নিবন্ধ

উঠো গো ভারতলক্ষ্মী

পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় Aug 23, 2024 at 7:00 am নিবন্ধ

“It was the best of times, it was the worst of times…”

আমরা সকলে খুব রেগে উঠেছি। এমনটা তো সচরাচর ঘটে না! আমাদের রেগে যাওয়ার সময় যদি হয় একটা ফেসবুক রিলের নব্বই সেকেন্ড, তবে সেই রাগের শেল্ফ লাইফ, অর্থাৎ সেই রাগ জিইয়ে থাকার সময়সীমা বড়জোর একটি গরমাগরম ভাষণের ভিডিও থেকে আরেকটি দমফাটা হাসির মিম ঢঙের রিলে ডিঙিয়ে যাওয়ার যে গ্যাপ, যা কিনা কয়েক সেকেন্ডের বেশি হয়ে ওঠা মুশকিল। সেই আমরা নাকি মাঝরাতে নিজেদের মধ্যবিত্ত আরামটুকু টোকা মেরে ফেলে দুমদাম রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে যাচ্ছি, আর সেই ইস্তক আমরা প্রায়ই চলে যাচ্ছি মিছিলে, জমায়েতে। যারা যাচ্ছি না তারাও রেগে রেগেই অফিস কাছারি যাচ্ছি, রাস্তা থেকে তুমুল রেগে ইডলি ধোসাও কিনে খাচ্ছি। অথচ রাগ কমছে না। আমরা রাজনৈতিক অরাজনৈতিক ফারাক করলে খচে যাচ্ছি, রংমিলান্তি পার্টিকে গালাগাল করলে চটে উঠছি, সাজগোজের ছবি দেখলে খেঁকিয়ে উঠছি, লুচি মাংসের সেলিব্রেশন পোস্ট দেখলে তেলে বেগুনে হয়ে উঠছি। আমরা যেন সেই চিরাচরিত আমরায় ফিরতে পারছি না। এহেন বেয়াদবিতে আমাদের নিত্যনতুন বিনোদন দিয়ে ট্রেন্ডিং রাখতে অভ্যস্ত সিস্টেম মাথা চুলকে ভুরু কুঁচকে কিঞ্চিত ঘাবড়ে যাচ্ছে। আমাদের আসলে হল কী? আমরা কি জানি, আসলে আমাদের কী হয়েছে?


আর জি করের চিকিৎসক তরুণীর মৃত্যু একটিমাত্র ঘটনায়, বলা ভালো মর্মান্তিক ঘটনায় যেহেতু আটকে থাকেনি, যেহেতু এই মৃত্যুর পরে পরে প্রশাসনের অপদার্থতা, ঔদ্ধত্য, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং পেশিশক্তির আস্ফালনে এতরকম ঘটনা ঘটে গেছে, এবং এখনও ঘটে চলেছে, নাগরিক রাগের একটিমাত্র কারণ থাকা এখন আর সম্ভব নয়। আমাদের আসলে মনে পড়ে যাচ্ছে আমাদের মধ্যবিত্ত বাড়ির কন্যাসন্তানটি আর কয়েক বছর বাদেই লায়েক হয়ে উঠবে, হয়তো সে ডাক্তার হতে চাইবে, হয়তো ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইবে, হয়তো পাইলট হতে চাইবে, হয়তো মডেল হতে চাইবে, হয়তো রিপোর্টার হতে চাইবে, হয়তো একজন পুলিশ অফিসার হতে চাইবে। এই ভয়ানক পেট্রিয়ার্ক সিস্টেম, যা কিনা ক্ষমতার পায়ের কাছে বসে খুল্লমখুল্লা রাজনীতির মধ্যে দুর্নীতির মিশেল ঘোঁটে, সেই সিস্টেমে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভেবে, আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবে আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি, এবং রেগে যাচ্ছি। রেগে থাকছি, সত্যি, তারপর?


রেগে থাকা, দীর্ঘদিন ধরে রেগে থাকা, তাও আবার সিস্টেমের ওপর রেগে থাকা, আমাদের ধাতে নেই। আমরা কখনও পারিনি। বানতলা, সিঙ্গুর, পার্ক স্ট্রিট, মধ্যমগ্রাম থেকে উন্নাও, হাথরাস– ধর্ষণ নিয়ে প্রশাসকের রেপ রেটরিক টিপ্পনী শুনে, শৈথিল্য দেখে, নষ্টামি বুঝেও আমরা হজম করে ফেলেছি। রেগে থাকার ধাত নেই বলেই যুগ যুগ ধরে আমাদের হেরে যাওয়াগুলো হজম করে আমরা কেউ বৃষ্টিধোয়া বিকেলের ঝাপসা ছবিতে রিলিফ খুঁজি, কেউ মাইগ্রেন নিয়ে বিছানা নিই, কেউ গালমন্দ করি বাকিদের রেগে যাওয়ার অবিমৃষ্যকারিতাকে, কেউ রেগে বলি এত বাড়াবাড়ির কী আছে? কেউ রেগেমেগে সুখী গৃহকোণের মান কিংবা ভুরু আঁকার রিলের শান বাঁচাতে সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লক করে দিই আরও কিছু রেগে থাকা মুখকে। আর তারপরেও রাগ না কমলে? আমাদের সরকারের আনুকূল্য নেওয়া মা লক্ষ্মীরা আছেন তো!


লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শহুরে সমাজে সর্বাধিক চর্চিত কি-ওয়ার্ডের মধ্যে একটি অবশ্যই থাকবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পটিকে নির্বাচনের গেম চেঞ্জার হিসেবে তুলে ধরেছেন, এবং আমাদের শহুরে সমাজের একটি বৃহৎ অংশ এই প্রকল্পকে সরাসরি ভিক্ষা বলে দেগে দিয়েছেন। বাস্তবিক, এই ক্রোধকালে প্রশাসন যখন ক্ষোভের অভিমুখে দাঁড়িয়ে নিত্যনতুন অভিঘাত তৈরি করছে, সেখানে প্রশাসনের এই প্রকল্পের শরিক মা লক্ষ্মীরা, যাঁরা অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নীচে দিন আনি দিন খাই শ্রমিক নারী, তাঁদের নিশানায় এনে মনের ঝাল মিটিয়ে ফেলা রাগ কমানোর সহজ উপায়ের মধ্যে একটি তো বটেই। এইখানে এসে আমরা যদি খানিক শান্ত হয়ে বসে বলতে পারি, ‘রাগ, তুমি কি পথ হারাইয়াছ’, তবে কেমন হয়?


একটা আপাদমস্তক পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দায় থাকে মেয়েদের সিস্টেমের মধ্যে এনে ফেলার। এই এনে ফেলার মধ্যে একটা জরুরি পদক্ষেপ হল আমাদের লর্ড কার্জনের সেই অমর কীর্তির থিম, ডিভাইড অ্যান্ড রুল। পিতৃতন্ত্র যেহেতু জন্মের আগে থেকেই মেয়েদের উৎপাদন ব্যবস্থার খাঁচায় পুরে তোতাপাখি সাজানোর সমস্ত পরিকল্পনা করেই রাখে, নারী কৌম যথাসম্ভব একা হয়ে না পড়লে পরিকল্পিত খাঁচা অপরিসর হয়ে পড়ে। গাড়ি, বাড়ি, সুখী গৃহকোণ, সুস্থ পুত্রসন্তান, টল-ডার্ক-হ্যান্ডসাম না হলেও দাপুটে মাচো বর গোছের সোনার শেকল যথেষ্ট হয় না। প্রমাণ? আমাদের এই বহুচর্চিত মা লক্ষ্মীরাই তো আছেন! ধান ঝাড়া থেকে পটল খেতে পরাগমিলন, বাল্ব কারখানা থেকে চালের কল, খনি থেকে ইটভাঁটা, ঠোঙা বানানো থেকে বিড়ি বাঁধা, শাক সবজি বা ফল বিক্রি, অথবা সাফাই, ঝাড়াই, গৃহশ্রম, শহুরে ভাষায় কাজের মাসি– অসংগঠিত কায়িক শ্রমিকদের মধ্যে কী বিপুল পরিমাণ নারী গ্রাম মফস্‌সল থেকে শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাত থাকতে তাঁরা ম্যাটাডোর, ছোটা হাতি করে গ্রাম থেকে শহরে আসেন দল বেঁধে, রাতের দখল নিয়েছেন তাঁরা উৎপাদনের প্রয়োজনে। 


তাঁদের ওপর তিলোত্তমার অভিঘাত পড়েছে? তাঁদের ঘরের মেয়েদের তিলোত্তমার মতো বড় মেডিক‍্যাল কলেজের ঝকঝকে ডাক্তার করার, স্বাবলম্বী করার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে বুক বাঁধবেন কয়জনা? প্রশ্নটা তো সহজ, উত্তরও তো জানা। তাহলে ইয়োর অনার, মেয়েদের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতম অপরাধগুলো আটকাতে যদি শহরের লেখাপড়া জানা দিগগজরাই কেবল উঠেপড়ে লাগেন, বৃহত্তম গণতন্ত্রের মেয়ে ভোটারদের বৃহদংশ যদি সেই আন্দোলনে যোগ দেবার কারণ খুঁজে না পান, আমরা শহুরে দিগগজরা কি লক্ষ্মী মানেই সরকারি ভিক্ষে বলে দাগিয়ে দিয়ে এই প্রেশার কুকার পরিস্থিতির একটি নিরাপদ সেফটি ভালভ খুঁজে পাচ্ছি? আমাদের তোতাপাখিদের খাঁচাগুলোতে স্থান অকুলান না হলে কাদের যেন সুবিধে হয়ে যাচ্ছে? 


আচ্ছা, একটু অর্থনীতি আর সংখ্যাতত্ত্ব ঘুরে আসা যাক এইবেলা। গোনাগুনি করলে নাকি রাগ-টাগ একটু বশে আসে। তো নগদ টাকা দিয়ে গরিবের ক্ষমতায়ন নিয়ে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চমৎকার কাজ করে যাচ্ছেন নোবেল লরিয়েট দম্পতি এশার ডুফলো এবং অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভর্তুকি নিয়ে এঁদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বস্তুভিত্তিক ভর্তুকি সবসময় যে কাজে আসবেই তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ধরুন আপনি বললেন, মাস গেলে মহিলাদের হাজার-পাঁচশো না দিয়ে রান্নার গ্যাসের দাম বরং অর্ধেক করে দাও। উত্তম প্রস্তাব। এদিকে পটলখেত থেকে মাইলটাক হেঁটে ফিরে যে নারী উঠোনে চুলো জ্বালিয়ে রান্নায় বসবেন, তাঁর গ্যাস নেই, বা হয়তো এলাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছোনোর মতো রাস্তাটাই নেই। যদি বা রাস্তা থাকে, একটা সিলিন্ডারের বাকি অর্ধেক দাম দেওয়ার রেস্তো তাঁর নেই। তাহলে তাঁর ক্ষমতায়নটা আক্ষরিক অর্থেই চুলোয় চলে গেল। সেই জায়গায় মাসে হাজার করে দুই বছরে চব্বিশ হাজার টাকা জমিয়ে তিনি নিজের দোরেই একটা মনিহারি দোকান দিলেন, তাঁর মাধ্যমে এলাকায় লোকাল ডিস্ট্রিবিউটররাও কিঞ্চিত রোজগার করলেন, অর্থাৎ কিনা একটা স্বাবলম্বী ইকো সিস্টেম তৈরি হয়ে গেল। এইভাবে কঙ্গোর প্রত্যন্ত গ্রামে লোকজন টাকা পেয়ে ঘরে টেলিভিশন কিনেছেন, তাতে রাতের দিকে অপরাধমূলক ঘটনা কমেছে। অর্থাৎ সরাসরি ক্যাশ ফ্লো থাকলে গরিব মানুষ নিজের দরকারটা ভালো করে মিটিয়ে নিতে পারেন। আর ভর্তুকি দিলে? এ অনেকটা জন্মদিনের পার্টির থেকে যাওয়া বাসি পোলাও পরের দিন কাজের মাসিকে উচ্ছ্যুগ্যু করে নিশ্চিন্ত হওয়া। বেচারির সেদিন নীলষষ্ঠীর উপোস থাকলেও উচ্চবিত্ত গৃহস্থের তাতে কিছু এসে যাবে না। 


এই পর্যন্ত এসে ক্যাশ ফ্লো এবং রেশন বণ্টনের দুর্নীতি নিয়ে গুণীজন সাবধান করে দিয়েছেন। যত বেশি স্তর থাকবে বণ্টনের রাস্তায়, তত বেশি দুর্নীতি অবশ্যম্ভাবী। সরাসরি নগদ টাকা দিলে দুর্নীতির সম্ভাবনা সমূলে উৎপাটিত হয়? উঁহুঁ। হয় না। শহরে গঞ্জে গ্রামে প্রচুর অবস্থাপন্ন নারী এই প্রকল্পের সুবিধে নিয়ে থাকেন। সেটাকে অনেকে দুর্নীতি বলে চালাতে পারেন, কিন্তু তাহলে নারীর গৃহশ্রমের মূল্য আর কীভাবে রাষ্ট্র দিতে পারে, তাই নিয়ে আমরা ভাবতে ভুলে যাব। মনে রাখতে হবে, অবস্থাপন্ন নর্ডিক দেশ ফিনল্যান্ডে বেকার ভাতা দেওয়া হয় মাসে পাঁচশো ষাট ইউরো, ভারতীয় মূল্যে বাহান্ন হাজার টাকা। আমাদের প্রচুর মহৎ অভ্যেসের মধ্যে একটি হল গৃহশ্রমকে মুফত ধরে নিয়ে বিপুল জনসংখ্যার গৃহবধূদের বিনা মজুরির শ্রমিক ধরে নেওয়া, তাই বলে অর্থনীতি সেইসব বদভ্যাস ধরতে পারে না। কাজেই যে নারী যতই অবস্থাপন্ন হন, রাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতায়নের জন্য ভাতা দিলে তাঁর সেই ভাতায় অধিকার জন্মায়। মনে রাখতে হবে ঝাঁ চকচকে বাড়িতে থেকেও অনেক মেয়ের পাতে আজও ভদ্রস্থ মাছের টুকরো অনুপস্থিত থাকে, ডাল ভাত খেয়ে তাঁদের উঠে যেতে হয়। পরম্পরা, প্রতিষ্ঠা এবং অনুশাসন নারীকে দিয়েছে লবডঙ্কা, কাজেই কার বরের কার ছেলের কত স্যালারি, কে তিনতলা বাড়িতে থেকে ভাতা নেন সেই হিসেবের প্রাথমিক অনুমান যদি হয় পরিবারের বিত্তে পরিবারের প্রতিটি নারীর সমান অধিকার আছে, তবে সাধু সাবধান! আপনার অনুমানটি প্রমাণাভাবে ধপ করে ফেল করবে। 


তাহলে দুর্নীতির গল্পটা কি নেই হয়ে গেল? গেল না তো! ওই যে, পরিবারের বিত্তে পরিবারের সকল সদস্যার সমান অধিকার আসলে একটি ইউটোপিয়া! তাহলে মাস গেলে হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে এলে সত্যিই কি তা সব নারীর ক্ষমতায়নেই কাজে দিচ্ছে? বউ পেটানো বরেরা অনেকক্ষণ সাইডলাইনে বসে বোর হচ্ছিলেন। এবার তাঁরা এন্ট্রি নেবেন। হাত-টাত মুচড়ে বউয়ের থেকে নগদ টাকা নিয়ে পেটভরে মদ, প্রাণভরে সাট্টা চলে না? অবশ্যই চলে। কারণ নারীর ক্ষমতায়নে অর্থ সাহায্য একটি জরুরি ধাপ, কিন্তু যথেষ্ট নয়। নারীর সুরক্ষার ব্যাপারটা সোনার পাথরবাটি হয়ে রয়েছে বলেই তো আজ আমরা এতখানি রেগে উঠেছি, তাই না?  

এই সূত্রে সামান্য কিছু সংখ্যার খোঁজ নেওয়া যাক।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বলছে, ২০১৮ সালে ভারতে প্রতি পনেরো মিনিটে একজন নারী ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। ২০২২ সালে লাখে ছেষট্টি জন মহিলা অপরাধের শিকার হয়েছেন। ঘণ্টায় একান্নটা করে এফআইআর দায়ের হয়েছে মহিলাদের ওপর হিংসার ঘটনায়, অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটা দ্রুত ছুটেছে, মিনিটে একজন নারী হিংসার শিকার হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এফআইআরের চক্কর কতখানি লম্বা আমরা জানি, সেইসব জানা বোঝা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালে দেখতে পাব লাখে বাহাত্তর জন মহিলা এখানে হিংসার শিকার, এফআইআরের হিসেবে। ২০২১ থেকেই এই পরিসংখ্যান ক্রমবর্ধমান। সালটা লক্ষণীয়, কারণ এই বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হয়, এবং তার কিছুদিন আগেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ঘোষিত হয়। মেয়েদের টাকা কি তাদের কাছে সত্যিই নিরাপদ? এত সংখ্যক এফআইআরের মধ্যে তিরিশ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে অভিযুক্ত সাজা পান। আর জি করের চিকিৎসক তরুণীর নৃশংস ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের থেকে ভিন্ন চরিত্রের হলেও নারীকে এত সহজে প্রতিহিংসার শিকার করে তোলার জন্য কেন রেগে যাচ্ছি না আমরা গ্রাম থেকে শহর? জনমুখী ভাতা প্রকল্পের কৃতজ্ঞতার ভারে মেয়েদের নিরাপত্তার অধিকারটুকু মায়া হয়ে যাচ্ছে কী? 


একবার চোখ ফেরাব আমাদের নগরলক্ষ্মীদের দিকেও। অবস্থাপন্ন, চাকুরিরত বা গৃহবধূ, রবীন্দ্র নজরুল চর্চায় থাকা আলোকপ্রাপ্তা নারীরা এতদিন যূথবদ্ধ ছিলেন? রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে, সহকর্মীদের মধ্যে, প্রতিবেশিনীদের মধ্যে, এমনকি স্কুল কলেজের বন্ধুদের মধ্যে এক হয়ে ছিলাম নাকি আমরা? হায়ারার্কির শেখানো বিভেদ আপন করে কেউ প্রিয়, কেউ বেশি প্রিয়, কাউকে দেখলে জোর করে হাসি, কাউকে নিয়ে জোর পিএনপিসি, কাউকে বাড়ি ডেকে এনে তুমুল খাতির, কাউকে হেলাছেদ্দার অতিথি করে রাখি আমরা কম বেশি সবাই। মেয়েরা মেয়েদের শত্রু, মেয়েরা মেয়েদের ওপর জেলাস, ইত্যাদি বুলি আমাদের একলা একলা খাঁচায় পুরে মাথায় গুঁজে দিয়েছে যে পিতৃতান্ত্রিক সিস্টেম; আজ সিলেবাসের বাইরে থেকে মাত্র কটাদিনের একটানা রাগি চিৎকার শুনেই সেই সিস্টেম বিভ্রান্ত, শঙ্কিত। এখন সিস্টেমের ভরসা রাগ বার করার সেফটি ভালভগুলো, যা কিনা ফের আলাদা করে দেবে মেয়েদের, একশো থেকে পঞ্চাশ, পঞ্চাশ থেকে দশ, দশ থেকে এক হতে খুব বেশি সময় লাগে না তো! আর যদি কোনও এক মিরাকল হয়ে যায়? যদি রাগগুলো ঠান্ডা মাথায় পুষে রেখে মেয়েরা হাত মিলিয়ে ফ‍্যালে হায়ারার্কি, গ্রাম, শহর, লক্ষ্মী, সরস্বতী বিভেদ ডিঙিয়ে? কেমন হবে যদি আসমুদ্র হিমাচলের মেয়েরা গর্জে ওঠে আসমুদ্র হিমাচলের মেয়েদের জন্য? 


 রাগ যখন জমেইছে, স্পর্ধা করতে দোষ কী?

আরও পড়ুন :   যে রাষ্ট্র মেয়েদের দায়িত্ব নেয় না, আমরাও কি তার ধারক নই?/ বিবস্বান

                    যে আর জি কর-কে চিনতাম, আর যাকে চিনি না/ ব্রতেশ

                    আমাদের মিছিল/ জুঁই নিয়োগী

                    অ্যাবিউজের যে দীর্ঘ দিনলিপি আমরা জানি/ যশোধরা রায়চৌধুরী

                    আমাদের পরিবারেই বেড়ে ওঠে ধর্ষক/ সায়নদীপ গুপ্ত

                    চিন্তা নেই, পিএইচডি হয়ে যাবে!/ বিপ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য্য

                    পুরুষ থেকে ধর্ষকের মাঝে যেটুকু ফারাক/ শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী

                     মিছিলে পা মেলান, তবে মনে রাখুন…/মুনিয়া দেবলীনা

                     অন্ধকার পথে একলা হাঁটার স্বাধীনতা চেয়ে…/অঙ্কিতা ভট্টাচার্য

                      নট অল মেন, কিন্তু.../ রণিতা চট্টোপাধ্যায়

                       আমরা শিখেছিলাম, চড় মারাই মেয়েমানুষের ওষুধ/ বিবস্বান

অলংকরণ : ঐন্দ্রিলা চন্দ্র

 



#we want justice #R G Kar #স্পর্ধা

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

88

Unique Visitors

214690