কোনান ডয়েলের বলে আউট হয়েছিলেন 'ক্রিকেটের জনক' গ্রেস
দিনটা ছিল ২৯শে মার্চ, ১৯০৩। ক্রিস্টাল প্যালেসে চলছে ক্রিকেট ম্যাচ, ক্রিজে ব্যাট হাতে প্রবাদপ্রতিম উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস, যাকে তামাম দুনিয়া আজ চেনে ‘ক্রিকেটের জনক’ নামে। বোলারের হাত থেকে বেরোল অতি বাজে একটি বল, ক্রিকেটের পরিভাষায় যাকে বলে ‘লং হপ’। প্রবল বিক্রমে ব্যাট চালালেন গ্রেস। কিন্তু কপাল খারাপ, ঠিক ঠাক ব্যাটে বলে লাগল না। আকাশে লাফিয়ে উঠে বল চলে গেল উইকেট কিপারের হাতে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বোলারটির একমাত্র শিকার হয়ে থাকলেন গ্রেস। বোলারের নাম? স্যর আর্থার ইগনেশিয়াস কোনান ডয়েল।
আজ্ঞে হ্যাঁ, শার্লক হোমস প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের স্রষ্টা আর্থার কোনান ডয়েলের বলে আউট হয়েছিলেন গ্রেস।
ডয়েল ছিলেন খেলাধুলোয় রীতিমতো উৎসাহী। ফুটবল গলফ শুটিং স্কি প্রভৃতি নিয়মিত চর্চা করবার পাশাপাশি খেলতেন ক্রিকেটও। তখনকার দিনের দাপুটে দল মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ সালের মধ্যে দশটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন ডয়েল, ১৮৯৯ সালে লর্ডসের ময়দানে একটি ম্যাচে কেমব্রিজশায়ারের বিপক্ষে ৬১ রানে সাত উইকেট নেন। খেলেছিলেন শখের দল অথর্স ইলেভেনের হয়েও, পিটার প্যানের স্রষ্টা জে এম ব্যারি, জিভসের গপ্পোগুলির লেখক পি জি ওডহাউস, উইনি দ্য পু-র জনক আর্থার আলেকজান্ডার মিলনের সঙ্গে। গ্রেসের উইকেট নেওয়ার স্মৃতি বিশদে লেখা রয়েছে ১৯২৭ সালে স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ডয়েলের ‘W. G. Grace: A Memory’ নিবন্ধে।
গ্রেসকে আউট করে ডয়েল এতই আনন্দ পেয়েছিলেন যে তা নিয়ে লিখে ফেলেছিলেন ‘A Reminiscence of Cricket’ নামে আস্ত একখানা কবিতাও :-
Once in my heyday of cricket,
One day I shall ever recall!
I captured that glorious wicket,
The greatest, the grandest of all.
ক্যাচ উঠবার মুহূর্তটি নিয়ে তিনি লিখছেন :-
Up, up like a towering game bird,
Up, up to a speck in the blue,
And then coming down like the same bird,
Dead straight on the line that it flew.
শোনা যায়, এই বিশেষ ম্যাচের আম্পায়ার ছিলেন টমাস মাইক্রফট বলে এক ব্যক্তি, যার থেকে শার্লকের দাদা মাইক্রফট হোমসের নামের উৎপত্তি। শার্লকের নিজের নামের উৎসেও নাকি রয়েছেন শারউইন আর শ্যাকলক নামে নটিংহ্যামশায়ারের দুই ক্রিকেটার। এই শ্যাকলক যখন পরে ডার্বিশায়ারের হয়ে খেলতে শুরু করেন, তখন তাঁর সতীর্থ ছিলেন উইলিয়াম মাইক্রফট নামের এক ফাস্ট বোলার। অনেকে বলেন, আম্পায়ার নয়, এই ফাস্ট বোলারের নাম থেকেই এসেছে বেকার স্ট্রিটের বাসিন্দার দাদার নামটি। আরও একখানা মজার ঘটনা শোনা যায় ডয়েলের ক্রিকেট জীবন সম্বন্ধে। ১৯০০ সালে একটি ম্যাচে ফিল্ডিং করবার সময়ে নাকি বল এসে লাগে তাঁর পকেটে রাখা দেশলাইয়ের বাক্সতে, আর তাতে ঘষা লেগে ডয়েলের গায়ে তৎক্ষণাৎ আগুন ধরে যায়।
আরও পড়ুন : সম্রাট ও শান্তিগোপাল / রোহন রায়
ফেলুদা এককালে নিয়মিত ক্রিকেট খেললেও তার গুরু শার্লক হোমসের ক্রিকেট খেলবার কথা সেভাবে কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু হোমসের স্রষ্টার নিজের ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা যে বেশ বর্ণময়, এ কথা কিন্তু বলাই যায়, তাই না?
........................
[কভার ছবিতে বাঁ দিক থেকে গ্রেস ও ডয়েল। দ্বিতীয় ছবিতে ক্রিকেটের সাজপোশাকে ডয়েল]