টমেটো ফল নাকি সব্জি : আমেরিকার কোর্টে তাই নিয়েই হয়েছিল মামলা
স্কুলপড়ুয়াদের ধাঁধায় ফেলতে এ প্রশ্নের জুড়ি নেই। কিন্তু তা বলে এর ঝোল কোর্ট অবধি গড়াবে?
আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। টমেটো ফল না সব্জি, এই নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে রীতিমতো ধুন্ধুমার মামলা হয়েছিল। মামলাকারীর নাম জন নিক্স (John Nix)।
টমেটো যে বৈজ্ঞানিকভাবে ফল, সে বিষয়ে তর্কের কোনও অবকাশ নেই। ফলের সব বৈশিষ্ট্যই এতে রয়েছে। টমেটো ফুল থেকে হয়, আর এর ভিতরে বীজও রয়েছে। তবে প্রায় দুই দশক আগে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু উল্টো পক্ষে রায় দিয়েছিল।
১৮৮৭ সালের কথা। মার্কিন লোয়ার কোর্টে দায়ের হল মামলা। ভাবছেন, কার খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে এমন উদ্ভট বিষয় নিয়ে মামলা করতে গেল? আসল কারণটা কিন্তু খাঁটি অর্থনৈতিক। জন নিক্সের ফলের ব্যবসা ছিল। নিউইয়র্কে ফলের ব্যবসার সিংহভাগ সে সময় এই কোম্পানির দখলে ছিল। নিক্স বিভিন্ন দেশ থেকে ফল আমদানি করতেন। ১৮৮৩ সালে পাশ হওয়া একটি আইনকে ঘিরে তৈরি হল জটিলতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি চেষ্টার আলেন আরথার (Chester A. Arthur) এই আইনটি পাশ করেন। Tariff Act of 1883 বা Mongrel Tariff Act নামে পরিচিত এই নতুন আইনে আমদানিকৃত সব্জির ওপর চড়া হারে কর বসানো হয়েছিল। ফলমূল ছিল এই করের আওতার বাইরে। এডওয়ার্ড হেডেন (Edward L. Hedden) ছিলেন সে সময় নিউ ইয়র্ক বন্দরের কালেক্টর। জন নিক্সের কোম্পানির তরফ থেকে হেডেনের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হল। নিক্সের দাবি ছিল, টমেটোর জন্য নেওয়া কর ফেরত দিতে হবে। কারণ গঠনগতভাবে টমেটো সব্জি নয়, ফল। বছর ছয়েক পর সেই মামলা গেল সুপ্রিম কোর্টে। জাস্টিস হোরেস গ্রে (Horace Gray) সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে মান্যতা দিয়ে টমেটোকে শেষমেশ সব্জির দিকেই ঠেলে দিলেন। রায়ে তিনি লিখলেন, "টমেটো জন্মসূত্রে শসা, স্কোয়াশ, কড়াইশুঁটি, বিন ইত্যাদির মতো ফল। কিন্তু আবহমান সময় ধরে মানুষ সাধারণভাবে একে সব্জি হিসেবেই জেনে আসছে এবং ব্যবহার করে আসছে।" জন নিক্স করের টাকা ফেরত না পেয়ে মুষড়ে পড়লেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন হেডেন।
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল এই যে, আমাদের প্রিয় টমেটো বিজ্ঞানের চোখে ফল, কিন্তু আইনের চোখে সব্জি। এমন নিদর্শন এই পৃথিবীতে আর একটাও আছে কি?
..................
ঋণ : www.washingtonpost.com