স্বপ্নে 'কারিকুরি'-ই কি বিজ্ঞাপনের ভবিষ্যৎ?
ধরা যাক, আধো-ঘুমে হঠাৎ আপনি টের পেলেন নরম পানীয়ের ঝাঁঝ। কেউ যেন গ্লাসে ঢালছে আপনার আপনার প্রিয় পানীয়টি। সেই শব্দ কানে আসছে আপনার। আর এর উৎস আপনার পাশে রাখা স্মার্টফোনটাই। কেমন লাগবে? আপনি টেরও পেলেন না, আপনার অবচেতনকে উস্কে দিল ওই আশ্চর্য স্বয়ম্ভু বিজ্ঞাপন। হ্যাঁ, আপনার অবচেতন মনও বিজ্ঞাপনের দখলে চলে যেতে পারে। কারণ সেই দিন হয়তো খুব দূরে নয় যেদিন আপনার স্বপ্নেও সাম্রাজ্য বিস্তার করবে বিজ্ঞাপনী চটক। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, বিজ্ঞাপন আগামীতে হানা দিতে পারে আমাদের স্বপ্নেও।
একথা আজ আর কারও অজানা নয় যে, সোশাল নেটওয়ার্কিং টুল বা সাইটগুলো বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারার মূল্য আমাদের চোকাতে হচ্ছে আমাদের সমস্ত ব্যক্তিগত বিষয় আর গোপনীয়তার চাবিকাঠি তাদের হাতে তুলে দিয়ে। ব্যবহারকারীরাই এইসব সাইটের কাছে আসল পণ্য। আমাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ফেসবুকের মতো সাইটের আলগোরিদম কাজ করছে, আর আমাদের সামনে বিজ্ঞাপিত করছে আমাদের পছন্দসই জিনিসের পসরা। সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপনের ধরনধারণ আজ অনেক পাল্টে গেছে। আমাদের বাস্তবের প্রতিটা ইঞ্চি আজ কোনও না কোনওভাবে বিজ্ঞাপন-লাঞ্ছিত। বিজ্ঞাপন এবার সচেতন মন ছেড়ে নিশানা করতে পারে অবচেতন মনকে।
অনুমান না বলে আশঙ্কা বললেই যথাযথ হয়। স্বপ্নে যতই কারিকুরি বা এঞ্জিনিয়ারিং ঘটানো যাবে, মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা ততই অনেক সহজ হবে। অনেক সহজ হবে তাকে নিয়ে বাণিজ্য করা। Dream Altering কারিগরিবিদ্যা নিয়ে কাজ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এই ক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতিও ঘটছে। শ্রুতিগ্রাহ্য স্নায়ু-উত্তেজক (auditory stimuli) ব্যবহার করে স্বপ্নে কাঁচি চালানো বা রিফু করা যাবে, এই বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে গবেষকদের। ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক অ্যাডাম হার হরোভিটজ (Adam Haar Horowitz) ২০২০ সালে ডরমিও (Dormio) নামে একটি অভিনব যন্ত্র তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে জাগরণ থেকে ঘুমে যাবার সময় বিশেষ কিছু শ্রুতিগ্রাহ্য স্নায়ু-উত্তেজক ব্যবহার করে স্বপ্নদৃশ্যে পরিকল্পনামাফিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। হরোভিটজ এই নিয়ে গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন। এরই পাশাপাশি জন্মাচ্ছে আশঙ্কাও। কারণ বিজ্ঞাপনের কাজে এই কারিগরির সম্ভাবনা অনন্ত। যদিও এই গবেষণা প্রাথমিক স্তরেই রয়েছে, তবু হরোভিটজ নিজেই এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই নিয়ে অবিলম্বে স্পষ্ট আইনকানুন প্রণয়ন করা দরকার বলে মনে করছেন তিনি। নাহলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বা গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হবে। আসলে বিজ্ঞাপনের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে একটা স্মার্টফোনই তার জন্য যথেষ্ট। আমরা ঘুমানোর সময় স্মার্টফোন বা স্মার্ট ডিভাইস বিছানার পাশেই থাকে। এগুলিকে সহজেই সূক্ষ্মভাবে স্বপ্নের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন এবার স্বপ্নে থাবা বসাতে আসতে পারে কিনা সেটাই দেখার। পোস্ট ট্রুথের দুনিয়ায় অবাক হতে ভুলে যাওয়াই বোধহয় ভালো।
..................
ঋণ : bigthinks.com
#Dream Altering #auditory stimuli #Adam Haar Horowitz #Dormio #silly পয়েন্ট