বাঙালির উপস্থিতি প্রায় দেখাই যায় না, অথচ অতদিন আগে তাঁর মতো একজন মানুষ এতরকমের ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পেরেছিলেন, এবং প্রায় সবগুলোকেই সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন, এ বড় কম কৃতিত্বের কাজ নয়। তাঁর সে রাজ্যপাট তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে-সঙ্গেই মুছে গেলেও এই কৃতিত্বকে মোটেই অস্বীকার করা চলে না।
রায়-পরিবারের উজ্জ্বল ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে যে-সব বই সুলভ, সেগুলোয় হেমেন্দ্রমোহনেরও গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি চোখে পড়ে। যেমন নমুনা দেখি:
‘তিনি (হেমেন্দ্রমোহন বসু) ছিলেন স্বনামধন্য আনন্দমোহন বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র। বাঙালী ব্যবসায়ী ও উদ্যোগী পুরুষদের মধ্যে বিচিত্রকর্মা হেমেন্দ্রমোহন নিজের ক্ষেত্রে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। একদিকে বিদেশী প্রসাধনী জিনিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেন্ট, সাবান, সিরাপ, কেশতৈল, পানে খাবার মশলা ইত্যাদি তৈরির পাশাপাশি ফনোগ্রাফ, সাইকেল, মোটর গাড়ি, ফটোগ্রাফিক দ্রব্য ইত্যাদি নিয়ে নানা উদ্যোগ সেকালে সকলকে চমকিত করেছিল। কেশ-তৈল ‘কুন্তলীন’কে কেন্দ্র করে ‘কুন্তলীন গল্প-প্রতিযোগিতা’ চালু করা তাঁর আশ্চর্য উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও ব্যবসায়ী বুদ্ধির পরিচয় দেয়। সেকালে কুন্তলীনের বিজ্ঞাপনের এই ছড়াটি লোকের মুখে মুখে ফিরত:
কেশে মাখো কুন্তলীন, রুমালেতে দেলখোস।
পানে খাও তাম্বুলীন, ধন্য হোক এইচ বোস।।’
(হেমন্তকুমার আঢ্য-র লেখা ‘উপেন্দ্রকিশোর জীবনী, সাহিত্য অকাদেমি, ৫ পৃ।’)
আজকের দিনে হেমেন্দ্রমোহনের অন্য সব কৃতিত্বের কথা ম্লান হয়ে এলেও তাঁর খ্যাতির সিংহভাগ যেটুকু টিকে রয়েছে তা এই 'কুন্তলীন'-এর জন্যেই। তাঁর অন্য সমস্ত ব্যবসাই নানা সময়ে ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে, কোনোটা গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে, কিন্তু এই তেলের ব্যবসা তিনি চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন পঁচিশ বছরেরও বেশি।
এই ব্যবসার সূত্রপাত ১৮৯০ বা '৯১ সাল নাগাদ, তখন হেমেন্দ্রমোহনেরা থাকতেন কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের এক বাসায়। পুণ্যলতা চক্রবর্তী তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘ছোট পিসিমারা আমাদের কাছেই একটা বাড়িতে থাকতেন। —সে বাড়ির তিন-তলায় লম্বা একটি ঘরে পিসেমশাই হেমেন্দ্রমোহন বসু (এইচ বোস) তাঁর লেবরেটরি তৈরি করেছিলেন, সেখানে বসে তিনি নানারকম সুগন্ধী তৈরীর পরীক্ষা করতেন। ঘরটার দিকে গেলেই সুগন্ধ ভুরভুর করত। কত রকমের শিশি বোতল, রাশি রাশি ফুল, চোলাই করবার যন্ত্র, বড় বড় পাথরের খোল ও হামানদিস্তা; এককোণে একটা সোডা তৈরীর কল, সে রকম আমরা আগে কখনও দেখিনি। হাতল টিপলেই ভুরভুর করে নল দিয়ে সোডা ওয়াটার বেরোত, সিরাপ মিশিয়ে আমাদের খেতে দিতেন, রুমালে জামায় সুগন্ধ এসেন্স দিয়ে দিতেন।’ ছোট থেকেই রসায়ন বিষয়টায় তাঁর যে আগ্রহের পরিচয় আমরা পেয়েছিলাম, সেটারই যেন এক বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই ধরনের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে। (* সিদ্ধার্থ ঘোষ-এর লেখায় পাই: 'রসায়নবিদ্যা হেমেন্দ্রমোহনকে বাল্যকাল থেকেই আকর্ষণ করত। দেশের বাড়িতে থাকার সময়েই বালক বয়সে তিনি তাঁর প্রথম গবেষণাগার পেতেছিলেন সে-যুগের উচু পায়া-ওলা একটি পালঙ্কের নিচে। অবশ্য কাকা আনন্দমোহন ঘুমিয়ে পড়ার আগে কাজকর্ম শুরু করার উপায় ছিল না। এক দিন রাত তিনটের সময় তাঁর গবেষণা সত্যিই বেজায় তেতে ওঠে, কোনোক্রমে সেযাত্রা বৈশ্বানরের প্রকোপ থেকে অল্পের উপর রেহাই মিলেছিল।'। সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ-২, বুক ফার্ম)
পরে তিনি কারখানা বানিয়ে নেন ৬২ বৌবাজার স্ট্রিটে। এর কয়েক বছর পর তেলের পাশাপাশি আরও নানা ধরনের সুগন্ধী দ্রব্য। একটা তালিকা থেকে পাওয়া যায় কয়েকটার নাম— চামেলী, মোতিয়া, দেলখোস, হোয়াইট রোজ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে দেলখোস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল, তাই দেখি তিনি বৌবাজারের কারখানার যে বিক্রয়কেন্দ্র, তার নামকরণ করেন দেলখোস হাউস। দৈনিক পত্রপত্রিকায় বা সাময়িকপত্রে নিয়মিত প্রকাশিত হত এই পণ্যগুলোর রকমারি বিজ্ঞাপন। পরে শিবনারায়ণ দাস লেনেও এই কারখানার একটি শাখা খোলা হয়েছিল।
কুন্তলীন তেলের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও: 'কুন্তলীন তৈল আমরা দুই মাস কাল পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। আমার কোন আত্মীয়ের বহু দিন হইতে চুল উঠিয়া যাইতেছিল। কুন্তলীন ব্যবহার করিয়া এক মাসের মধ্যে তাহার নূতন কেশোদ্গম হইয়াছে। এই তৈল সুবাসিত, এবং ব্যবহার করিলে ইহার গন্ধ ক্রমে দুর্গন্ধে পরিণত হয় না'। তবে এই লেখার একেবারে শুরুর দিকে যে ছড়াটি উদ্ধৃত করা হয়েছিল, সেটার লেখক কে, জানা যায় না। আরও পরে আকাশবাণীতেও শোনা যায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা: ‘তেলে-জলে কখনও মেশে না, কিন্তু তবুও একথা মানতেই হয় যে অন্তত একটি তেল আমাদের সাহিত্যরূপ জলের সঙ্গে নিতান্ত নিগূঢ়ভাবেই মিশে আছে। সেটি কুন্তলীন।’
কুন্তলীন-এর পাশাপাশি প্রবল জনপ্রয়িতা পেয়েছিল তাঁর কোম্পানির অপরাজিতা সেন্ট, কোকোলীন সাবান, ক্যাস্টর ওয়েল, গোলাপ দন্তমঞ্জন, বা দেলখোস সুগন্ধীর মতো বহু দ্রব্যও। সে আমলে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে দেলখোস এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে হেমেন্দ্রমোহনের বউবাজারের বাড়ির নামই হয়ে গিয়েছিল ‘দেলখোস হাউস’।
২.
কুন্তলীন নামটা হেমেন্দ্রমোহনের নিশ্চয়ই খুব প্রিয় ছিল, নইলে তাঁর বাড়িতে যে পেল্লায় ছাপাখানা বানালেন, সেটার নাম কেন দেবেন কুন্তলীন প্রেস? সেই প্রেস থেকে ছাপা হত দারুণ সব বই (সহায়তায় ছিলেন অবশ্যই উপেন্দ্রকিশোর), আরও পরে তাঁর এই কুন্তলীন তেলের বিজ্ঞাপন হিসেবেই হেমেন্দ্রমোহন এক দারুণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিলেন ১৩০৩ বঙ্গাব্দে (১৮৯৬ সালের দিকে), চালু করলেন একটি পুরস্কার। সেটারও নাম দিলেন ওই তেলের নামেই। এমন গল্প চাওয়া হত যে গল্পে অবশ্যই যেন কুন্তলীন আর দেলখোস এই দুই প্রোডাক্টের উল্লেখ বুদ্ধি করে গুঁজে দেওয়া হয়, অথচ যেন তা পড়ে কোনোভাবে বিজ্ঞাপন বলে মনে না হয়। প্রতি বছর ওইরকম কয়েকটি মনোনীত গল্প একত্রিত করে বই আকারে ছাপিয়ে বিতরণ করা হত আর লেখকদের দেওয়া হত তাঁর কারখানায় উৎপন্ন দ্রব্য বা নগদ অর্থ। প্রথম বছরেই এই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন এক অনামী গল্পকার, গল্পের নাম ছিল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’; পরে জানা যায় যে গল্পকার হলেন তাঁরই মামা জগদীশচন্দ্র বসু। এই ঘটনাকে নেপোটিজম বলা চলে কি না অনেকের মনেই তা নিয়ে সন্দেহ জাগতে পারে, তবে আজ আমরা বলতে পারি যে সেদিন নেহাত ভুল করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কারণ গল্পটিকে অনেক সমালোচকই পরে উন্নত মানের বলে স্বীকার করেছেন। ১৯২০ সালে যখন জগদীশচন্দ্রের প্রথম গদ্যসংগ্রহ ‘অব্যক্ত’ প্রকাশিত হয়, তাতে এই গল্পটি স্থান পায় ‘পলাতক তুফান’ নামে।
রবীন্দ্রনাথও এই পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর ‘কর্মফল’ গল্পের জন্য। তিনশো টাকা নগদ অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছিল তাঁর। পেয়েছিলেন শরৎচন্দ্রও, তাঁর 'মন্দির' নামের প্রথম প্রকাশিত গল্পের জন্য। প্রতি বছর সব মিলিয়ে দশজনকে দেওয়া হত পুরস্কার, প্রথম পুরস্কার ছিল ১০০ টাকা, দ্বিতীয় ২৫, এরপর ২০, ১৫, ১০ এবং তার পর থেকে বাকিদের ৫ টাকা করে। রবীন্দ্রনাথকে অত বেশি দেওয়া হয়েছিল নিশ্চয়ই তাঁর খ্যাতির কারণেই।
হেমেন্দ্রমোহনের অন্যান্য ব্যবসাপত্র
গ্রামোফোন, তার উপযুক্ত ডিস্ক, সাইকেল বা তেলের ব্যবসা পেরিয়ে এসে হেমেন্দ্রমোহন নতুন শতাব্দীর একেবারের শুরুর বছরেই শুরু করলেন মোটরগাড়ির ব্যবসা। তিনি নিজে শতাব্দীর প্রথম বছরেই কিনেছিলেন এক সিলিন্ডারবিশিষ্ট ড্যারাক গাড়ি, সেই গাড়ি চালিয়ে তিনি চষে বেড়াতেন কলকাতা শহরে। প্রসঙ্গ, মোটর গাড়ির আদিযুগে, মানে শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে কলকাতা শহরে হাতে গোনা কয়েকজনের কাছেই ছিল গাড়ি। তাঁদের অন্যতম হেমেন্দ্রমোহন, আর ছিল নীলরতন সরকার এবং স্যার সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর।
হেমেন্দ্রমোহন যখন মোটর গাড়ির ব্যবসা শুরু করলেন, তখন এ দেশে দেশীয় কোনো কোম্পানি গড়েই ওঠেনি। তিনি তাই এই ব্যবসার প্রবল সম্ভাবনা টের পেয়ে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে গড়ে তোলেন গাড়ি বিক্রির এবং সারাই করবার দোকান, নাম ‘দি গ্রেট ইস্টার্ন মোটর ওয়ার্কস’। এই দোকান তৈরির সাল-তারিখ না জানা গেলেও মোটামুটি ১৯১১ সালের মধ্যে এই ব্যবসা যে বেশ জমে উঠেছিল বিজ্ঞাপনে তার প্রমাণ রয়েছে। এই কোম্পানি পরিচালনার জন্য হেমেন্দ্রমোহন এক ডিরেক্টর বোর্ড তৈরি করেন, যেখানে সদস্য হিসেবে ছিলেন সুরেশপ্রসাদ, নীলরতন সরকার, কাশিমবাজারের মহারাজা, প্রসিদ্ধ ডাক্তার কেদারনাথ দাস, এবং অবশ্যই জগদীশচন্দ্র বসু। এঁদের মধ্যে নীলরতন সরকারের গাড়ির শখ ছিল প্রচণ্ড, সিদ্ধার্থ ঘোষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯২৫ সালের দিকে তাঁর নামে নথিভুক্ত গাড়ির সংখ্যা ছিল এগারোটি! বাঙালি এই ডাক্তারের সে আমলে কীরকম পসার ছিল, এই তথ্যেই তার আন্দাজ মিলবে নিশ্চয়ই।
মোটরের দোকান এবং কারখানা দেখভাল করবার জন্য দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে হেমেন্দ্রমোহন বেছে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড থেকে পাশ করে আসা জনৈক প্রিস্টন নামে এক সাহেবকে।
তাঁর এই কোম্পানি থেকে প্রথম গাড়ি কেনেন চিকিৎসক সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী। তিনি কিনেছিলেন ফ্রান্স থেকে তৈরি হয়ে আসা ‘ড্যারাক’ নামে এক মডেলের গাড়ি। পরে এখান থেকে গাড়ি কেনেন আরও বহু বিশিষ্ট মানুষেরা।
তবে তাঁর এ ব্যবসাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, ১৯১৪-১৫ সাল নাগাদ বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে না পেরে মোটর গাড়ির ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন হেমেন্দ্রমোহন। আর ওই যুদ্ধের মধ্যেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে ১৯১৬ সালের ২৮ আগস্ট, মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে। দাঁতের ছোপ তুলতে মৃত্যুর মাত্র দু-দিন আগে তিনি বিদেশি পদ্ধতিতে দাঁতে স্ক্রেপ করিয়েছিলেন, কিন্তু সেই স্ক্রেপ থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করে, সেই সঙ্গে আসে প্রবল জ্বর এবং অসহ্য যন্ত্রণা। বহু চিকিৎসাতেও কোনও ফল হয়নি।
হেমেন্দ্রমোহনের ছেলেমেয়েরা প্রায় প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশিষ্ট স্থান দখল করেছিলেন। বড় ছেলে হিতেন্দ্রমোহন বাবার মৃত্যুর পর বাড়ির কর্তা হয়ে পরিবারকে আগলে রেখেছিলেন বহু বছর। দ্বিতীয় ছেলে জিতেন্দ্রমোহন অনেকদিন বাবার ব্যবসার দিকটা সামলেছিলেন। আর এক ছেলে নীতিন বসু সিনেমা পরিচালনায় নেমেছিলেন। পরের ছেলে মণীন্দ্রমোহন আরও বেশি পরিচিত মুকুল বোস নামে। ইনি ছিলেন সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। তাঁর উদ্যোগেই হিন্দি সিনেমায় প্রথম প্লে-ব্যাক চালু হয়েছিল। সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘যখন ছোট ছিলাম’-এ লিখেছেন যে জগদীশচন্দ্র বসুর সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতিগুলো খারাপ হয়ে গেলে কলকাতা শহরে একমাত্র ইনিই সেগুলো সারিয়ে দিতে পারতেন।
আরও চার ছেলে গণেশ, কার্তিক, বাপি আর বাবু-র আসল নাম যথাক্রমে হীরেন্দ্রমোহন, নৃপেন্দ্রমোহন, শৈলেন্দ্রমোহন আর সোমেন্দ্রমোহন। এঁদের মধ্যে কার্তিকবাবু ক্রিকেটার হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন, তাঁর আরও দুটি শখ বাজপাখি পুষে তাদেরকে শিক্ষা দিয়ে শিকার করানো এবং ঘুড়ি ওড়ানো। এই চারজন ‘ফোর ক্রিকেটিং ব্রাদার্স’ নামে পরিচিত। রায় পরিবারের ক্রিকেট-চর্চা স্বতন্ত্র একটি লেখার বিষয় হতেই পারে।
হেমেন্দ্রমোহনের চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে মালতী দেবী আর ললিতা দেবী গায়িকা হিসেবে সেকালে বেশ পরিচিত ছিলেন। এঁরা দুজনেই গান শিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। সব মিলিয়ে এই পরিবারের প্রত্যেকেই যে বিচিত্র সব দিকে আগ্রহী ছিলেন এবং নানা ক্ষেত্রেই পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন তা স্পষ্ট। গুণী বাবার বহুমুখী কর্মকাণ্ডের পরিচয় জানা থাকলে এঁদের এই যে এত ধরনের কাজে আগ্রহ কেন তৈরি হল, তা বোঝা আর কঠিন থাকে না।
(চলবে)
..............
#Jagadish Chandra Bose #JC Bose #science #series