ভিড়ের মাঝে অন্যরকম : বাংলায় হাতে-লেখা শারদ পত্রিকারা
ঝাঁ-চকচকে শারদীয়া সংখ্যার ভিড়ে এ এক অন্যরকম গল্প। অফসেট প্রিন্টিং পেরিয়ে প্রিন্ট অন ডিমান্ড ছাপার যুগে প্রবেশ করেছি আমরা। তবু এই বাংলা ভাষাতেই এখনও বেরোচ্ছে সম্পূর্ণ হাতে-লেখা শারদীয়া পত্রিকা। একটি নয়, এমন একাধিক পত্রিকা আছে এই বাংলায়।
এই তালিকায় প্রথম নামটির ঐতিহ্য বহুকালের। ১৯৪৭ সাল থেকে পথ চলা শুরু করা 'প্রভাত সাহিত্য পত্রিকা'এবার ৭৬ বছরে পা দেবে। এই পত্রিকা পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানা এলাকার আনগুনা গ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়। একসময় কাজী নজরুল ইসলাম, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, সত্যজিৎ রায়ের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকদের লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়েছে এই পত্রিকা। তবে শারদ পত্রিকা হলেও 'প্রভাত' প্রতি বছর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন প্রকাশ পায়। আট ইঞ্চি বাই বারো ইঞ্চি মাপের প্রভাত সাহিত্য পত্রিকার পৃষ্ঠাসংখ্যা হয় দুশোরও বেশি। তবে প্রতি বছর এই পত্রিকার কপি হয় একটিই। আর তা রাখা থাকে এলাকার লাইব্রেরিতে। মানুষজন সেখানেই পড়ার সুযোগ পান।
এই পূর্ব বর্ধমান থেকেই সম্প্রতি আরও একটি হাতে-লেখা শারদ পত্রিকা পাঠকমহলে সাড়া জাগিয়েছে। সম্ভবত প্রভাত পত্রিকার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই গত তিন বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে 'সংশক্তি' নামে একটি পত্রিকা, যার পুরোটাই হাতে লেখা ও আঁকা। 'সংশক্তি' প্রকাশিত হয় পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী এলাকার সমুদ্রগড় থেকে। পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এলাকার বিশিষ্ট মানুষজন, ছাত্রছাত্রী ও গৃহবধূরা। করোনা-অতিমারির সময় থেকে ছাপা পত্রিকার রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হন উদ্যোক্তারা। পত্রিকা যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য অভিনব এই উপায় বের করেছেন তাঁরা। প্রতি বছর পত্রিকার ৩০ থেকে ৫০ কপি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের লেখার পাশাপাশি থাকে এলাকার তরুণ সাহিত্যযশোপ্রার্থীদের লেখা। অলংকরণ ও প্রচ্ছদের দায়িত্বে থাকেন এলাকারই শখের শিল্পীরা। একেবারে নিজেদের হাতে 'ম্যানুয়ালি' সাজানো ব্যাপারটাই উদ্যোক্তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, কারণ এটাই শারদ সংখ্যার ভিড়ে তাদের আলাদা করে দিচ্ছে। এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে রয়েছেন উজ্জ্বল মণ্ডল।
এই দুই পরিচিত নামের বাইরে আরও একটি পত্রিকার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা তন্দ্রা শাসমলের চেষ্টায় প্রকাশ পেয়েছে হাতে-লিখে জেরক্স করা শারদ পত্রিকা 'শ্রদ্ধানুরাগ'। তবে এ-বছরও এই পত্রিকা বেরোবে কিনা, সে খবর পাওয়া যায়নি।
...........................
তথ্যঋণ : এই সময়, দ্য ওয়াল।